ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঘাট সমস্যায় ঈদে দৌলতদিয়ায় দুর্ভোগের শঙ্কা

জেলা প্রতিনিধি | রাজবাড়ী | প্রকাশিত: ০১:০৯ পিএম, ২১ জুন ২০২৩

পদ্মা নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে ব্যাহত হচ্ছে দেশের ২১ জেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার। কয়েকটি ঘাটের অ্যাপ্রোচ সড়কের সংযোগস্থলে পানি ওঠায় ব্যাহত হচ্ছে যানবাহন ওঠানামা।

এদিকে, পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র সাতদিন। এসময় দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ঢাকামুখী পশুবাহী ট্রাকের পাশাপাশি উভয়প্রান্ত থেকেই বৃদ্ধি পাবে যাত্রীবাহী যানবাহনের চাপ। ফলে দ্রুত ঘাট সমস্যার সমাধান না হলে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীসহ ঢাকামুখী কোরবানির পশুবাহী ট্রাকগুলো দুর্ভোগে পড়বে।

যানবাহনের চালক, যাত্রী ও স্থানীয়রা বলছেন, পদ্মা সেতু চালুর পর দৌলতদিয়ায় যাত্রী ভোগান্তি কমেছে। কিন্তু আসন্ন ঈদে ফেরিঘাটের সমস্যা থাকলে ভোগান্তি পোহাতে হবে। ভোগান্তি লাঘবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি।

এদিকে, দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ম্যানেজার ও বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপকের দাবি, ঈদ উপলক্ষে তাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। চারটি ঘাট প্রস্তুতের পাশাপাশি ১৮টি ফেরি ও ২১টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করবেন। নদীর পানি বৃদ্ধিতে সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। অপরদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও যানজট নিরসনে কাজ করবে জেলা পুলিশ। গত ঈদের মতো এবারের ঈদযাত্রাও স্বস্তির হবে বলে আশা করছেন জেলা প্রশাসক।

দৌলতদিয়া ঘাট দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘাট। গতবছর পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে এ নৌপথের চাপ কমেছে অনেকাংশই। বর্তমানে ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবহার করে দেড় থেকে দুই হাজার যানবাহন পারাপার হলেও ঈদের সময় তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এ বাড়তি যানবাহনের চাপ সামাল দিতে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। যার ফলে ৩ নম্বর ঘাটের জন্য করা হচ্ছে নতুন অ্যাপ্রোচ সড়ক। এছাড়া নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে অন্য ঘাটগুলো লো থেকে মিড ওয়াটারে ওঠানো হচ্ছে।

জানা গেছে, এবার ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় ১৮টি ফেরি, ২১টি লঞ্চ ও ১০টি স্পিডবোট চলাচল করবে। পাশাপাশি যানবাহন পারাপারে দৌলতদিয়া প্রান্তের ৩, ৪, ৬ ও ৭ এই চারটি ঘাট প্রস্তুত থাকবে। এছাড়া ঘাট এলাকাসহ সড়কে করা হবে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা।

ছিনতাইকারি, দালালচক্র নিয়ন্ত্রণসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় থাকবে কয়েকস্তরের নিরাপত্তা। যানবাহনে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে নেওয়া হবে ব্যবস্থা। এছাড়া ঘাট এলাকা যানজট মুক্ত রাখতে ঈদের আগের তিনদিন, ঈদের দিন ও ঈদের পরের তিনদিনসহ সাতদিন পশু ও জরুরি পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ব্যতীত সব ধরনের ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকবে। রাতে বন্ধ থাকবে স্পিডবোট। অন্যদিকে, ২৪ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত নদীতে চলবে না কোনো বাল্কহেড।

ঘাট সমস্যায় ঈদে দৌলতদিয়ায় দুর্ভোগের শঙ্কা

স্থানীয় সফিকুল ইসলাম শামীম বলেন, ঈদের বাকি আর মাত্র এক সপ্তাহ। এখন ঘাটের অবস্থা ভালো না। এই অবস্থা থাকলে জনগণের ভোগান্তি হবে। তাই ঈদের চাপ বাড়ার আগেই ঘাটগুলো প্রস্তুত করতে হবে। তবে ঈদের আগে বিআইডব্লিউটিএ বা বিআইডব্লিউটিসির যে ব্যস্ততা থাকার কথা সেটি চোখে পড়ছে না।

