খুলনায় নির্বাচনী সহিংসতা বাড়ছে
প্রথম বারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২২ মার্চ। তবে তার আগেই খুলনা জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়েছে নির্বাচনী সহিংসতা। মার্চের শুরু থেকে খুলনার বিভিন্ন ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। শুধু হামলাই নয়, চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের লড়াইও। এদিকে হামলা আর মামলার ভয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথাও চিন্তা করছেন বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী অধ্যুষিত খুলনা জেলায় সংর্ঘষের রাজনীতি শুরু হয়। প্রতিপক্ষকে দমন করতে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকেই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
গত শনিবার জেলার বটিয়াঘাট উপজেলার ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বটিয়াঘাটা উপজেলার ৬নং বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম হাসান (৪৮) ও তার সমর্থক মিরাজুল তালুকদারকে (৪০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষরা। তাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, শনিবার রাত ৮ টার দিকে ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের কেসমত শোলাকুড়ো এলাকায় গণসংযোগকালে প্রতিপক্ষের লোকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম হাসান ও তার সমর্থক মিরাজুল তালুকদার গুরুতর জখম হয়। তারা দু’জনই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। একই উপজেলার খারাবাদ বাইনতলা এলাকায় বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী খাইরুল ইসলাম জনি ও তার সমর্থকদের উপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন। এই ঘটনায় ১০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন খায়রুল ইসলাম। তবে এই মামলায় কেউ গ্রেফতার হয়নি।
একই দিনে তেরখাদার মধুপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী কামাল হোসেনের সমর্থক কামরুলকে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। এই ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। আহত কামরুলকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত শুক্রবার রূপসা উপজেলায় এক চেয়ারম্যান প্রার্থী বাপ্পীকে কুপিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা।
এছাড়া গত রোববার তেরখাদা উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ওহিদুজ্জামানের হামলায় আহত হন চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন। এই ঘটনায় চিকিৎসকরা হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন। ফলে খুলনায় রোগীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী মাঠ থেকে সরিয়ে দিয়ে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চাইছে। তারা হামলা মামলা করে বিরোধী নেতাকর্মীদের বাড়ি ছাড়া করার চেষ্টাও করছে। তবে জনগণ এখন অনেক সচেতন। ফলে ক্ষমতাসীনদের মনোবাসনা পূর্ণ হবে না।
খুলনা জেলা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিভিন্ন এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পুলিশ একেবারেই হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই। সন্ত্রাসী ও চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে চলেছে।
আলমগীর হান্নান/এসএস/এমএস