ঈদবাজার
বগুড়ায় পছন্দের শীর্ষে ‘নায়রা’
বগুড়ায় জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। শহরের মার্কেটগুলোতে দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। ঈদকে কেন্দ্র করে শপিংমলগুলো আকর্ষণীয়ভাবে সাজানো হয়েছে।
ঈদে উচ্চবিত্তরা ছুটছেন রানার প্লাজা, জলেশ্বরীতলার শোরুমগুলোতে, মধ্যবিত্তরা নিউমার্কেট ও আলতাফআলী মার্কেট আর স্বল্প আয়ের ক্রেতারা ছুটছেন হকার্স মার্কেটে।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পোশাকের মধ্যে এবার নারীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে নায়রা। এছাড়াও দেশীয় কাপড়ের পাশাপাশি ভারত কোরিয়ান পাকিস্তানের হরেক নামে বিক্রি হচ্ছে বাহারি পোশাক। লেহেঙ্গা, থ্রি-পিচ, টপস, ওয়ান পিচসহ নানা ধরনের পোশাক। বিক্রি হচ্ছে বাহারি রকমের শাড়ি। জলেশ্বরীতলা অভিজাত বিপণীতে বিক্রি হচ্ছে ছেলেদের পাঞ্চাবী, প্যান্ট-শার্ট, টি শার্ট, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক। তবে অনেক ক্রেতারা বলছেন কাপড়ের দাম বেড়েছে। বিক্রেতারা অনেকে আশা করছেন রোজা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিক্রি আরও বেড়ে যাবে।

আরও পড়ুন: জমে উঠছে ঈদ বাজার
শহরের অভিজাত শপিং এলাকা জলেশ্বরীতলার রোমেনা আফাজ সড়কের ফ্যাশন হাউস ‘ফড়িং’-এ রোববার সকাল থেকে ছিল ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। বেশির ভাগই নারী ক্রেতা। দম ফেলার ফুরসত নেই বিক্রেতাদের। এবারে তরুণীদের ক্রেজ হলো নায়রা ড্রেস। চাঁদের মতো বাঁকা কাটিংয়ের এ পোশাক অনেকটা পশ্চিমা দেশের ফ্যাশন আদলে তৈরি হলেও এটি ভারত থেকে আমদানি করা। প্রকারভেদে এ পোশাকটি সর্বনিম্ন তিন হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকায় মিলছে।
ফড়িংয়ের পাশেই বগুড়ার আরেকটি বড় ফ্যাশন হাউস ‘কাঁশবনে’ মিলছে আরেক ক্রেজ বারবি গাউন, এটি থাইল্যান্ডের তৈরি। আধুনিক এ পোশাকটি এখন উঠতি বয়সের তরুণী থেকে শুরু করে মধ্য বয়সের নারীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। সর্বনিম্ন ছয় হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এ পোশাকটি। একই সঙ্গে তাল মিলিয়ে বগুড়ার আধুনিক বিপণিবিতানগুলোয় এবারে উঠেছে ভারতীয় পোশাক পকেট শাড়ি। যাদের শাড়ি পরার শখ, কিন্তু নিজে শাড়ি পরতে জানে না। তাদের জন্য এ স্পেশাল আয়োজন। পকেট শাড়িটি গায়ে পরিহিত শাড়ির মতো রেডি করা থাকে। এটির সামনে একটি পকেটও রয়েছে। জামার মতো গায়ে দিলেও দেখতে অবিকল শাড়ির মতো দেখায়। ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর বিভিন্ন সিরিয়ালের নারীদের এ পোশাক ব্যবহার করতে দেখা যায়। জানা গেছে, ক্রেতাদের কাছে পকেট শাড়ির চাহিদা বেশি। পাঁচ থেকে ১০ হাজারের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে এ পোশাকটি।
আরও পড়ুন: ঈদ বাজার যেন জনসমুদ্র
দোকানিরা বলছে, অন্যবার পবিত্র রমজানের শুরু থেকে বেচাবিক্রি জমে উঠলেও এবার ১৫ রোজার পরে শুরু হয়েছে ক্রেতাদের জোয়ার। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে জমজমাট কেনাকাটা। তারা জানায় অন্যবারের মতো এবারও নারীদের ঈদের কেনাকাটায় ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে থাইল্যান্ডের থ্রিপিস প্রাধান্য পাচ্ছে। তবে বগুড়ায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পোশাক নায়রা।
নিউ মার্কেটসহ বেশ কিছু বিপণিবিতান, শপিং মল ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব দোকানে ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে দোকানিরা। সাত সকালেই থ্রিপিস কিনতে তরুণীদের ভিড় দেখা যায় নিউ মার্কেটের রনি ক্লথ স্টোরের চারটি শোরুমে।

