ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

পুকুরের পেটে যাচ্ছে আবাদি জমি

জেলা প্রতিনিধি | শরীয়তপুর | প্রকাশিত: ০৪:৪১ পিএম, ২০ জুন ২০২৩

সরকারি নির্দেশ থাকলেও শরীয়তপুরে প্রতিনিয়ত তিন ফসলি কৃষি জমিকে পরিণত করা হচ্ছে গভীর পুকুর ও বৃহত্তর মৎস্য খামার প্রকল্পে। এতে করে এ জেলায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি জমির পরিমাণ। মৎস্য খামার ব্যবসায়ীরা কৃষকদের ফসলি জমিতে পুকুর খননের লোভনীয় প্রস্তাব দিচ্ছেন। কৃষি জমিতে স্কেভেটর (ভেকু মেশিন) দিয়ে ৮-১০ ফুট গভীর করে জমির চারদিকে বাঁধ দিয়ে পুকুর খননের এই মহোৎসব চলছে বছরের পর বছর।

দিনরাত বিরতিহীন পুকুর খনন করে সেই মাটি সরবারহ করা হচ্ছে জেলার বিভিন্ন ইটভাটায়। এতে একদিকে কৃষকরা না বুঝে হারাচ্ছেন তাদের উর্বর ফসলি জমি। অন্যদিকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন প্রভাবশালী পুকুর ব্যবসায়ীরা।

ফরিদপুর, বরিশাল, চাঁদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ এমনকি ঢাকা থেকে এসে স্থানীয় কিছু ব্যক্তিদের সহযোগিতায় কৃষি জমিতে পুকুর খননের এই উৎসব চলছে। ব্যক্তি মালিকানা জমির পাশাপাশি সরকারের ১নং খতিয়ানভুক্ত জমিও এই পুকুর দস্যুদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

জানা গেছে, জেলার ৬৪টি ইউনিয়নে নদী-নালা খাল-বিল বাদে প্রায় পৌনে দুই লাখ হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে। শ্রেণিভেদে প্রায় সব জমিতেই সারা বছর কোনো না কোনো ধরনের ফসল হয়। কিন্তু কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি এবং উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় প্রতি বিঘা জমি ১২ হাজার টাকার বিনিময়ে ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদে চুক্তি করছেন কৃষকরা। চুক্তির আওতায় তাদের ফসলি জমি পুকুরে পরিণত করা হচ্ছে। জমির সেই মাটি প্রতি গাড়ি (ট্রাক্টর) ১১০০ টাকায় বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রয় করছেন পুকুর ব্যবসায়ীরা।

জেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পুকুর খননের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেলেও ভোজেশ্বর, ডিংগামানিক, ঘড়িষার, বিঝারি, নাওডোবা, সিড্যা, পূর্ব ডামুড্যা, নাগের পাড়া, ছয়গাঁও, দক্ষিণ তারাবুনিয়া, চরকুমারিয়া, মহিষার, রামভদ্রপুর, আরশিনগর ইউপির বিভিন্ন স্থানে পুকুর খননের প্রবণতা বেশি। এরমধ্যে শুধুমাত্র ছয়গাঁও ও দক্ষিণ তারাবুনিয়া ও বিঝারি ইউনিয়নেই প্রায় ২০০টিরও বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে।

ছয়গাঁও ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা রহিম সরদার বলেন, আমাদের লাকার্তার কৃষি জমিগুলো এখন মাছের বাসা। কারণ এক কড়া জমিও খালি নাই। সব মৎস্য খামার করে ফেলেছেন প্রভাবশালীরা। এভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে মাছ উৎপাদন করে কোনো লাভ নেই। সরকারের কাছে আবেদন, যে পর্যন্ত মৎস্য খামার হয়েছে সেখানেই থামানো হোক। ভবিষ্যতে আর কেউ যেন আবাদি জমি নষ্ট করে মৎস্য খামার না করতে পারে সেই লক্ষ্যে কঠোর ভূমিকা নিক সরকার।

jagonews24

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না, ভূমি মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনা থাকলেও তা অমান্য করে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। একারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশকিছু জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো, ইরি ও আমন ধান না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি পুকুর খনন থেকে বিরত থাকার জন্য। তাদেরকে বলছি একসময় আপনাদের বিরাট খদ্যঘাটতি হবে।

জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে একইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। আমরা এরইমধ্যে ১০ হাজার হেক্টরের মতো অনাবাদি জমিতে আবাদের ব্যবস্থা করে দিয়েছি কৃষকদের। কিন্তু কিছু অসাধু মৎস্য খামার ব্যবসায়ীরা টাকার লোভে ফেলে কৃষকদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন মূল্যবান কৃষি সম্পত্তি। ১০ বছরের মতো সময় লিজ নিয়ে ধানের জমিটিতে খামার করছেন। আমরা এদের বিরুদ্ধে সবসময় অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করে আসছি। ইউএনওদেরকে এই অভিযান সামনে আরও জোরদার করার জন্য বলবো।

এফএ/এমএস