ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারাতে বসেছে শিলপাটা

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী | মাদারীপুর | প্রকাশিত: ০৭:৪১ পিএম, ১৫ জুন ২০২৩

‘শিলপাটা কোটাবেন, শিলপাটা কোটাবেন...’ এই হাঁক-ডাক এখন আর তেমন শোনা যায় না। এক সময় ঘরে ঘরে শিলপাটার ব্যবহার থাকলেও শহর এখন ব্লেন্ডার মেশিনের দখলে। আধুনিকতার ছোঁয়া ও কাজের সুবিধার্থে ঘরে ঘরে স্থান পেয়েছে ব্লেন্ডার মেশিন। তাই শিলপাটা খোদাইয়ের কাজও অনেক কমে গেছে। তারপরও যে ক’জনের ঘরে এই শিলপাটা আছে তারা মাঝে মাঝে খোদাই করান। আর সেই খোদাইয়ের কাজ করে যে অর্থ আয় হয় তা দিয়েই চলে আতিয়ার রহমান কাজীর সংসার।

আতিয়ার রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোপালগঞ্জ জেলার মোকসেদপুর উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের বন্নী গ্রামের রজব আলী কাজীর ছেলে আতিয়ার রহমান কাজী (৭০)। ৫ মেয়ে ও দুই ছেলে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলে ছোট। তাই তিনিই সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এক সময় রংমিস্ত্রির কাজ করতেন। পরে অসুস্থতা ও বয়সের কারণে সেই কাজ আর করতে পারেন না। তাই গত ২০ বছর ধরে শিলপাটা খোদাইয়ের কাজ করছেন।

নিজ জেলায় তেমন কাজ না পাওয়ায় ২০ বছর ধরেই মাদারীপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে শিলপাটা খোদাই করছেন। কিন্তু আগের মতো এখন আর কেউ শিলপাটা খোদাই করান না। সারাদিন ঘুরে তিন থেকে চারটির মতো কাজ পান। ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। এই টাকা দিয়েই চালাতে হয় পুরো সংসার। তাই নিজে প্রায় সময়ই না খেয়ে থাকেন। দুপুরে অনেকে মায়া করে খেতে দেন। রাতে কখনো কখনো হোটেলে খান, আবার কখনো না খেয়ে থাকেন। সকালেও একই অবস্থা।

বাসা ভাড়া করার মতো টাকা না থাকায় রাতে শহরের ইউআই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বারান্দায় ঘুমান তিনি। এভাবেই ১৫-২০ দিন হলে যা টাকা পান তা নিয়ে গোপালগঞ্জে নিজ বাড়িতে যান। সেই টাকায় চলে তাদের সংসার।

আতিয়ার রহমান কাজী বলেন, আগে শিলপাটা খোদাইয়ে কাজের পাশাপাশি ছাতা, সুটকেস মেরামতের কাজও করতাম। সিলভারের পাতিলের কান্দা (মুখের অংশ) খুলে গেলে তাও লাগিয়ে দিতাম। এখন আর এসব কাজ কেউ করায় না। তাই প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে ৩-৪টা শিলপাটা খোদাইয়ের কাজ পাই। তাই করে থাকি। তবে এক সময় এই কাজও আর কেউ করাবে না। তখন আমাদের কী অবস্থা হবে জানি না।

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারাতে বসেছে শিলপাটা

শহরের শকুনি এলাকার শফিক হোসেন বলেন, আজ প্রায় ১০ বছর ধরে এই বৃদ্ধ চাচাকে এভাবেই ঘুরে ঘুরে শিলপাটা খোদাইয়ের কাজ করতে দেখছি। তিনি সারাদিন রোদের মধ্যে ঘুরেও এখন আর তেমন কাজ পান না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিলপাটা এখন হারাতে বসেছে। তবে এখনো অনেক পরিবার শিলপাটায় মসলা পিষে থাকে ও নানান ধরনের ভর্তা করে। তবে কালের বিবর্তনে এক সময় এই শিলপাটাও হারিয়ে যাবে। তখন নতুন প্রজন্ম জাদুঘরে গিয়ে শিলপাটা দেখবে।

মাদারীপুরের ইতিহাস গবেষক ও সাংবাদিক সুবল বিশ্বাস বলেন, এক সময় শিলপাটা ছাড়া রান্নার মসলা বাটা অসম্ভব ছিল। এখন সেই প্রয়োজনীয় শিলপাটা কালের স্রোতে হারাতে বসেছে। এটি আমাদের বাংলার ঐহিত্য।

এফএ/জেআইএম