যাত্রী আবুল ফকির, মঞ্জুর রহমান, মামুনসহ কয়েকজন জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে তাদের কোনো ভোগান্তি হচ্ছে না। সুন্দরভাবে যাতায়াত করতে পারছেন। তবে বর্তমানে ঘাটে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ সমস্যার কারণে তারা সিরিয়ালেও কিছু সময় আটকে আছেন। দ্রুত সমাধান করা না হলে ঈদে ঘরে ফেরা ও ঈদের পর কর্মস্থলগামী মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হবে।

বাসচালক রবিউল ইসলাম বলেন, গত ঈদে কোনো যানজট হয়নি। আশা করছি এবারও হবে না। তবে এখন ঘাটে সমস্যা আছে। সামনে ঈদ, এখন যদি ঘাট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেয় তাহলে সমস্যায় পড়তে হবে।

ঘাট সমস্যায় ঈদে দৌলতদিয়ায় দুর্ভোগের শঙ্কা

দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ম্যানেজার নুরুল আনোয়ার মিলন জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর তাদের লঞ্চে পারাপার যাত্রীর সংখ্যা একবারেই কমে গেছে। তারপরও ঈদে তাদের প্রস্তুতি রয়েছে। এই রুটে ২১টি লঞ্চ চলবে। ফলে যাত্রী পারাপারে কোনো সমস্যা হবে না।

এছাড়া ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত কোনো ভাড়া আদায় করা হবে না। সেইসঙ্গে তাদের সবগুলো লঞ্চের ফিটনেস আছে বলেও দাবি করেন তিনি।

বিআইডব্লিউটিএর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এরকম হয়েছে। তবে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রতিটি ঘাট লো থেকে মিড ওয়াটারে স্থাপন করা হয়েছে। এখন আর কোনো সমস্যা হবে না।

ঘাট সমস্যায় ঈদে দৌলতদিয়ায় দুর্ভোগের শঙ্কা

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ঈদে চারটি ফেরিঘাটের মাধ্যমে ১৮টি ফেরিতে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হবে। এর মাধ্যমে সবাইকে নির্বিঘ্নে পারাপার করতে পারবো বলে আশা করছি। এসময় কোরবানির পশুবাহী ট্রাকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হবে। বর্তমানে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার যানবাহন পারাপার হলেও ঈদে এ সংখ্যা বেড়ে যায়। তাই ঈদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে।

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই ঈদে যাত্রী ও যানবাহনের পাশাপাশি কোরবানির পশুবাহী ট্রাক পারাপার হবে। পদ্মা সেতু চালুর পর দৌলতদিয়ায় চাপ কমলেও এখনো গুরুত্ব রয়েছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ট্রাফিক, নৌ ও থানার পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ কাজ করবে। দৌলতদিয়ার সড়ক সার্বক্ষণিক ফাঁকা রাখতে আমরা কাজ করছি। আশা করছি, ঈদে কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া দালাল, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারিসহ অন্য অপরাধীদের নিয়ে আমরা সবসময় কাজ করি। এবং ঈদের সময় আমরা এ বিষয়ে আরও বেশি সজাগ থাকি। পাশাপাশি যানবাহনের বাড়তি ভাড়া নিয়েও আমরা নিয়মিত মনিটরিং করবো।

রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত কয়েকটি ঈদের মতো সবার সহযোগিতায় এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তির হবে। এবার আগের থেকে ফেরি ব্যবস্থাপনাও ভালো থাকবে। এবং ঈদের সাতদিন কোরবানির পশু ও জরুরি পচনশীল ট্রাক ব্যতীত সব ধরনের ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকবে। এছাড়া ২৪ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত নদীতে কোনো বাল্কহেড চলবে না। রাতে চলবে না স্পিডবোট। এবং ঝড়ের পূর্বাভাস অনুযায়ী লঞ্চ ও ফেরি চলবে। এছাড়া কোনো বাস নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে পারবে না, সেদিকে দৃষ্টি রাখা হবে।

রুবেলুর রহমান/এমআরআর/জেআইএম