শেরপুর
অনলাইন কজলিস্টে মামলার তথ্য এখন হাতের মুঠোয়
ফাইল ছবি
বিচার বিভাগে এবার অনলাইন কজলিস্ট বা ই-কার্যতালিকা ব্যবস্থা চালুর বদৌলতে শেরপুরের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির সব মামলার তথ্য এখন আদালতে না গিয়ে ঘরে বসেই বা দেশ-বিদেশের যে কোনো জায়গা থেকে জানা যাচ্ছে। এই ঠিকানায় causelist.judiciary.gov.bd বা ‘আমার আদালত’ অ্যাপ থেকে জানা যাচ্ছে বিচারিক আদালতের ওইসব তথ্য। ফলে বিচারপ্রার্থী, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবার মামলার তথ্য জানার সুযোগ এখন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে।
জানা যায়, সরকার বিচারপ্রার্থী মানুষের সুবিধার্থে সময়োপযোগী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তারই আওতায় সরকারের অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রামের সহযোগিতায় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অর্থায়নে ২০২২ সালের জুন মাস থেকে সাতটি জেলায় জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলোতে অনলাইন কজলিস্ট বা ই-কার্যতালিকা ব্যবস্থা চালু করা হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর একজন করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে ঢাকায় বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ওই প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর থেকে প্রথমভাগেই সাত জেলার মধ্যে শেরপুরেও ই-কার্যতালিকা চালু করা হয়েছে।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাসান ভূঁইয়া প্রতিদিন মনিটরিং করে শেরপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অধীন সব আদালতের বিচারিক (ট্রায়াল) মামলার পাশাপাশি প্রত্যেক আমলি আদালতগুলোর মামলার তথ্য অনলাইন কজলিস্টে ইনপুট করছেন। আর এর মধ্য দিয়ে শেরপুর বিচার বিভাগের সব আদালতের কার্যতালিকা ঘরে বসেই জানতে পারছেন সংশ্লিষ্টরা। এরজন্য প্রথমে এই ঠিকানায় causelist.judiciary.gov.bd বা ‘আমার আদালত’ অ্যাপে ঢুকতে হয়। সেখানে ‘মামলার কার্যতালিকা’ অপশনে ক্লিক করতে হয়। এরপর বিভাগ, জেলা, আদালত ও তারিখ নির্বাচন করতে হবে।
এছাড়া ‘মামলা অনুসন্ধান করুন’ বাটনে ক্লিক করে বিভাগ, জেলা আদালতের নাম এবং মামলার নম্বর ও সাল দিয়ে অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করলে মামলার বিস্তারিত তথ্যও জানা যাচ্ছে। তাছাড়া ‘চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, শেরপুর’ ফেসবুক পেজেও প্রতিদিনের মামলার তথ্য উল্লিখিত লিংকসহ নিয়মিত আপডেট দেওয়া হচ্ছে।
গত রোববার (১১ জুন) শেরপুর জুডিসিয়াল আদালতসমূহের মামলার কার্যতালিকায় দেখা যায়, ওইদিন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) এস এম হুমায়ুন কবিরের আদালতে চার্জ শুনানির জন্য ১৪টি ও সাক্ষীর জন্য ১৫টি মামলার তারিখ ধার্য ছিল। অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম) মো. সালামত উল্লাহর আদালতে চার্জ শুনানির জন্য একটি, সাক্ষীর জন্য ১৬টি, সাফাই সাক্ষীর জন্য একটি ও আপিল শুনানির জন্য দুটি মামলার তারিখ ধার্য ছিল।
একইভাবে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-(প্রথম আদালত) ফারিন ফারজানার আদালতে চার্জ শুনানির জন্য সাতটি ও সাক্ষীর জন্য ৯টি মামলা, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (দ্বিতীয় আদালত) মোহাম্মদ আল মামুনের আদালতে চার্জ শুনানির জন্য দুটি ও সাক্ষীর জন্য ১৮টি মামলা, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (তৃতীয় আদালত) মো. হাসান ভূঁইয়ার আদালতে চার্জ শুনানির জন্য একটি, সাক্ষীর জন্য ১৫টি ও রায় প্রচারের জন্য একটি মামলা, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (প্রথম আদালত) শরিফুল ইসলাম খানের আদালতে চার্জ শুনানির জন্য সাতটি ও সাক্ষীর জন্য ১২টি, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (দ্বিতীয় আদালত) মো. মেহেদী হাসানের আদালতে চার্জ শুনানির জন্য চারটি, সাক্ষীর জন্য ১২টি ও যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য একটি মামলা, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (তৃতীয় ও চতুর্থ আদালত) নূর-ই-জাহিদের আদালতে যথাক্রমে চার্জ শুনানির জন্য তিনটি ও সাক্ষীর জন্য ১০টি মামলা এবং চার্জ শুনানির জন্য চারটি, সাক্ষীর জন্য ১০টি, রায় প্রচারের জন্য একটি মামলার তারিখ ধার্য ছিল।
এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ দমনের (দ্রুত বিচার) দায়িত্বে থাকা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারিন ফারজানার আদালতে প্রতিবেদনের জন্য দুটি ও সাক্ষীর জন্য একটি মামলা এবং বন আদালতের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল ইসলাম খানের আদালতে প্রতিবেদনের জন্য একটি ও সাক্ষীর জন্য দুটি মামলার তারিখ ধার্য ছিল।
সিজেএম কোর্টের সিনিয়র এপিপি মো. মাজদুল হক মিনু বলেন, শেরপুর ম্যাজিস্ট্রেসির সব মামলার তথ্য এখন কোনো বিচারপ্রার্থী (বাদী/আসামি) আদালতে না এসে ঘরে বসেই অথবা দেশ-বিদেশের যেকোনো জায়গা থেকেই জানতে পেরে খুবই উপকৃত হচ্ছেন।
রোববার দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণে গেলে কথা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত বিচারপ্রার্থী লোকজনের সঙ্গে। ওইদিন এসিজেএম আদালতে আসা নালিতাবাড়ীর বিচারপ্রার্থী নূরনবী মিলন জানান, সম্প্রতি চালু হওয়া অনলাইন কজলিস্টের সুবাদে ঘরে বসেই নিজের মোবাইলফোনের মাধ্যমে আমার মামলার তারিখসহ পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারছি। এতে আমাদের অনেক সুবিধা হচ্ছে। মামলার তারিখ ও অবস্থা সম্পর্কে জানতে নানা দুর্ভোগেরও অবসান হয়েছে।
একই কথা জানান, পৃথক আদালতে আসা শেরপুর সদরের বিচারপ্রার্থী শাপলা আক্তার ও ছামিদুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম কে মুরাদুজ্জামান বলেন, অনলাইন কজলিস্টের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী মানুষের একটি বড় অংশ ঘরে বসেই স্মার্টফোনের মাধ্যমে তার মামলার তারিখ ও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে সহজেই জানতে পারছেন। এতে তাদের মামলার তারিখ সংগ্রহকে কেন্দ্র করে এখন আর নানা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না।
ইমরান হাসান রাব্বী/এমআরআর/এএসএম