ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

‘অনেক দেনা হইছে, ইলিশ ধইরা শোধ করুম’

জেলা প্রতিনিধি | ঝালকাঠি | প্রকাশিত: ০৯:৫০ এএম, ২৮ অক্টোবর ২০২২

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) দিনগত মধ্যরাত থেকে ঝালকাঠির নদীগুলোতে ইলিশ শিকারে নামবেন জেলেরা। তবে সরকারি আদেশ মেনে টানা ২২ দিন মাছ ধরা থেকে বিরত থেকেও কোনো প্রণোদনা না পাওয়ার অভিযোগ তাদের। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে সুগন্ধা ও বিষখালী পাড়ের জেলেপল্লিতে। নিষেধাজ্ঞায় আর্থিক লোকসানের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের।

ইলিশসহ অন্যান্য মাছের উৎপাদন বাড়াতে এবং মৎস্য সম্পদ রক্ষায় গত ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনব্যাপী অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। বন্ধ রাখা হয় পরিবহন, কেনাবেচা, মজুত ও বিনিময়। এসময়ে নৌকা ও জাল মেরামতসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিলেন জেলেরা। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় মাছ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত তারা।

ঝালকাঠি জেলায় ৬ হাজার ৮৮৩ জন নিবন্ধিত জেলের মধ্যে সরকারি প্রণোদনার চাল পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৫০ জনে। সে হিসাবে সুবিধাবঞ্চিত ৩ হাজার ৩৩ জন। অথচ তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব পরিবার আছে। পরিবারপ্রতি গড় সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। এতে ১৫ হাজারের বেশি মানুষের বিগত তিন সপ্তাহ অনাহার-অর্ধাহারে অমানবিক জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

jagonews24

পেশাদার জেলেরা বলছেন, ২২ দিন তারা মাছ শিকারে বিরত থাকলেও এক শ্রেণির মৌসুমী জেলে ও ব্যবসায়ী আইন অমান্য করে মা ইলিশের ধ্বংস করেছে।

সদর উপজেলার পূর্ব চাঁদকাঠির জেলে মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই নদীতে মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোনো কাজ শিখিনি। তাই নিষেধাজ্ঞার সময়টা আমাদের কষ্টে কেটেছে। নদীতে না যেতে পারায় আয়ও বন্ধ ছিল। ধারদেনা করে ঋণের বোঝাও বেড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজাপুর উপজেলার পুখরীজানা এলাকার এক জেলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় ৪০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও আমরা ২৫ কেজি করে চাল পেয়েছি। এছাড়া অনেক অসাধু জেলে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নদীতে নেমে নির্বিচারে মা ইলিশ ধরেছে। এতে ইলিশ পাওয়া নিয়ে আমরা শঙ্কিত।

জেলে হোসেন আলী মিয়া বলেন, ‘২২ দিন ধইরা ঘরে বইয়া রইছি। কোনো কামকাজ ছিল না। ঘরে বাজারও নাই, চলতে অনেক কষ্ট অইছে। ধারকর্য কইরা এই কয়দিন চইলছি। রাইতে নাম্মু নদীতে, মাছ পাই কি না জানি না।

একই কথা জেলে শাহ আলমের মুখেও। বলেন, ‘কালই (শুক্রবার) থিক্কা আরা কোনো বাধা থাকবো না। নদীতে নামনের সব কাজ শেষ। অনেক দেনা হইছে, এহন ইলিশ ধইরা হেইয়া শোধ করুম।’

jagonews24

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, স্বল্প জনবল নিয়েও প্রশাসন জাটকা রক্ষায় নিরলস কাজ করেছে। মৎস্য বিভাগ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোস্টগার্ড দিন-রাত পালাক্রমে নদীতে অভিযান চালিয়েছে। কিছু অসাধু জেলে নদীতে মা ইলিশ শিকার করেছে। এরপরও আমাদের অভিযান সফল হয়েছে। প্রতিবছরের চেয়ে এবছর ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়বে বলে মনে করছি।

তিনি বলেন, গত ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের এ নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ আহরণ, বাজারজাতকরণ, বিক্রি ও পরিবহন নিষিদ্ধ ছিল। নিষেধাজ্ঞাকে মান্য করে জাল ও নৌকা নিয়ে নদীতে নামেননি পেশাদার জেলেরা। যারা নেমেছেন তাদের অনেককে আইনের আওতায় দণ্ডও দেওয়া হয়েছে। ৭ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া অভিযানে ১৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড, ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায়, ২০টি মামলা, ২৫টি নৌকা জব্দ, ৫ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ মিটার জাল জব্দ এবং ২১৭ কেজি ইলিশ উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এসময়ে জব্দ নৌকাগুলো সুগন্ধার তীরে ডিসি পার্ক চরে রাখা হয়েছে। এছাড়া জালগুলো পোড়ানো এবং ইলিশ মাছগুলো বিভিন্ন এতিম খানায় বিতরণ করা হয়েছে।

আতিকুর রহমান/এমকেআর/জিকেএস