যশোরে কোরবানির জন্য প্রস্তুত ৩১ হাজার গরু, অর্ধলাখ ছাগল
ঈদুল আজহাকে ঘিরে কোরবানির বাজার ধরতে প্রস্তুত যশোরের খামারিরা। কোরবানি উপলক্ষে জেলার প্রায় ১০ হাজার খামারি ৮০ হাজারেরও বেশি গরু-ছাগল বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে ৩১ হাজার গরু ও অর্ধলাখ ছাগল রয়েছে।
খামারি ছাড়াও ব্যক্তিপর্যায়েও অনেকে কোরবানির জন্য গরু-ছাগল প্রস্তুত করেছেন। সবমিলিয়ে এ সংখ্যা ৯০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ কারণে জেলায় উদ্বৃত্ত পশু দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলার ৯ হাজার ১৩১ জন খামারির খামারে মোট ৩১ হাজার ২১টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চৌগাছায় দুই হাজার ৪৮৩টি খামারে গরু রয়েছে ৮ হাজার ৯৭৫টি। সবচেয়ে কম অভয়নগরে ৫৯৩টি খামারে গরুর সংখ্যা এক হাজার ৫৭৪টি। এছাড়া যশোর সদর উপজেলায় এক হাজার ৪১টি খামারে রয়েছে তিন হাজার ৪৪৪টি, মণিরামপুরে দুই হাজার ৯টি খামারে চার হাজার ৯৬৪, ঝিকরগাছায় ৮৮১টি খামারে তিন হাজার ৭৪৭, শার্শায় ৯৩৮টি খামারে দুই হাজার ৯১০, কেশবপুরে ৫৪৩টি খামারে তিন হাজার ৪৬২ এবং বাঘারপাড়ায় ৬৪৩টি খামারে গরু রয়েছে মোট এক হাজার ৯৪৫টি। জেলায় কোরবানিতে গরুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৯ হাজার। সে হিসাব অনুযায়ী, যশোরে চাহিদার তুলনায় দুই হাজারের বেশি গরু উদ্বৃত্ত রয়েছে।
একইসঙ্গে খামারিদের খামারে ছাগল ও ভেড়া রয়েছে ৪৯ হাজার ৭৫টি। তবে ব্যক্তিপর্যায়ে একটি, দুটি ছাগলের সংখ্যা এখনো হালনাগাদ করা হচ্ছে। তালিকা প্রতিনিয়ত হালনাগাদ হওয়ায় ঈদের আগে এ সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজারে গিয়ে দাঁড়াবে। জেলায় ছাগলের চাহিদাও প্রায় ৬০ হাজার।
যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া এলাকার খামারি কামাল হোসেন জানান, তার খামারে ২২টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি গরু এবার কোরবানির ঈদের হাটে তুলবেন। করোনাসহ নানা কারণে গতবছর চাহিদা অনুযায়ী পশু বিক্রি করতে পারেননি। এবছর করোনা নেই। এ কারণে এবার ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তিনি।

মণিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া গ্রামের খামারি আফজাল হোসেন বলেন, এবছর গবাদিপশুর খাদ্যের দাম বেড়েছে। ফলে গরু লালন-পালনে ব্যয়ও বেড়েছে। তাই গরুর দামও বাড়তি। তবে চোরাই পথে ভারতীয় গরু না এলে ভালো দামে গরু বিক্রি হবে।
ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসাড়া ইউনিয়নের বেজিয়াতলা গ্রামের আবদুস সোবহান জানান, তার খামারে ২৪টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ১০-১২টি এবারের কোরবানিতে বিক্রি করবেন। তার খামারে সব দেশি জাতের গরু। যেগুলো ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রির আশা করছেন তিনি।
বাঘারপাড়া উপজেলার রাধানগর গ্রামের বাশুয়াড়ী গ্রামের তানভীর হোসেন খামারে এবার ১৪টি গরু লালন-পালন করছেন। প্রতিটি গরু তিনি দেড় থেকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন।

খামারিরা বলছেন, করোনার পর বেশিরভাগ খামারি নিজেদের গচ্ছিত পুঁজি দিয়ে খামারে কোরবানির জন্য পশু পালন করেছেন। আবার অনেক খামারি এনজিও বা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েও পশু পালন করেছেন। পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পশু লালন-পালনে ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এখন সে অনুযায়ী দাম না পেলে খামারিদের পথে বসতে হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানিয়েছে, যশোরের আট উপজেলায় মোট ২৪টি পশুহাট থাকছে। কোরবানি উপলক্ষে হাটগুলোতে মোট ২৪টি মেডিকেল টিম কাজ করবে। একইসঙ্গে এবছর অনলাইনে পশু কেনাবেচার সুযোগের পাশাপাশি পশুহাটে থাকছে ক্যাশলেস সুবিধা। ফলে, টাকা ছিনতাই, জাল টাকার আদান-প্রদান এবং টাকা বহন করার ঝামেলা পোহাতে হবে না ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। ডাচ বাংলা ব্যাংক, ব্র্যাংক ব্যাংক, ইসলামি ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের গ্রাহকরা এই ক্যাশলেস সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।

যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রাশেদুল হক বলেন, কোরবানি উপলক্ষে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি হাতে নিয়েছি। এবছর দেশি পশুতে কোরবানি হবে। বাইরে থেকে কোনো পশু আমদানি করা হবে না। যশোরের চাহিদার তুলনায় দুই হাজার গরু উদ্বৃত্ত রয়েছে। আর কী পরিমাণ ছাগল খামার ও বাড়িতে রয়েছে তার তালিকা আরও আপডেট করা হচ্ছে। আশা করছি, ছাগলও চাহিদার চেয়ে বেশি থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ‘এবার যশোরে ২৪টি হাট বসবে। সেখানে আমাদের মেডিকেল টিম কাজ করবে। কোনো পশু রোগাক্রান্ত হলে তা শনাক্ত করবে মেডিকেল টিম। একইসঙ্গে হাটে থাকবে ক্যাশলেস ব্যবস্থা। ক্রেতারা চাইলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও পশু কিনতে পারবেন।’
মিলন রহমান/এসআর/জেআইএম