দুর্ঘটনায় স্বামী নিহত
নববধূ সোনিয়ার চিকিৎসার খরচ বহন করবেন প্রবাসী
দুদিন পেরিয়ে গেলেও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় স্বামী হারানো নববধূ সোনিয়া খাতুনকে তার স্বামীর মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি। কারণ সোনিয়া নিজেও এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে ক্লিনিকের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। শরীরে রক্তশূন্যতা এবং প্রচণ্ড ব্যথার কারণে বেশিরভাগ সময়ই তাকে ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে।
তবে ঘুম ভাঙলেই যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে স্বামী শামীমকে খুঁজে ফিরছেন সোনিয়া। অথচ এ নববধূ জানেন না, তার স্বামী বেঁচে নেই। তার দাফনও সম্পন্ন হয়েছে।
সোনিয়ার মেহেদিরাঙা হাতে ক্যানুলা আর সাদা গজের ব্যান্ডেজ। হাসপাতালের বেডে সোনিয়ার কান্না দেখে আশপাশের রোগী ও তাদের স্বজনরা, এমনকী চিকিৎসক-নার্সরাও কান্না ধরে রাখতে পারছেন না।

এরইমধ্যে শুক্রবার (৩ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার হাত ও ডান পায়ে অস্ত্রোপচার করার জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেন চিকিৎসকরা। কিন্তু সোনিয়া শারীরিকভাবে ফিট না থাকায় শুধু ডান হাতের ফ্র্যাকচারে হাড় মিলিয়ে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। সোমবার (৬ মার্চ) তার অস্ত্রোপচার করার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক। চুয়াডাঙ্গা পরিবার নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ সোনিয়ার প্রয়োজনীয় রক্তের ব্যবস্থা করেছে।
চুয়াডাঙ্গার নিউ ইউনাইটেড ক্লিনিকের চিকিৎসক আকরুজ্জামান বলেন, ‘সোনিয়াকে গতকাল অস্ত্রোপচার করার জন্য আমাদের অর্থোপেডিক চিকিৎসক আলাউদ্দিন আজাদ মেডিকেল টিম নিয়ে তাকে থিয়েটারে নিয়েছিলেন। কিন্তু তার শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিন কম ও রক্তশূন্যতা রয়েছে। এ কারণে দুদিন তাকে শারীরিকভাবে ফিট করতে করতে ছয় ব্যাগ রক্ত দিতে বলা হয়েছে। আমরা প্রতিদিন দুই ব্যাগ করে রক্ত দিচ্ছি। সোনিয়া শারীরিকভাবে ফিট হলে সোমবার তার অস্ত্রোপচার করা হবে, ইনশা আল্লাহ।’
সোনিয়ার মা চম্পা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার মেয়েটা ছোট বয়সেই যে ধাক্কা পেল, তা কীভাবে কাটিয়ে উঠবে?’

মেয়ের চিকিৎসার ব্যয় কীভাবে মেটাবেন, এমন প্রশ্নে চম্পা খাতুন বলেন, ‘ক্লিনিক মালিক ঝন্টু সাহেব ও আমেরিকা প্রবাসী এক ভাই আমার মেয়ের চিকিৎসার সার্বিক খরচ দিচ্ছে। চিকিৎসার ব্যয় নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই।’ এ কথা বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
চুয়াডাঙ্গার নিউ ইউনাইটেড ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম ঝন্টু বলেন, ‘সোনিয়া খাতুনের অস্ত্রোপচারসহ পুরো চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় প্রথম ধাপে ৩০ হাজার টাকাসহ প্রায় এক লাখ লাগতে পারে। তার চিকিৎসার খরচ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বহন করবেন। এছাড়া আমি ক্লিনিকের খরচ বাবদ কোনো টাকা নেবো না। বরং যতটুকু পারি সহযোগিতা করবো।’

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সোনিয়ার স্বামী শামীম হোসেন (২২) মারা যান। ওই মোটরসাইকেলে থাকা সোনিয়া গুরুতর আহত হয়ে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নিহত শামীম বেগমপুর ইউনিয়নের ফুরশেদপুর গ্রামের নওদাপাড়ার মৃত শফিউদ্দিনের ছেলে। ওই দুর্ঘটনায় সোনিয়াসহ তার খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী শেফালি খাতুন আহত হন। শেফালি খাতুন সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের বলদিয়া গ্রামের বিশ্বাসপাড়ার সজীব মিয়ার স্ত্রী। শেফালী খাতুন প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন।
আহত সোনিয়া চুয়াডাঙ্গা শহরের হাসপাতালে রোডে অবস্থিত নিউ ইউনাইটেড ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শামীমের বাড়ির লোকজন সোনিয়াকে দেখতে আসেন। পরে দুই পক্ষের সম্মতিতে ওইদিনই বিয়ে হয়। পরদিন ২৫ ফেব্রুয়ারি নববধূকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে আসেন শামীম। শুক্রবার (৩ মার্চ) সোনিয়াকে নিয়ে নিজ বাড়িতে ফেরার কথা ছিল শামীমের। কিন্তু তার আগেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে যান শামীম।
এসআর/এমএস