টিসিবির কার্ড গায়েব
স্লিপে পছন্দের ব্যক্তিকে পণ্য দিচ্ছেন কাউন্সিলর
এক বছর আগে প্রথমবার টিসিবি পণ্য তোলার সময় ডিলার কার্ড নিয়ে যান। তারপর আর মাল পাইনি। কাউন্সিলরের লোকজন স্লিপ নিয়ে এখন টিসিবির পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন। বার বার ধর্না দিয়েও কার্ড-স্লিপ কোনোটাই পাচ্ছি না।
এ অভিযোগ নড়াইল পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের টিসিবি কার্ডধারী গৃহিনী নিপা বেগমের। একই ওয়ার্ডের হাফিজুর রহমান (৬০), জামান শেখ (৫০), মিজানুর রহমান (৫০), ফিরোজা বেগম ও মরিয়ম বেগম হারানো কার্ডের জন্য কাউন্সিলরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
এ বিষয়ে ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আনিচুর রহমান বলেন, আমার ওয়ার্ডে ১৫৭টি কার্ড ডিসি অফিস থেকে হারিয়ে গেছে। যার কারণে স্লিপের মাধ্যমে তাদের টিসিবি পণ্য দেওয়া হচ্ছে। তবে অধিকাংশ মানুষই পণ্য পাচ্ছেন। কিছু সমস্যা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: টিসিবির কার্ড জিম্মি করে টাকা নেন ইউপি সদস্য
হারিয়ে যাওয়া কার্ডের তালিকা পৌরসভায় রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুঁজলে হয়তো পাওয়া যাবে। কিন্তু সময়ের অভাবে হয়ে উঠছে না।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে আমি স্লিপ দিচ্ছি না। এখন ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর ইপি রাণী বিশ্বাস স্লিপ দিচ্ছেন।
জানতে চাইলে ইপি রাণী বলেন, কাউন্সিলর আনিচুর রহমান কাকে কিভাবে কার্ড দিয়েছেন সেটি জানি না। আমি কাওকে কোনো কার্ড দেইনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিসিবির এক ডিলার বলেন, পণ্য দেবার পর স্থানীয় কাউন্সিলর বা ইউনিয়ন মেম্বরকে কার্ড-স্লিপ দিয়ে দেই। যদি কখনও কাউন্সিলর বা মেম্বর কার্ড বুঝে না নেন তাহলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে কার্ড ফেরত দেই। মেম্বর-কাউন্সিলররাই তাদের অপছন্দের ব্যক্তিদের কার্ড আউট করে পছন্দের লোকদের স্লিপ দিয়ে থাকেন। কখনও কখনও এক ব্যক্তি ১০-১৫টি স্লিপ নিয়ে পণ্য নিতে আসেন।
নড়াইল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মলয় কুণ্ডু বলেন, নিম্ন-আয়ের কার্ডধারী অনেকে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন তারা টিসিবি পণ্য পাচ্ছেন না। তাদের কার্ড গায়েব হয়ে গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রকৃত কার্ডধারীদের টিসিবি পণ্য দেওয়ার দাবি জানাই।
এ বিষয়ে নড়াইল পৌর মেয়র আনজুমান আরা বলেন, টিসিবির তালিকাভুক্ত কিছু ভোক্তার কার্ড হারিয়ে যাওয়ার কথা শুনেছি। এ বিষয়ে কাউন্সিলররা আমাকে জানিয়েছেন। যাদের মূলকার্ড পাওয়া যাচ্ছে না তাদের সবাইকে চিহ্নিত করতে না পারলেও পর্যায়ক্রমে ওই ওয়ার্ডের নিম্ন-আয়ের সবাইকে স্লিপের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ফকরুল ইসলাম বলেছেন, জেলায় তালিকাভুক্ত ৪৫ হাজার ৫৯১টি কার্ডের সবাই টিসিবি পণ্য পাবেন। নড়াইল পৌরসভায় কোনো কোনো ওয়ার্ডে মৌখিকভাবে কিছু অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।
হাফিজুল নিলু/আরএইচ/এএসএম