পাহাড়ের বুকে সরিষাচাষে সচ্ছলতার হাতছানি
পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে সবুজের পাদদেশে হলুদের ছড়াছড়ি। সবুজের বুকে যেন হলুদের রঙছটা। পাহাড়ের বুকে যতদূর চোখ যায় যেন সরিষার হলুদ ফুলের মাখামাখি। যেখানে প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সৌন্দর্য্যের নান্দনিকতায়। স্বল্প সময় আর কম খরচে সরিষাচাষে অর্থনৈতিক সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন পাহাড়ের প্রান্তিক কৃষকরা।
চলতি মৌসুমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা, মানিকছড়ি ও মহালছড়িতে বিভিন্ন জাতের সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৪৯ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ। সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি তেলের দাম বৃদ্ধিতে সারাদেশের মতো খাগড়াছড়িতেও সরিষার আবাদ বেড়েছে।

সরিষাচাষে আর্থিক সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন খাগড়াছড়ি গোমতি এলাকার প্রান্তিক চাষি মো. শাহেদ মিয়া। কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় ১০০ শতক জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সরিষায় এক লাখ টাকা আয় করার স্বপ্ন দেখছি।
অপর চাষি মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, বোরো ও আমনের মাঝামাঝি সময়ে পরিত্যক্ত জমিতে সরিষা চাষে লাখ টাকারও বেশি আয় করার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। স্বল্প সময়ে সরিষা চাষে বেশি লাভবান হওয়ার কারণে কৃষকের ভাগ্য বদলে যেতে পারে।
ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণে এবং আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা।

খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, সরিষা আবাদ করার জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়েছে। সরিষা চাষে প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে।
এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত সরিষার আবাদ হয়েছে। পাহাড়ে সরিষা চাষে কৃষকদের আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি তেলের আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশে কমে আসবে বলেও মনে করেন তিনি।
জানা গেছে, সরিষা মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে পরিচিত। আমনের ফসল ঘরে তোলার পর বোরো চাষের জন্য দুই মাস সময় অপেক্ষা করতে হয়। বোরো ও আমনের মাঝামাঝি সময়ে পরিত্যক্ত জমিতে সরিষা চাষ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ বেছে নিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
সরিষা দেড় থেকে দু’মাসের মধ্যেই হয়ে যায়। সরিষা আবাদে তেমন সেচের প্রয়োজন হয় না। কম সময়ে সরিষা চাষে ফলন পাওয়া যায়। সরিষা উৎপাদন করে দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ সম্ভব। সরিষার তেলে রয়েছে অনেক ঔষধী গুণ। পাশাপাশি সরিষার খৈল পশুখাদ্য ও জমির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধির কাজে ব্যবহার হয়।
মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এফএ/এমএস