পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়ক
সড়কের বাঁক যখন মরণফাঁদ
পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের বসাকবাজার এলাকার বাঁকটি এখন রীতিমতো ‘মরণ ফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। সড়কের এই বাঁকটি অতিক্রম করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে ছোট বড় যানবাহন।
এ সড়কের একপাশ বর্ধিতকরণের কাজ শুরু করলেও সড়কটি সোজা করতে আগামী অর্থবছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছে সড়ক ও সজনপথ বিভাগ। আর সড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে দুর্ঘটনা কমানোর বিষয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। তবে সেই অনুপাতে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়কগুলোর দু’পাশে সম্প্রসারণ করা হয়নি। এর ফলে অনেক স্থানেই যানবাহনগুলো ওভারটেকিং করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এমনই একটি স্থান পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের বসাকবাজার এলাকা। প্রায় প্রতিদিনই এই স্থানে যানবাহনগুলো ওভারটেকিং করতে গিয়ে সড়কের পাশে পড়ে যাচ্ছে। ফলে জীবন ও সম্পদহানির তালিকা দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে।
দক্ষিণ বল্লভপুর হোসানিয়া দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা যখইন ক্লাসে ঢুকি কিংবা বের হেই দেখি এখানে গাড়ি পড়ে আছে, মানুষ আহত হচ্ছে, অনেকে আবারও মারাও যাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন সময় উদ্ধার করে অনেককে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। প্রতি সম্পাহে অন্তত দুই তিনটা গাড়ি এক্সিডেন্ট হয় এখানে। কত মানুষ যে মারা গেছে তা ঠিক করে বলা যাবে না। সরকারের এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

আমির আব্দুল্লাহ নামে এক পথচারী বলেন, আমি এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চারবার যাতায়াত করি। মাসে অন্তত ২০টি গাড়ি এখানে দুর্ঘটনার শিকার হয়। সবসময় আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করি, কবে যেন আমি নিজেই দুর্ঘটনার শিকার হই। আসলে সড়কটি সোজা করলেই সমাধান হয়ে যায়। সড়কের পশ্চিম পাশে যদি গাছগুলো কেটে দেওয়া হয় এবং কিছু মাটি ভরাট করে সড়কটি সোজা করা হয় তাহলে মনে হয় দুর্ঘটনা কমে আসবে।
পটুয়াখালী জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন মৃধা জাগো নিউজকে বলেন, সড়কের বাঁকগুলো সোজা করার জন্য বেশ কয়েকবার সড়ক ও জনপথ বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। আমি যতটুকু জানি এজন্য তারা একটি বরাদ্দ পেয়েছে। হয়তো সড়কের বাঁকগুলো সোজাকরণে তারা কাজ শুরু করবে।

পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহম্মদ সাইদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, যানবাহন চালকদের আরও সচেতন হতে হবে। নির্দিষ্ট গতি মেনে যানবাহন চালাতে হবে। ওই স্থানটিতে যেহেতু একটি বাঁক আছে সেখানে যানবাহনগুলোর গতি কমিয়ে এনে বাঁকটি অতিক্রম করার কথা। কিন্তু অনেকেই তা মানছে না। এ কারণেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে।
তবে পটুয়াখালী জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা ওই স্থানে এখন থেকে নিয়মিত স্পিডগান নিয়ে অবস্থান করবে, যারা নিয়ম না নেমে অধিক গতিতে যানবাহন চালাবে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। এছাড়া সড়কের যে ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে সেটি সংশোধন করার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম আতিক উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়কের বসাকবাজার এলাকার ওই বাঁকটির স্থানে সড়কের পূর্ব পাশে মাটি না থাকায় গাড়িগুলো সেখানে উল্টে যায়। তবে এরইমধ্যে সড়কের পূর্ব পাশে প্যালাসাইনিং করে সেখানে বালু ফিলিং করা হচ্ছে। এছাড়া সড়কটি সোজা করার জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে এজন্য একটু সময় লাগবে। আশা করছি এর ফলে সড়কটি ঝুঁকিমুক্ত হবে।
পটুয়াখালীর লেবুখালী পায়রা সেতু থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। আর এই মহাসড়কে যানবাহনের শৃঙ্খলা রক্ষায় হাইওয়ে পুলিশের কোনো ইউনিট না থাকায় বর্তমানে জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরাই দায়িত্ব পালন করে। আর পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কটি বর্তমানে দুই লেনের সড়ক হলেও এই সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার জন্য এরইমধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য সড়কের দুই পাশে জমি অধিগ্রহণের জন্য জরিপ কাজ চলছে বলেও জানায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
এফএ/জেআইএম