ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

মুক্তিযোদ্ধার সমাধির পাশে টয়লেট

প্রকাশিত: ০৪:৪৪ এএম, ০৬ মার্চ ২০১৬

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি অর্থায়নে টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে এক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধির পাশে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

অনেকে মন্তব্য করেন মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মান করতে কবরের পাশে টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। টয়লেট নির্মাণ করায় মুক্তিযোদ্ধার অসহায় পরিবারটি এখন কবরটিই সরিয়ে নিতে আকুল আবেদন জানিয়েছে।

জানা গেছে, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তালিকাভুক্ত ১১ শহীদের একজন মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবু। তাঁর বাড়ি জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চামটাহাট এলাকার কৈটারী গ্রামে। তাঁর বাবা প্রয়াত আব্দুর রেজ্জাক ও মা রোকেয়া বেগম। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন হাবু। দশম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর হাতীবান্ধার টংভাঙ্গা এলাকায় সম্মুখযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হন হাবু ও তা সঙ্গী আরও এক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। তখন এক রাজাকার তাদের ধরে রশি দিয়ে গাড়ির সঙ্গে বেঁধে কয়েকবার ঘুরিয়ে শেষ পর্যন্ত তাদের সেখানে চাকায় পিষ্ট করে হত্যা করেন। পরে একটি পরিত্যক্ত কুয়ায় মরদেহ দুইটি ফেলে দেয়া হয়। স্বাধীনতার পর সেটিকে কবরে রূপ দেয়া হয়।

সূত্র মতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পিইডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যালয়ে অত্যাধুনিক টয়লেট (ওয়াশরুম) তৈরির দরপত্র আহ্বান করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। গত বছরের ১৩ আগস্ট সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে সেটি নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত টয়লেটটি নির্মাণ শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাঠের উত্তর দিকে একাডেমিক ভবনের অবস্থান। মাঠের পূর্ব ও পশ্চিম অংশে ফাঁকা জায়গা থাকার পরও দক্ষিণ প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে টয়লেটটি। এর ঠিক পেছনেই রয়েছে শহীদ হাবিবুর রহমান হাবুর পাকা কবর। টয়লেট থেকে কবরের দূরত্ব তিন থেকে চার ফুট। কবরটির অবস্থান স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রশিদের বাঁশঝাড়ের ভেতর।

ওই এলাকার বাসিন্দা আক্তার আলী জাগো নিউজকে বলেন, হাতীবান্ধা উপজেলা চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু টয়লেটটি নির্মাণের সময় এসেছিলেন। কিন্তু কেন শহীদের কবরের পাশে নির্মাণ হলো তা আমরা জানি না। তিনি আরও বলেন, নির্মাণ শুরু থেকে আমরা বাধা দিয়েছিলাম তা কাজে আসেনি।

Lalmonirhat-Mukti

শহীদ হাবিবুর রহমান হাবুর একমাত্র ছোট ভাই হামিদুর রহমান গত রোববার ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাইয়ের কবরের পাশে টয়লেট নির্মাণ দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। হামিদুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা সম্পূর্ণ অসম্মানজনকভাবে সমাধি ঘেঁষে টয়লেট তৈরি করেছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। তাই শহীদ ভাইয়ের আত্মার শান্তির জন্য তাঁর দেহাবশেষ সেখান থেকে নিজের এলাকায় নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি।’

হাতীবান্ধা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফজলুল হক বলেন, তাদের বাধা অগ্রাহ্য করে টয়লেটটি স্থাপন করা হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনবি কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী মাজেদুর রহমান ছন্দ জানান, টয়লেটটির স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

হাতীবান্ধা ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুতফা শিরিন বলেন, টয়লেটটি শহীদের কবরের পাশে জেনে আমরা টয়লেটটি ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, জায়গা না থাকায় স্কুল পরিচালনা কমিটির চাপে ওই জায়গায় টয়লেট  নির্মাণ করা হয়েছে।

 রবিউল হাসান/এসএস/এমএস