পঞ্চগড়ে সালানা জলসা স্থগিত, পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে নিহত ১
পঞ্চগড়ে সালানা জলসা স্থগিত করেছে আহমদিয়া সম্প্রদায়। প্রশাসনের অনুরোধে আহমদিয়া সম্প্রদায় নেতারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর আগে শুক্রবার (৩ মার্চ) জুমার নামাজ শেষে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারীরা শহরের শেরে বাংলা পার্ক মোড়ে জড়ো হন। তারা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ বাধে। এসময় বিক্ষুব্ধরা ইটপাটকেল ছোড়েন। পুলিশও কয়েকশ রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশ, পথচারীসহ ২০ জন আহত হন। এছাড়া এ ঘটনায় আরিফুর রহমান (২৭) নামের একজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে ১৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। রাতে বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের পরিবারের দাবি, বাড়ির কাছে মসজিদপাড়া মহল্লায় আরিফুর রহমান ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্যে পড়ে। পরে মারাত্মক আহত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাজেদুর রহমান চৌধুরী ইরান বলেন, আমাদের মহল্লার আরিফুর রহমান নামের একজন মারা গেছেন। পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় মারাত্মক আহত হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে হাসপাতালে পৌঁছার আগেই তিনি মারা যান। রংপুর থেকে তার মরদেহ নিয়ে আসা হচ্ছে।
এদিকে, সংঘর্ষ চলাকালে পঞ্চগড় শহরের পাশে আহম্মদনগর এলাকায় ১০টি বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। পঞ্চগড় শহরের একটি বাজারের চারটি দোকানের মাল বের করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বিক্ষুব্ধরা ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে দেননি।

জেলার সম্মিলিত খতমে নবুয়ত পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কারি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আজ আমাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না। বিক্ষুব্ধ তৌহিদি জনতা মিছিল বের করলে প্রশাসনের পরামর্শমতে আমরা শেরে বাংলা পার্ক মোড় থেকে যারা মিছিল করছিল তাদের নিয়ে আসি এবং আমরা বাড়ি চলে যাই। এরপর কে কোথায়, কীভাবে হামলা করলো জানি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বিক্ষোভ করেছিলাম। তবে আগামীতে এমন আয়োজন আর করবো না, এবারের আয়োজনটি সংক্ষিপ্ত করা হবে—অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম শফিকুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক রিয়াজ উদ্দিনের এমন আশ্বাসে আমরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেছি।’
পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নেতাদের সালানা জলসা স্থগিতের আহ্বান জানালে তারা সম্মত হন। তবে বিক্ষুব্ধরা এখনো শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভ করছেন। যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। আহমদনগর এলাকাসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া আহমদিয়া সম্প্রদায়ের তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সালানা জলসা শুক্রবার রাতেই বন্ধ করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিকের পথে।
ন্যাশনাল বার্ষিক সালানা জলসার আহ্বায়ক আহমেদ তফসের চৌধুরী বলেন, পুলিশ ও জেলা প্রশসন আমাদের জলসা স্থগিতের নির্দেশনা দিয়েছে। আইন ও প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা জলসা স্থগিত করেছি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে তেঁতুলিয়া-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
এএইচ/এএসএম