চিকন ধানের বাজার
নওগাঁয় সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণে কমেছে ৩০০ টাকা
নওগাঁয় সপ্তাহের ব্যবধানে চিকন ধানের দাম কমেছে মণপ্রতি ৩০০ টাকা। তবে অন্যান্য ধানের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। ধানের দাম কমায় লোকসানের আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় এক লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যা থেকে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ ৫৪ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল। এটি থেকে প্রায় ৮ লাখ ৩৬ হাজার ২৬০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে।
ধারদেনা করে এ মৌসুমে কৃষকরা ইরি-বোরো ধানের আবাদ করেছেন। কাটা-মাড়াইয়ের পর ঋণ পরিশোধের জন্য হাটে নিয়ে আসছেন ধান। এ বছর সার, তেল, শ্রমিক ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় ফসল উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। কিন্তু ধানের দাম কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। কৃষকদের অভিযোগ- ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছে। টাকার প্রয়োজনে লোকসান করে বাধ্য হয়ে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। খোলা বাজারে এক হাজার ৫০০ টাকা মণ ধানের দাম থাকলে লাভবান হবেন চাষিরা। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ ধান কাটা-মাড়াই শেষ। তবে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য দিতে এবং আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরকারকে আরও বেশি পরিমাণ ধান কেনার দাবি চাষিদের।
আরও পড়ুন: আমন ধানের দাম নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা
শুক্রবার (৫ মে) জেলার মহাদেবপুর উপজেলার সরস্বতি পুর ছিল হাটবার। সপ্তাহে শুক্র ও মঙ্গল হাট বার। ভোরের আলো ফুটতে ভ্যান, ভটভটি ও ব্যাটারিচালিত চার্জার করে কৃষকরা তাদের ধান বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন হাটে। এদিন হাটে চিকন (আতব কোয়ালিটি) ৯০ জাতের ধান বিক্রি হয় ১১০০-১২০০ টাকা মণ। যা গত এক সপ্তাহ আগে ছিল এক ৫০০ টাকা মন। একই কোয়ালিটি গোল্ডেন ও সুফলতা জাতের ধান ১১০০ টাকা মণ। যা গত সপ্তাহে ছিল ১৪০০ টাকা মণ। এছাড়া সরুজাতের ধান শুকনা জিরাশাইল বিক্রি হয় ১২০০-১২৩০ টাকা এবং কাটারি ১১৫০-১২০০ টাকা। এ ধানের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। তবে ভিজা ধান বিক্রি হয় ১০০০-১০৫০ টাকা মন।

উপজেলার চকরাজা গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, গত সপ্তাহে ৯০ জাতের ধান বিক্রি হয়েছে ১৪০০ টাকা মণ। সপ্তাহ পরে ওই ধানই এখন ১১০০ টাকা দাম বলছে ব্যবসায়ীরা। মণপ্রতি ৩০০ টাকা নাই। এ দুঃখের কথা বললো কোথায়। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে ধানের দামের এ অবস্থা।
একই গ্রামের কৃষক খাজামুদ্দিন বলেন, ধানের আবাদ করে ঋণগ্রস্তের মধ্যে পড়েছি। কীটনাশকের দোকান ও ধান কাটা শ্রমিকরা টাকা চাচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হওয়ায় কাটা ধান ভিজে গেছে। হালকা ভেজা ধান হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়। জিরাশাইল ১০৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি করা হয়। বিক্রি না করে তো উপায় নাই। টাকার দরকার। যে দামেই হোক বিক্রি করতে হবে। বর্তমান বাজারে লোকসান করে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে শুকনা এ ধানই বিক্রি হয় এক হাজার ২২০ টাকা মণ।
স্থানীয় ধান ব্যবসায়ী শাহজাহান আলী বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে চিকন জাতের ধান মণপ্রতি ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কমলেও সরু ধানের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। হাটে ধানের সরবরাহ বাড়ছে। বাহিরের ব্যবসায়ীরা ধান না কেনায় কমেছে দাম।
স্থানীয় ধান ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বলেন, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব ধান চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও ঢাকায় চলে যায়। বর্তমানে হাটে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার মন ধান বেচাকেনা হচ্ছে। দিন যত যাবে ধানের সরবরাহ তত বাড়বে। তবে মৌসুমে ধানের সরবরাহ বেড়ে হয় প্রায় ৫ হাজার মণ। যা টাকার অঙ্গে দাঁড়ায় কোটি টাকা।
আব্বাস আলী/আরএইচ/এমএস