হিলি দিয়ে পণ্য রপ্তানি বন্ধের হুঁশিয়ারি, বেহাল সড়ক পরিদর্শনে ডিসি

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর স্থলবন্দর হিলির গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বেহাল দশা। গত বছর সড়ক ও জনপদ বিভাগ অভ্যন্তরীণ এই সড়কটি চারলেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু করলেও ঠিকাদারের গাফিলতি ও ধীরগতিতে তা শেষ করা সম্ভব হয়নি। বর্ষা মৌসুমে খুঁড়ে রাখা সড়কে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আমদানি-রপ্তানিকারক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের।

এমন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার বাংলা-হিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি দেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বেহাল সড়ক দ্রুত সংস্কার না করা হলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানানো হয়।

এ ঘটনার পর শনিবার (৮ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় হিলির এ সড়ক পরিদর্শনে আসেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শাকিল আহমেদ। তবে কর্মকর্তাদের আশ্বাসেও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে আগামী সোমবার (১০ জুলাই) সড়কে যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়াসহ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন হিলি নাগরিক কমিটির নেতাসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

জেলা প্রশাসকের পরিদর্শনের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এম আজিজ, হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত রায়, আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর-রশিদ এবং বাংলা-হিলি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জামিল হোসেনসহ স্থানীয় সচেতন মহল, মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায়ী নেতারা।

এর আগে গত মঙ্গলবার বিকেলে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য নিয়ে হিলি পানামা পোর্টে যাওয়ার সময় কাদাপানি ও খানাখন্দে ভরা সড়কটিতে উল্টে যায় ভারতীয় একটি ট্রাক। একইদিন বেলা ১১টায় এই সড়কে আটকে যায় দেশীয় একটি ট্রাক। সব মিলিয়ে দিনব্যাপী সড়কটিতে যানজট সৃষ্টি হলে ভোগান্তিতে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দাসহ ব্যবসায়ীরা। ব্যাহত হয় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার হিলি চেকপোস্টের জিরো পয়েন্ট থেকে মহিলা কলেজ পর্যন্ত সোয়া দুই কিলোমিটার সড়ক চারলেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। তবে শুরু থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়িমসি করে আসছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সড়কের বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়ত আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। বিশেষ করে কাঁচাপণ্য আমদানি করার ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তায় পড়তে হচ্ছে আমদানিকারকদের। কেননা দুর্ভোগপূর্ণ সড়কে কাঁচামাল বোঝাই ট্রাক আটকা পড়লে সেসব পণ্য নষ্ট হয়ে যাবে। পুঁজি হারাতে হবে তাদের। এছাড়া এই সড়কে ভোগান্তির কারণে তুলনামূলক পণ্য আমদানি কমে গেছে। এতে এই বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণ অনেকাংশ কমেছে বলে দাবি স্থানীয় আমদানি-রপ্তানিকারকদের।

হিলি নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্টরা আশার বাণী শুনিয়ে আমাদের ভোগান্তিতে ফেলেছে। তবে এবার কোনো মধুর বাণী আমরা শুনবো না। আগামী সোমবার হিলির এই রাস্তায় আমরা মানববন্ধন করবো, রোড ব্যারিকেড দেবো। দলমত নির্বিশেষে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

দিনাজপুরের সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এম আজিজ বলেন, জেলা প্রশাসক যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা সেভাবে কাজ শুরু করেছি। নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর রাস্তার কাজ শেষ হবে। ভোগান্তি কমাতে আমরা এরইমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছি।

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শাকিল আহমেদ বলেন, আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করবো। প্রশস্তকরণ কাজ দিনরাত ২৪ ঘণ্টা চলবে। আমি সড়ক বিভাগের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দিয়েছি। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এখানে উপস্থিত থেকে কাজ করবেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। আমি আশ্বস্ত করছি ভোগান্তি কমাতে এই কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা হবে। এখানে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।

এমদাদুল হক মিলন/এমআরআর/জেআইএম