ভাগাড়ে অতিষ্ঠ জীবন
পড়ে আছে ১৬ কোটি টাকার বর্জ্য শোধনাগার
জনবল না থাকায় উদ্বোধনের ১৫ মাস পরও চালু হয়নি বরগুনা পৌরসভার বর্জ্য শোধনাগার। তাই পুরো শহরের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে শহরের সোনাখালীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। আর এতে মশা, মাছি ও দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ সেখানকার বাসিন্দারা।
এছাড়াও প্রতি রাতে ময়লার ভাগাড়ে আগুন দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। ময়লা পোড়ার সেই ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে ভুগছে শিশু-বৃদ্ধসহ সবাই। এতে ওই এলাকায় স্বস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনা পৌরসভার সব বর্জ্য রিসাইক্লিং করার জন্য হেউলিবুনীয়া এলাকায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় বর্জ্য শোধনাগার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য অর্থ আসে বাংলাদেশ সরকার ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) থেকে। সার্বিক সহযোগিতা করে উপকূলীয় শহর পরিবেশগত অবকাঠামো প্রকল্প (সিটিইআইপি)। সেই প্রকল্পটিই বাস্তবায়ন করে বরগুনা পৌরসভা।
প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২১ সালে। ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তবে উদ্বোধনের ১৫ মাস পার হলেও জনবল না থাকায় চালু হয়নি বর্জ্য শোধনাগারটি। কথা ছিল বর্জ্য শোধনাগারটি চালু হলে বর্জ্য রিসাইক্লিং করে জৈব সার ও গ্যাস উৎপাদন হবে।

এদিকে শোধনাগার চালু না হওয়ায় এখনো বরগুনা পৌর শহরের সব ময়লা ফেলা হয় সোনাখালীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। প্রতিরাতে ময়লার এ ভাগাড়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় পৌরসভার পরিছন্নতা কর্মীরা। সেই আগুন জ্বলতে থাকে সারাক্ষণ। ময়লা-আবর্জনা ও পলিথিনসহ প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ার ধোঁয়া ও গন্ধে দুর্বিষহ দিন কাটছে এখানকার মানুষের।
সোনাখালী এলাকার বাসিন্দা শাকিল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের জনজীবন বিঘ্নিত হচ্ছে। ময়লা পোড়ানোর ধোঁয়ায় আমাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। ময়লার কারণে নানাবিধ রোগেও আক্রান্ত হতে হচ্ছে। অসুখ-বিসুখ প্রায় সারা বছরই লেগে থাকে এ অঞ্চলের মানুষের। এমনকি বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের কাছে বাড়ির ঠিকানা দিতে লজ্জা লাগে। তাই ময়লার ভাগাড়টি যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে সরিয়ে ফেলা হোক।
সোনাখালী এলাকার শিউলি মালা জাগো নিউজকে বলেন, পৌরসভার সব বর্জ্য এই ভাগাড়ে ফেলা হয়। ময়লার দুর্গন্ধে আমরা থাকতে পারি না। মাছির জন্য দিনের বেলাতেও মশারি টাঙিয়ে ভাত খেতে হয়। টাকা দিয়ে জমি কিনে দুর্বিষহ জীবন পার করছি। এই সমস্যা থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।
রাস্তার পাশের এ ময়লার ভাগাড়ে খোলা স্থানে ময়লা ফেলার কারণে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পথচারীরাও। উন্মুক্ত স্থানে ময়লার ভাগাড় থাকায় এখানে প্রায় শতাধিক বেওয়ারিশ কুকুর থাকে। রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় একাধিক পথচারী কুকুরের কামড়ে আহত হয়েছে।

বরগুনা সিভিল সার্জন ডা. মো. ফজলুল হক জাগো নিইজকে বলেন, খোলা স্থানে বর্জ্য ফেলার কারণে রোগ জীবাণু মশা-মাছির মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। খোলা স্থানে ময়লা ফেলার কারণে ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা চর্মরোগ ও পানিবাহিত রোগেও আক্রান্ত হতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খোলা স্থানে হাসপাতাল ও সাধারণ বর্জ্যের সংমিশ্রনে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে ওইসব এলাকার বাসিন্দারা। তাই সাধারণ বর্জ্য ও ক্লিনিক্যাল বর্জ্য আলাদা করে রিসাইক্লিং করতে হবে।
বরগুনা পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ জাগো নিউজকে বলেন, অভিজ্ঞ লোকবল না থাকায় বর্জ্য শোধনাগারটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। যতদিন লোকবল নিয়োগ করা না হবে ততদিন এর সুফল পৌরবাসী পাবে না। খুব শিগগির লোকবল নিয়োগ দিয়ে বর্জ্য শোধনাগারটির কার্যক্রম চালু করা হবে।
এফএ/জেআইএম