প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কর্মী রেজা বলেন, এবার জর্জেটের ভারতীয় থ্রিপিস, পাকিস্তানি সুতি থ্রিপিস ও ভারতীয় ওয়াও এর মতো সিল্কের টপস বেশি বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় জর্জেট থ্রিপিস আড়াই হাজার থেকে ১০ হাজার, প্লাজো থ্রিপিস সাড়ে ছয় হাজার থেকে আট হাজার, পাকিস্তানি হাতের কাজ করা থ্রিপিস তিন থেকে সাত হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নিউ মার্কেট ফটকে মেরিনা সড়কে প্রাইডের রূপসী বাংলা ফ্যাশন হাউসেও ক্রেতাদের ভিড় ছিল। এখানে মেয়েদের থ্রিপিস ছাড়াও রয়েছে বাহারি শাড়ির সমাহার। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক ফজলুল হক বলেন, এবার ঈদে ভারতীয় ফ্লোর টাচ, জিপসি ও আনারকলি থ্রিপিস বেশি বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: জমে উঠেছে শিশুদের ঈদ বাজার
একইভাবে নতুন পোশাকে জমে উঠেছে শহরের ইনফিনিটি এক্সপ্রেস, ক্যাটস আই, এক্সটেসি, লুবনান, রঙন, আরটিস্টি, ফড়িং, স্টাইল ট্রেন্ড, ক্যাকটাস, ইজি, চৌকাঠ, শ্রোতীধারা, দরজিবাড়ি, শৈশব, মার্চেন্ট, জেন্টল পার্কের মতো নামিদামি ফ্যাশন হাউসের আউটলেট ও শোরুমগুলো।
কাঁশবন ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ঈদে ক্রেতাদের জন্য ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও চীন থেকে আনা পোশাক রয়েছে। এরমধ্যে বেশি বিক্রি হচ্ছে নায়রা, ফ্লোর টাচ, টপস, শর্ট টপস, লেহেঙ্গা ও থ্রিপিস। ভারতীয় জর্জেটের থ্রিপিস দেড় হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা, পাকিস্তানি সুতি থ্রিপিস দেড় হাজার থেকে চার হাজার, লেহেঙ্গা চার থেকে ১৪ হাজার, টপস এক থেকে চার হাজার, জামদানি শাড়ি পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। শিশুদের পোশাক ৮৫০ থেকে পাঁচ হাজার ১০০ এবং ছেলেদের পাঞ্জাবি এক হাজার ৫০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকায় কেনা যাবে।

এদিকে ফ্যাশন হাউস ও তৈরি পোশাকের দোকানে ভিড় থাকলেও এবার ছিট কাপড়ের দোকানগুলোর চিত্র কিছুটা ভিন্ন। ক্রেতা অপেক্ষাকৃত কম। এর আগের বছরগুলোয় ১৫ রমজানের পর দর্জির দোকানে অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হলেও এবার এখনো অর্ডার নেওয়া হচ্ছে।
বগুড়া জেলা দর্জি দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বেল্লাল হোসেন বলেন, এখনকার দিনে তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী ক্রেতাই ঝুঁকেছেন রেডিমেড পোশাকের দিকে।
দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের নিউ মার্কেটে যারা ঈদের কেনাকাটা করতে আসে তাদের একটি বড় অংশই গ্রামের বাসিন্দা। ফসলের কেনাবেচার ওপর তাদের কেনাকাটা নির্ভর করে। কিন্তু এবার রমজানের শুরুতে ধান উঠলেও দাম কম হওয়ায় সাধ্যানুযায়ী কেনাকাটা করতে পারছে না তারা। তাদের অনেকে হয়তো বগুড়া শহরের পরিবর্তে উপজেলার মার্কেটগুলোয় যাচ্ছে। তবে এত কিছুর পরও দোকানিদের আশা শেষ মুহূর্তে কৃষক পরিবার শহরে মার্কেটমুখী হবে।
‘ড্রেস হাউসের’ মালিক ফেরদৌস জামান ফিরোজ জানান, গত ঈদ মৌসুমে এ সময়ে তিনি তার দোকানে প্রতিদিন
আরএইচ/এএসএম