ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আন্তঃনগর যমুনা

নামেই খাবার গাড়ি, যেখানে চলে সেবার নামে টুল ব্যবসা

জেলা প্রতিনিধি | জামালপুর | প্রকাশিত: ০৬:৩৩ পিএম, ০৭ মে ২০২৩

কালোবাজারি রোধসহ যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ স্লোগানে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। কিন্তু কোনো উদ্যোগেই যেন থামানো যাচ্ছে না তারাকান্দি-ঢাকাগামী আন্তঃনগর যমুনা এক্সপ্রেসের খাবার গাড়ির দায়িত্বরত ক্যাটারার সদস্যদের।

অভিযোগ রয়েছে, রেলের অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে বিনা টিকিটে ভ্রমণসহ যাত্রীদের প্রকাশ্যে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন ক্যাটারার্সরা। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

শুক্রবার (৫ মে) দিনগত রাতে সরেজমিনে ট্রেনে ভ্রমণ করতে গিয়ে দেখা যায়, খাবার গাড়িতে তিনটি কাঠের বাক্স রাখা হয়েছে। সেখানে রয়েছে কয়েকটি প্লাস্টিকের টুল এবং রঙের খালি বালতি। এসব টুল-বালটি ট্রেনের খাবার গাড়িতে অস্থায়ী আসন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কয়েকজন ক্যাটারার্স সদস্য ডেকে ডেকে যাত্রীদের এসব আসনে বসতে দিচ্ছেন এবং সিটপ্রতি একেকজনের কাছ থেকে ২৫০-৩০০ টাকা নিচ্ছেন।

এছাড়া যারা বিনা টিকিটের যাত্রী তাদের বিমানবন্দরসহ অন্য স্টেশন পার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। যারা টাকা দিতে পারছেন তারাই কেবল খাবার গাড়িতে থাকছেন। আর যারা দিতে পারছেন না তাদের সেখানে দাঁড়িয়েও থাকতে দিচ্ছেন না ক্যাটারার্সরা। এ নিয়ে অনেকের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটিও হতে দেখা যায়।

রাত ২টা ২০ মিনিটে সরিষাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন থেকে সাদ্দাম ও সাইফুল নামে দুই যাত্রী ঢাকা বিমানবন্দরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যমুনা এক্সপ্রেসে ওঠেন। কথা হয় তাদের সঙ্গে। তারা বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই টিকিটের সংকট। বারবার স্টেশনে এসে ঘুরে যান তারা। আজ তাদের ঢাকা যেতেই হবে। এখন ঢাকা যেতে কমপক্ষে ছয়-সাত ঘণ্টা সময় লাগবে। তাই একরকম বাধ্য হয়েই খাবার গাড়িতে উঠে পড়েছেন তারা। সেখানে বসতে চাওয়ায় তাদের কাছে টাকা দাবি করা হচ্ছে। গাড়িতে রাখা কাঠের ওপর বসতে তাদের কাছে ৩০০ টাকা চাচ্ছেন ক্যাটারার সদস্যরা। নতুবা তাদের সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেবেন না তারা। ক্যাটারার্সরা জানান, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে তাদের লোক আছে। টাকা দিলে বিনা বাধায় স্টেশন পার করে দেওয়া হবে।

দেখা গেছে, গাড়ি রাত ৩টায় জামালপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশনে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে পুরো খাবার গাড়ি ভরে যায়। কিছুক্ষণ পর এক পুলিশ সদস্য ওয়্যারলেস হাতে কয়েকজন যাত্রী সঙ্গে নিয়ে ট্রেনে ওঠেন। পরে খাবার গাড়িতে দায়িত্ব পালন করা ওইসব সদস্যদের কাছে যাত্রীদের বুঝিয়ে দিয়ে চলে যান। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে তার পিছু নিলেও তাকে আর পাওয়া যায়নি।

শেরপুর থেকে পরিবার নিয়ে ঢাকার কমলাপুর যাচ্ছিলেন আব্দুল খালেক ও তার স্ত্রী। জামালপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে তারা উঠেছেন। কথা হয় তাদের সঙ্গে। খালেক জাগো নিউজকে বলেন, তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে টিকিট কাটতে পারেননি। পরে একজন সাদা পোশাকের টিটি এসে বলেন, তাদের টিকিট কাটা লাগবে না। তারা যদি জনপ্রতি ৩০০ টাকা দেন তবে তাদের বসতে দেওয়াসহ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পার করে দেওয়া হবে। পরে তাদের খাবার গাড়িতে ক্যাটারার্সদের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে চলে যান ওই টিটি।

এদিকে, নাম-পরিচয় জানতে চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মেসার্স নিউ টিপটপ ক্যাটারার্সের সদস্য আনোয়ার হোসেন। তার কাছে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এটা তাদের বগি। এখানে তারা যা খুশি তাই করবেন। তবে এই টাকা তারা একা খান না।

এ বিষয়ে গাড়িতে দায়িত্বরত রাশেদ নামে এক পুলিশ সদস্যের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, তারা আছেন রেলে ভ্রমণরত যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তায়। ক্যাটারার্স সদস্যরা কী করছেন এটি তার জানা নেই। তবে তাদের ইনচার্জ এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে কয়েকটি বগি ঘুরেও মেসার্স নিউ টিপটপ ক্যাটারার্সের ইনচার্জকে খুঁজে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

মো. নাসিম উদ্দিন/এমআরআর/এএসএম