ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা

জেলা প্রতিনিধি | জয়পুরহাট | প্রকাশিত: ১০:০৭ এএম, ১৮ জুন ২০২৩

আসন্ন কোরবানি ঈদের প্রস্তুতি হিসেবে দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জয়পুরহাটের কামাররা।

এসব সরঞ্জাম নতুনভাবে তৈরি এবং পুরোনোগুলোতে শান দিতে ব্যস্ত তারা। ঈদের দিন পর্যন্ত চলবে এ কর্মব্যস্ততা। তবে কয়লা, লোহাসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো লাভ তেমন হয়না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

বছরের অন্য দিনগুলোতে তেমন কাজ না থাকায় অলস সময় কাটালেও কোরবানির সময়টাতে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এ সময় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করতে হয় তাদের। মূলত এসময় তাদের কেনাবেচা বেড়ে যায়। যা দিয়ে সারা বছরের খোরাক জোগাড় করেন কামাররা।

একসময় জমজমাট ছিল কামারপাড়া। ঘুম থেকে উঠলেই শোনা যেত কামারশালার টুং-টাং শব্দ, যা এখন শুধুই স্মৃতি। কারণ তাদের তৈরি তৈজসপত্রের স্থান দখল করেছে বিভিন্ন আধুনিক ওয়ার্কশপে তৈরি হওয়া রেডিমেড দা, বটি, কাস্তেসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র।

আরও পড়ুন: চাহিদার দ্বিগুণ কোরবানির পশু আছে সিংড়ায়

পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা গ্রামের মহিত কর্মকার ও সুব্রত কর্মকার জাগো নিউজকে বলেন, এখন ব্যবসায় মন্দা চলছে, কোরবানি ছাড়া বছরের অন্য মাসগুলোতে আমরা কোনোরকম দিন পার করছি। বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। একারণে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন।

sacrifice2.jpg

একই এলাকার কৃষ্ণ কর্মকার জাগো নিউজকে বলেন, এলাকায় কাজ কম হওয়ায় জীবিকার তাগিদে আমি ঢাকায় গিয়ে কামারের কাজ করতাম। কিন্তু সেখানেও ব্যবসায় মন্দা। ঘরভাড়া ও থাকা-খাওয়া সব মিলিয়ে না পোষানোয় আবারও এলাকায় চলে আসি।

পাঁচবিবি উপজেলার ধরন্জী বাজারের অমল কর্মকার জাগো নিউজকে বলেন, এখানে ছোট্ট একটি জায়গা নিয়ে কর্মকার ব্যবসা চালাই। প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার ও সোমবার দুটি হাট বসে। আগে ইরি ও আমন মৌসুমে এই এলাকায় ধান কাটার জন্য কাস্তে ও আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে পাট কাটার জন্য বড় বড় হাঁসুয়া তৈরির বায়না পেতাম। এখন হাট-বাজারে লোকের তেমন সমাগম নেই। ফলে খুব কষ্টে দিনযাপন করছি।

আরও পড়ুন: ভালোলাগা থেকে শুরু, বিল্লালের খামারে এখন ৪৮ গরু

সদর উপজেলার ভাদসা বাজারের কামার সুব্রত জাগো নিউজকে বলেন, এ পেশায় একজন সহযোগী লাগে। এই সহযোগীর দৈনিক মজুরি দিতে হয় ৩০০ টাকা। দিনে ৩০০ টাকা আয় না হওয়ায় আমার প্রতিবন্ধী ছোট ভাই গোবিন্দকে সঙ্গে নিয়ে কোনোমতে আমার পিতা ভাদু কর্মকারের এ পেশাকে টিকিয়ে রেখেছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিটি দা তৈরিতে প্রকারভেদে মজুরি নেওয়া হচ্ছে ২০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত। চাকু তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। বড় ছুড়ি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা। বটি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে দেড়শ টাকা থেকে আড়াইশ টাকা।

sacrifice2.jpg

দা শান দিতে আসা আনোয়ার, সবুজসহ কয়েকজন ক্রেতারা জাগো নিউজকে বলেন, কয়েক দিন পরেই ঈদ। গরু ও ছাগল জবাই দিতে এবং মাংস কাটতে প্রয়োজন চাকু ও ছুরির, সে কারণে দা, বটি ও ছুরি কিনতে বাজারে এসেছি। তবে গতবছরে এসব জিনিসের যে দাম ছিল তার চেয়ে এবারে দাম খানিকটা বেশি।

পাঁচবিবি বাজারের কামার শিল্পের পাইকার জাগো নিউজকে বলেন, সারাবছরই তারা দা, বটি, চাকু, ছুরি বিক্রি করেন। কিন্তু কোরবানির মৌসুমেই এসব সরঞ্জামের কেনাবেচার ধুম পড়ে। এবারও ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে কয়লা ও লোহার দাম খানিকটা বেড়ে যাওয়ায় কামারদের কাছ থেকে খানিকটা বেশি দামে এসব জিনিসপত্র কিনতে হচ্ছে। যার ফলে কিছুটা বেশি দামে আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন: নওগাঁয় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার পশু বেচাকেনার আশা

বাগজানার কামার ব্যবসায়ী দীপক মহন্ত জাগো নিউজকে বলেন, ৭০০টাকা কেজি দরে দা-কুড়াল, হাঁসুয়া-বটি ২৫০-৩০০ টাকা ও ছুড়ি ১৬০-১৫০ টাকা কেজি দরে প্রকারভেদে বিক্রি হয়।

তিনি আরও বলেন, সব জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। দা, বটি, ছোরা, চাকুর পাশাপাশি মাংস বানানোর কাজের জন্য গাছের গুঁড়ির চাহিদাও বেড়েছে।

জেএস/এমএস