ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

গাইবান্ধায় শুরু মাছ ধরার ‘বৈদ’ উৎসব

জেলা প্রতিনিধি | গাইবান্ধা | প্রকাশিত: ০৪:২৯ পিএম, ০৮ নভেম্বর ২০২২

বিল-জলাশয়ে পানি কমে যাওয়ায় গাইবান্ধায় চলছে মাছ ধরার মৌসুম। সেইসঙ্গে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী দলবদ্ধ মাছ শিকার বৈদ বা বৈত।

সরেজমিন সোমবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে সদর উপজেলার কূপতলা ইউনিয়নের উইয়ার বিলে দেখা যায়, দলবদ্ধভাবে মাছ শিকার চলছে। শিকারিদের হাতে ও কাঁধে নানা ধরনের মাছ ধরার উপকরণ। পলো, হ্যাংগা জালি, পলো জালি, হ্যাগা, মুঠ জাল, কোঁচ, ক্যাটা ও ঝাঁকি জাল। তারা উইয়ার বিল থেকে যাবেন টাকি মারি বিলে। তারপর যাবেন ঢোল মারা বিলে।

কর্মব্যস্ত মানুষের জীবন থেকে ক্রমাগত হারিয়ে যাওয়া এই উৎসবে অংশ নেন তিন শতাধিক নানা শ্রেণি- পেশার মানুষ।

বৈদে অংশ নেওয়া সাদুল্লাপুর উপজেলার এনায়েতপুর এলাকার কৃষক আব্বাস আলী (৫০) জাগো নিউজকে বলেন, ‘মাছ ধরতে খুব ভালো লাগে আর যদি হয় বৈদ তাহলে তো কথাই নেই। খবর পেয়ে সকালেই এখানে এসেছি। এসে বৈদে অংশ নিয়েছি। তবে এখনো একটা মাছও পাইনি। তবে তাতে সমস্যা নেই। অংশ নিতে পারছি এটাই আনন্দের।’

বিলে পলো নিয়ে নেমে পড়েছেন আল-আমিন আকন্দ (৩৫)। তিনি এসেছেন ঘাগোয়া ইউনিয়নের কাটিহারা গ্রাম থেকে। ভাগ্যক্রমে তিনি পেয়েছেন মাঝারি সাইজের একটি কার্প মাছ। মুখভরা হাসি দিয়ে বললেন, ‘এই দলে কম করেও তিন-চারশ মানুষ আছেন। শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী, ছাত্র, কৃষক সবাই আজ মিলেমিশে একাকার।’

এলাকার বৈদ শিকারি নামে পরিচিত সোলাইমান মিয়া। মাছ পেয়েছেন দুটি। একটি শৈল, আরেকটি রুই। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বৈদে অংশ নেওয়া কারও কারও বয়স ৬০-৬৫ ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু দেখেন, মাছ মিলুক আর না মিলুক তারা মাছের নড়াচড়া টের পেয়েই লাফিয়ে পড়ছেন। এদের মধ্যে কেউ ৮-১০টি মাছ পাবেন আবার কাউকে ফিরতে হবে শূন্য হাতে।’

মাছ ধরা উপভোগ করতে আসা পাঁচজুম্মা এলাকার আব্দুল্লাহ্ আল মারুফ ও চাপাদহ বিএল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী মাজেদ রানা বলেন, ‘দলবদ্ধ হয়ে মাছ ধরা দেখতে খুব ভালো লাগে। বৈদের খবর পেলেই ছুটে আসি।’

চাপাদহ বি এল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনারুল ইসলাম বলেন, বৈদ নামের প্রকৃত অর্থ তিনি জানেন না। সাধারণত কার্তিক মাসের প্রথমদিক থেকে শুরু করে মাঘ মাস পর্যন্ত যখন বড় বড় বিল, নদী ও খালে পানি কম থাকে তখনি দলবদ্ধ মাছ ধরার (বৈদ) প্রকৃত মৌসুম। ঠিক কতকাল থেকে এই অঞ্চলে বৈদ নামের এই মাছ ধরা চলে আসছে তা বলা কঠিন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার সাত উপজেলায়ই সৌখিন এই মাছ শিকারির পৃথক পৃথক দল রয়েছে। বৈদ দলের আলোচনার ভিত্তিতে মাছ শিকারের নির্দিষ্ট জলাশয়, তারিখ, সময়, যাত্রার স্থান নির্ধারণ করে জানিয়ে দেওয়া হয়। বৈদের দলের একজন দলনেতা থাকেন। তার কাছে থাকে মহিষের শিং দিয়ে তৈরি বড় একটি বাঁশি। যাকে বলা হয় ‘বৈদের শিংগা’, যা দিয়ে উচ্চ শব্দ হয় এবং অনেক দূর থেকে তা শোনা যায়।

পূর্বনির্ধারিত এলাকায় এসে শিংগায় ফুঁক দেওয়া হয়। শিংগার শব্দ শুনে নিজ নিজ পছন্দমতো মাছ ধরার নানা সরঞ্জাম নিয়ে সমবেত হতে থাকেন মৎস্য শিকারিরা। পরে বিল বা জলাশয়ে দলবদ্ধ হয়ে মাছ শিকার চলে। এতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, যে কেউ অংশ নিতে পারেন।

বৈদে মাছ মারা চলে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত। চলে এক জলাশয় থেকে অন্য জলাশয়ে। এতে অনেকে মাছ পান আবার অনেকে একটি মাছও পান না।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বৈদের দলনেতা গিয়াস উদ্দিন (৪৮) বলেন, ‘মাছ না পেলেও বৈদ শিকারিদের কোনো দুঃখ নেই। কেননা এখানে দলবদ্ধভাবে মাছ ধরতে যাওয়ার আনন্দটাই মুখ্যবিষয়।’

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে বৈদ দল জলাশয়ে নামলে সবাই খুশি হতো। ভিড় করে দেখতে আসতো। কিন্তু আজকাল কোথাও কোথাও মালিকানা দাবি করে বাধা দেওয়া হয়। অনেক সময় ফিরে যেতে হয় মাছ শিকার না করেই।’

এসআর/এএসএম