পঞ্চগড়ে তীব্র শীত
বেড না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় শিশুরোগী
পঞ্চগড়ে কনকনে শীতে জনজীবনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল, দুস্থ ও খেটে খাওয়া মানুষ। শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত রোগীরা ভিড় করছেন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে। বিছানা সংকুলান না হওয়ায় অনেকে শীতের মধ্যেই হাসপাতালের বারান্দায় অবস্থান নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিন পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে গেছে, ১০০ শয্যার হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। এদের অধিকাংশ শীতজনিত রোগী। তাদের মধ্যে বয়স্ক এবং শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি। হাসপাতালের ২০ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছে ৪২ জন। ওয়ার্ডে শিশুর জন্য বিছানা না পেয়ে অনেকেই মেঝে আবার কেউ সেখানেও জায়গা না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় অবস্থান নিয়েছেন। তবে স্থান সংকুলান না হলেও রোগীদের যথাসাধ্য চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান চিকিৎসকরা।
উপজেলা সদরের অমরখানা ইউনিয়নের ভেতরগর এলাকার জুয়েল রানা বলেন, তিনদিন আগে আমার ১৬ মাস বয়সী শিশু জাকিয়া আক্তারের সর্দি-কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। মঙ্গলবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে তাকে নিয়মিত নেবুলাইজার দেওয়া হচ্ছে। এখন আমার সন্তান অনেকটাই সুস্থ।

একই কথা বলেন, কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের পানিডুবি থেকে আসা নাসিমা আক্তার। তিনি বলেন, আমার ৪৮ দিন বয়সী শিশু নাঈমা ইসলামের হঠাৎ সর্দি-জ্বর শুরু হয়। সঙ্গে কাশি ছিল। ওষুধ স্যালাইনসহ তাকেও নেবুলাইজার দেওয়া হচ্ছে।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও শীতের শুরু থেকে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালের ২০ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন ৪৫ থেকে ৫০ জন পর্যন্ত শিশু ভর্তি করতে হচ্ছে। আমরা আমাদের মতো করে যথাসাধ্য চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। এসময় বিশেষ করে শিশু এবং বৃদ্ধদের বিকেলের পর বাড়ির বাইরে বের না হওয়া উচিত। এছাড়া ঠান্ডা ও বাসি খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। শিশুদের তরল খাবার খাওয়ানো দরকার। কোনো শিশুর ডায়রিয়া বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলেই তাকে জরুরিভাবে হাসপাতালে আনতে হবে।
এদিকে, জেলার প্রায় দুই লাখ দুস্থ মানুষের মাঝে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৬০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। তবে আরও ১৫ হাজার শীতের কম্বল বিতরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানায় জেলা প্রশাসন। এর বাইরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। তবে জেলাজুড়ে কনকনে শীত এবং দুস্থদের সংখ্যা বিবেচনায় শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম বৃদ্ধির দাবি স্থানীয়দের।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। টানা চারদিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ এর মধ্যে ওঠানামা করে। গত দুইদিন ধরে তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও প্রতিদিন বিকেলের পর থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে চারপাশ। সড়ক মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। কনকনে শীত আর ঘনকুয়াশায় দুস্থদের পাশাপাশি দুর্ভোগ বেড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের। রিকশা-ভ্যানচালকদের দৈনন্দিন আয় কমে গেছে।
জেলা শহরের ব্যারিস্টার বাজার এলাকার ইজিবাইক চালক নাসিম বলেন, আগে আমরা প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ আয় করি। ঠান্ডার কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যাত্রীরা গাড়িতে ওঠে না। বর্তমানে সারাদিন গাড়ি চালিয়ে ৩০০/৪০০ টাকাও আয় করতে পারি না। শীতের কারণে প্রতি বছরের মতো এবারও বউ-বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে আছি।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী সপ্তাহে ঘনকুয়াশা এবং শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।

জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, পঞ্চগড় একটি শীতপ্রবণ জেলা হিসেবে পরিচিত। এজন্য শীত নিয়ে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও শীতার্ত ও দুস্থদের শীত নিবারণে সরকারিভাবে কম্বলসহ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। জেলার পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৬০০ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১৫ হাজার শীতের কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সেগুলো বিতরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।।
সফিকুল আলম/এমআরআর/এএসএম