৫ কোটি টাকার হাট অর্ধেকে ইজারার অভিযোগ মেয়রের বিরুদ্ধে
সংবাদ সম্মেলন করেন কাউন্সিলর ও নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফ রব্বানী, সিরাজুল ইসলাম ও ইজারাদার সাজেদুর রহমান।
গোপনে অর্ধেক মূল্যে পশুর হাট ইজারা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিবের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পৃথক তিনটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কাউন্সিলর ও নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফ রব্বানী, পাঁচবিবি নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম ও ইজারাদার সাজেদুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) দুপুরে পাঁচবিবি পৌরসভার গোহাটি এলাকায় সংবাদ সম্মেলনেও করেন তারা।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের বৃহৎ পাঁচবিবি গো-হাটটি (বালিঘাটা হাট) পৌর কর্তৃপক্ষ গোপনে দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্রের শিডিউল যেসব কার্যালয়ে বিক্রি এবং দরপত্র দাখিল বাক্স স্থাপনের কথা থাকলেও হয়নি। কয়েক বছর ধরে পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান এভাবেই হাট ইজারা দিয়ে আসছেন। এ বছরও মেয়র গোপনে ৫ কোটি টাকার হাট ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় ইজারা দিয়েছেন। এ কারণে সরকার কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, হাট ইজারা বিজ্ঞপ্তি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকে দেওয়ার কথা। অথচ এ হাট ইজারার দরপত্র কোনো পত্রিকায় দেওয়া হয়নি। পৌরসভার নোটিশ বোর্ডেও দরপত্র দেওয়া হয়নি। ইউএনও, থানা, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে শিডিউল ও দরপত্র বিক্রির কথা। কোনো স্থানে শিডিউল দিয়ে তাৎক্ষণিক নিজেরাই কিনে নিয়েছেন আবার কোনো স্থানে শিডিউলই দেননি।
পাঁচবিবি নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এস কে আব্দুল হক বলেন, ‘হাবিবুর রহমান ২০১১ সাল থেকে এক টানা দশ বছর মেয়র ছিলেন। তিনি দ্বিতীয় বারের মত আবারো মেয়রের দায়িত্ব পান। সেই সময় থেকে পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন বালিঘাটা হাট একইভাবে ইজারা হচ্ছে। এবার পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে বাইরের ঠিকাদার ইজারা নিতে চেয়েছিলেন। গোপনে দরপত্র আহ্বান করায় অন্য ইজারাদাররা কেউ শিডিউল কেনার সুযোগ পাননি।’
পাঁচবিবি পৌরসভার তিন নম্বর ওর্য়াডের কাউন্সিলর ও পাঁচবিবি নাগরিক কমিটির নির্বাহী সদস্য আরিফ রব্বানী বলেন, ‘বালিঘাটা হাট আমার ওয়ার্ডে। অথচ আমাকে হাট ইজারা দেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। অতি গোপনে ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। বাইরের কেউ ইজারার কথা জানতে পারেনি। প্রকাশ্যে ইজারার ব্যবস্থা করা গেলে ৫ কোটি টাকা হতো। গোপনে দরপত্র দেওয়ায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।’
এ বিষয়ে পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, গোপনে দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। একটি স্থানীয় ও একটি ঢাকার পত্রিকায় ইজারার দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। তবে এ মুহূর্তে ওই দুটি পত্রিকার নাম মনে নেই। পৌরসভার নোটিশ বোর্ডেও দরপত্রের নোটিশ টাঙানো হয়েছিল। গত বছরের চেয়ে এ বছর কিছু বেশি টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারা দরপত্রের তিনজন শিডিউল কিনেছিলেন। প্রত্যেকে দরপত্রের শিডিউল দাখিল করেছিলেন।
মেয়রের দাবি, নিয়মানুযায়ী হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। কয়েক জন ব্যক্তি সুবিধা না পেয়ে তারা এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।
এ বিষয়ে পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরমান হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, পাঁচবিবি হাট-বাজারের অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা। এরই মধ্যে কমিটি তদন্ত শুরু করেছে।
জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) সালেহীন তানভীর গাজী জাগো নিউজকে বলেন, পাঁচবিবির বালিঘাটা হাট-বাজার ইজারার অনিয়ম নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পাঁচবিবির ইউএনওকে অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য বলা হয়েছে। তবে এখনো তদন্ত প্রতিবেদন আসেনি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাশেদুজ্জামান/এসজে/জিকেএস