ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

নড়িয়ার মুলফৎগঞ্জ সেতু যেন ‘মিনি হাতিরঝিল’

জেলা প্রতিনিধি | শরীয়তপুর | প্রকাশিত: ১১:৪৩ এএম, ২৯ জুন ২০২৩

একসময়ের নদী ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ এখন রাজধানীর হাতিরঝিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছে। শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পদ্মা নদীর তীররক্ষা বাঁধে মুলফৎগঞ্জ সেতু নামে একটি দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকার হাতিরঝিলের সেতুর আদলে ওই সেতু নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

গত ১৭ জুন সন্ধ্যায় পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম দৃষ্টিনন্দন সেতুটি উদ্বোধন করেন। এর পর থেকেই নদীর তীররক্ষা বাঁধের ওপর এমন একটি স্থাপনা দেখতে ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। প্রতিদিন বিকেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে হাজির হচ্ছেন হাজারো মানুষ।

নড়িয়া উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নড়িয়ার পদ্মার তীরবর্তী তিনটি ইউনিয়ন ও নড়িয়া পৌরসভার কিছু এলাকায় প্রবল নদীভাঙন ছিল। ওই সময় ভাঙনে অন্তত ২০ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়। তিনটি বাজারের পাঁচ শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পদ্মায় বিলীন হয়। সরকারি-বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা পদ্মার পেটে চলে যায়।

এ ভাঙন ঠেকাতে ২০১৯ সাল থেকে ‘নড়িয়া-জাজিরা পদ্মা নদীর ডানতীর রক্ষাবাঁধ’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ কিলোমিটার নদীর তীররক্ষা বাঁধ ও ১১ কিলোমিটার নদীর চর খনন কাজ করা হয়েছে। বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে প্রথমে ভাঙন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এরপর পাথর ও সিমেন্টের তৈরি ব্লক বসিয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়।

আরও পড়ুন: সমৃদ্ধির পথে খাগড়াছড়ির পর্যটন শিল্প

ওই বাঁধ ঘেঁষে চার কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। নড়িয়ার মুলফৎগঞ্জ বাজার থেকে সুরেশ্বর লঞ্চঘাট পর্যন্ত ওই ওয়াকওয়ের নামকরণ করা হয় জয়বাংলা অ্যাভিনিউ। এর পাশ দিয়ে ঝাউগাছসহ বিভিন্ন গাছ লাগানো হয়েছে। দর্শনার্থীদের বসার জন্য বিভিন্ন স্থানে বেঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। নদীতে নামার জন্য প্রতি ৩০০ মিটার অন্তর সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। জয়বাংলা অ্যাভিনিউ আকর্ষণীয় করার জন্য রঙিন আলোকবাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা নদীর তীরে মুলফৎগঞ্জ খালের মুখে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ঢাকার হাতিরঝিলের সেতুর আদলে ওই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ১৬ মিটার দীর্ঘ ও আট মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণ করতে দুই কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সেইসঙ্গে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে খালটির দুই কিলোমিটার অংশ খনন করা হচ্ছে। ওই অংশ দৃষ্টিনন্দন করার জন্য খালের দুইদিকে ব্লক দিয়ে সাজানো হয়েছে। ঘুরতে আসা মানুষদের বসে সময় কাটানোর জন্য বেঞ্চ বসানো হয়েছে। সেতুটিতে বিভিন্ন রঙের লাইট বসানো হয়েছে। ওই লাইটের আলোতে পদ্মা নদীর পানির সৌন্দর্য দেখতে মানুষ রাতেও সেতুতে ভিড় করছেন।

সম্প্রতি শিবচর এলাকা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছিলেন রাকিব মাহামুদ। তিনি বলেন, আমি ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি। পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। এসে দেখলাম, বর্তমান সরকার দেশের জন্য কিছু একটা হলেও করছে। এখানে এসে শুনলাম এলাকার মানুষ আগে সবাই কান্নাকাটিতে ব্যস্ত থাকতো। এখন এই এলাকা পর্যটনস্পট এবং বাণিজ্যিক এলাকা হয়ে গেছে। এই সেতুটির নাম দেওয়া হয়েছে মূলফৎগঞ্জ সেতু কিন্তু সেতুটি দেখে মনে হচ্ছে হাতিরঝিল সেতু। তাই এটাকে মিনি হাতিরঝিল বলা যায়।

গোসাইরহাট থেকে শাহেদ আহমেদ পরিবার নিয়ে বিকেলে পদ্মা নদীর তীরে ঘুরতে আসেন। তিনি বলেন, এর আগে অনেকবার নড়িয়ার জয়বাংলা অ্যাভিনিউ ঘুরতে এসেছি। কিন্তু নতুন এই সেতুটির ছবি ফেসবুকে দেখে আমার খুব ভালো লাগে। তাই পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। এসে দেখলাম রাজধানীর হাতিরঝিলের সেতুর আদলে একটি মিনি হাতিরঝিল হয়েছে। এখানে এসে খুব ভালো লাগলো।

আরও পড়ুন: সুন্দরবনে চারটি নতুন পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে

সখিপুরের বাসিন্দা ফয়সাল হোসেন বলেন, একসময় এখানকার মানুষ নদীতে কত জমি হারিয়েছে এবং কত বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। আমরা সবসময় ভাবতাম যে শরীয়তপুর জেলাটি হয়তো একসময় নদীগর্ভে চলে যাবে। কিন্তু পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নিয়ে এই নদীরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেছে এবং পাশাপাশি একটা সেতু নির্মাণ হয়েছে। সেই সেতুটি ঢাকার হাতিরঝিলের মতো অবিকল সুন্দর। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। দেখে মনে হলো আমি ঢাকায় আছি।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, আমি এই উপজেলায় অল্প কিছুদিন ধরে চাকরি করছি। নড়িয়ার পদ্মা তীররক্ষা বাঁধ জয় বাংলা অ্যাভিনিউতে মানুষ বেড়াতে আসছেন। মুলফৎগঞ্জ সেতু উদ্বোধনের পর থেকে দৃষ্টিনন্দন এই সেতুটির কারণে সেই ভিড় আরও বেড়েছে। আসলে হাতিরঝিলের অবিকল সেতুটির ওপর ডিজাইন করাতে মানুষের নজর কাড়ছে। পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নজরে রাখার জন্য নড়িয়া পৌরসভা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদকে যুক্ত করা হয়েছে।

জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, আমাদের নড়িয়ার নদীভাঙন রোধ করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় ১০ কিলোমিটার নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও ১১ কিলোমিটার নদী খনন করার মধ্য দিয়ে আমরা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে সখিপুরের উত্তর তারাবুনিয়াতে সোনারবাংলা অ্যাভিনিউয়ের কাজের উদ্বোধন করেছি। গত চার বছরে এখানকার একটি বাড়িও ভাঙনের কবলে পড়েনি। এখন তীররক্ষা বাঁধের ওপর হাজারও মানুষ ঘুরতে আসছেন। পর্যটকদের বিনোদন ও আকৃষ্ট করতে আমরা নানা ধরনের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণ করে জয়বাংলা অ্যাভিনিউয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার কাজ করছি। এই ৩০ কিলোমিটার এলাকাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। জাজিরার দুই কিলোমিটার এখনো কোনো বাঁধ করা হয়নি। আমরা সেখানে রূপসী বাংলা এভিনিউয়ের করার প্ল্যান করেছি।

এমআরআর/আরএইচ/এএসএম