শীতবস্ত্রের জন্য নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে ৮০ পরিবার
একটা শীতের পোশাকের অপেক্ষায় জুনু মিয়ার পরিবার
‘ভাইয়া, খুব ঠান্ডা লাগছে, একটা জামা (শীতবস্ত্র) দিবা আমারে। আব্বায় দেয় না। রাত হলে খুব ঠান্ডা লাগে। আম্মাকেও বলছি, শুধু বলে টাকা নাই। কেউ শীতের কাপড় দেয় না।’
এভাবেই কেবল মাত্র একটা শীতের পোশাকের জন্য আকুতি জানাচ্ছিল তিন বছরের ছোট্ট শিশু তানহা। যখন তার সঙ্গে কথা হয়, তখনও সে থরথর করে কাঁপছিল ঠান্ডায়।

তানহার পাশেই বসা ছিল তার দিনমজুর বাবা মো. জুনু মিয়া, মা শামিমা বেগম ও ভাই আরমান আলী। তাদেরই একই অবস্থা। শুধু জুনু মিয়া নয়, সুনামগঞ্জের সুরমা ইউনিয়ন কুরুতলা গ্রামের ৮০টি পরিবার এখন শীতবস্ত্রের জন্য নদীর পাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।
অথচ এর আগে জুনু মিয়ার মতো প্রায় সবারই মোটামুটি ছিল সাজানো সংসার। কিন্তু গেলো বছরের জুন মাসের ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয় পুরো সুনামগঞ্জ জেলা। এতে সব তছনছ হয়ে যায় তাদের। বন্যায় ভেসে যায় ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি জিনিসপত্র। এর মধ্যে আবার শীতে এই মানুষগুলোর দুর্ভোগ বেড়েছে।
জুনু মিয়া বলেন, গত পাঁচ মাস ধরে আমি বেকার। কোনো কাজ পাচ্ছি না। এখন আবার সুনামগঞ্জে শীত বেড়েছে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে বিপাকে আছি। শীতের কাপড় নেই। সেই সঙ্গে রাতে ঘুমানোর জন্য লেপ-তোষকও নেই।
গ্রামের এম্মাজন বিবি, রোখসানা বেগম, লায়লা বেগমসহ অনেকেই বলেন, আমাদের গ্রাম খুব হতদরিদ্র। এই গ্রামটির দিকে কেউ কখনও সাহায্য নিয়ে আসে না।
তারা বলেন, দিনে আমাদের কোনো রকম কাটলেও রাতে শীতে অনেক কষ্ট হয়। বড়রা কোনো রকম শীত কাটিয়ে উঠতে পারলেও, ছোট ছেলে-মেয়েদের কষ্ট হয়। তারা যখন বলে, আম্মা খুব শীত লাগছে, চোখের সামনে তাদের যখন থরথর করে কাঁপতে দেখি তখন ভেতরটা ফেটে যায়।
কথাগুলো বলে কুরুতলা গ্রামের নারীরা হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। আর বলতে থাকেন, আমাদের গ্রামে ৮০টি শীতবস্ত্র দেবে এমন কোনো মানুষ কি নেই পৃথিবীতে।
এম্মাজন বিবি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাবারে খুব ঠান্ডা। তলে দিয়েও ঠান্ডা, ওপরে দিও ঠান্ডা। খুব কষ্ট হচ্ছে বাজান।’
গত বছরের জুন মাসের বন্যায় সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার সবকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। বন্যা কবলিত হয়েছিল অর্ধলক্ষাধিক পরিবারের অন্তত ২৫ লাখ মানুষ। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও হাট-বাজার পানিতে ডুবে গিয়েছিল। পুরো জেলা প্লাবিত হওয়ায় মানুষ প্রাণ বাঁচাতে আশপাশের উঁচু স্থাপনায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের ও নিচু এলাকার দরিদ্রদের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তাদের গৃহস্থালি জিনিসপত্রের পাশাপাশি শীতবস্ত্র, লেপ-তোষক, বালিশ ভেসে যায়।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বন্যায় অনেক মানুষ শীতবস্ত্র হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পাওয়া গেছে ৫০ হাজার শীতবস্ত্র। যারা দরিদ্র ও শীতবস্ত্র পাওয়ার উপযুক্ত তাদের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ৫০ হাজার শীতবস্ত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমরা পেয়েছি। এরই মধ্যে সেগুলো বিতরণ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, বন্যায় হাওর এলাকার মানুষের শীতবস্ত্র বানের জলে ভেসে যাওয়ায় আরও শীতবস্ত্রের জন্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি।
লিপসন আহমেদ/জেডএইচ/জিকেএস