সৈয়দপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র
প্রতিষ্ঠার ৬৫ বছরে নিয়োগ হয়নি শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
নীলফামারীর সৈয়দপুরে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নেই কোনো শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। চালকের পদায়ন না হওয়ায় ১০ বছর ধরে পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স। একজন মেডিকেল কর্মকর্তা থাকলেও তিনি আছেন আরও দুটি পদে। এ অবস্থায় ১০ শয্যার হাসপাতালটির কার্যক্রম চলছে কোনোরকমে। ফলে সেবাপ্রত্যাশীদের বাধ্য হয়ে বাড়তি টাকা খরচ করে যেতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৫৮ সালে শহরের পৌর পরিষদের সামনে প্রায় ৪০ শতক জমির ওপর গর্ভবতী মা ও শিশুদের চিকিৎসাসেবার জন্য ১০ শয্যাবিশিষ্ট এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে ওঠে। তবে এরপর দীর্ঘ ৬৫ বছর পেরিয়ে গেলেও কেন্দ্রে বাড়েনি একটিও শয্যা। কেন্দ্রেটিতে বিনা পয়সায় সন্তান প্রসব, লাইগেশনসহ নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে ১৬ ধরনের সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও মেলে না তার কিছুই। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ক্লিনিকের সামনে ও ছাদে জন্মেছে আগাছা। বেশিরভাগ সময়ই চিকিৎসা কর্মকর্তার কক্ষ থাকে তালাবদ্ধ।
আরও পড়ুন: চিলাহাটিতে দুই ট্রেনের সংঘর্ষ, স্টেশন মাস্টার বরখাস্ত
এদিকে, কেন্দ্রটিতে দীর্ঘদিন ধরে একজন পরিবার কল্যাণকেন্দ্র পরিদর্শিকা, নার্স ও সুইপার পদ শূন্য। এখানকার কর্মরত মেডিকেল কর্মকর্তা একই সঙ্গে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও ক্লিনিক্যাল কন্ট্রাক সেশনের নীলফামারীর সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে এখানে সপ্তাহে তিনদিন রোগী দেখেন তিনি। দুই মাস পর অবসরে যাবেন তিনিও। চিকিৎসাকেন্দ্রটিতে নেই রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষাগার। একটি আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও তা ব্যবহারে সক্ষম ব্যক্তি নেই। বাধ্য হয়েই চিকিৎসা প্রত্যাশীদের যেতে হচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিকে।
আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা মনিরা বেগম। স্বামীর রিকশায় করে কেন্দ্রটিতে সেবা নিতে এসেছেন। কিন্তু চিকিৎসক নীলফামারীতে অফিস করায় ফিরে যেতে হয় তাকে।
আরও পড়ুন: জুয়া খেলতে গিয়ে দুই পৌর কাউন্সিলরসহ গ্রেফতার ৭
মনিরা বেগম বলেন, অসুস্থ অবস্থায় সেদিনও আসছি, ডাক্তার পাইনি। আজও ফিরে যাচ্ছি। কীভাবে হবে। আমার স্বামী গাড়ি না চালিয়ে আমাকে নিয়ে আসে। ইনকাম ও হলো না, আমার চিকিৎসাও হলো না। ডাক্তার নাকি নীলফামারীতে।
সৈয়দপুরের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক রওশন আলী বলেন, আমার মেয়ে অসুস্থ ছিল। বিনামূল্যে চিকিৎসা শুনে এখানে নিয়ে আসছিলাম। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও ডাক্তার নাই। এভাবে অব্যবস্থাপনা হলে কীভাবে হবে।
আরও পড়ুন: পরিযায়ী পাখিতে মুখর নীলসাগর
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি এই কেন্দ্রের পাশাপাশি উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্বসহ আরও একটি পদে দায়িত্ব পালন করি। এজন্য প্রতিদিন রোগী দেখা সম্ভব হয় না। এছাড়া কেন্দ্রটিতে জনবল সংকট রয়েছে। অবকাঠামো ও নানা ঘাটতি সত্ত্বেও যথা সম্ভব সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালটির শয্যা বাড়ানোর প্রস্তাবনা দেওয়া হলেও ২০ বছরে তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখানে আমরা আর কী করার।
রাজু আহম্মেদ/এমআরআর/জিকেএস