ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতাল ভবন
‘সুস্থ হতে উল্টো জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ভর্তি হলাম’
ছাদের ধস ঠেকাতে কয়েকটি বিমে বসানো হয়েছে লোহার খুঁটি। প্রতিনিয়ত খসে পড়ছে পলেস্তারা। শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল ভবনটির এমন জরাজীর্ণ অবস্থা। যদিও দুবছর আগে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে গণপূর্ত বিভাগ। এরপরও ঝুঁকি নিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। ফলে ভবন ধসের আতঙ্কে থাকেন চিকিৎসক, রোগী ও স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০০৩ সালে হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০০৬-৭ অর্থবছরে ওই দ্বিতল ভবনের ওপরই তৃতীয় তলা বর্ধিত করা হয়। তখন ওই কাজ করেছিল তৎকালীন সংসদ সদস্য মৃত হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর কাজটি বাস্তবায়ন করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
দ্বিতল ভবনটির ছাদ ফুটো করে নিচ থেকে ৫০টি পিলার (খুঁটি) তিনতলা পর্যন্ত নেওয়া হয়। পুরোনো ছাদ ও বিমের সঙ্গে রড দিয়ে খুঁটির সংযোগ স্থাপন করা হয়। তার ওপরেই তিনতলার ছাদ নির্মাণ হয়। ভীত ছাড়া তিনতলা ভবন নির্মাণ করায় হাসপাতাল ভবনটির কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে।

নির্মাণের ৯ বছরের মাথায় ২০১৮ সালে প্রথম নিচতলার পূর্ব দিকে বহির্বিভাগের চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। তখন সেখানে থাকা তিন রোগী আহত হন। এরপর এক্স-রে বিভাগ, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষ, অফিস কক্ষ, বহির্বিভাগের ওয়েটিং রুম, টিকিট কাউন্টারের সামনে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। তবু ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ৮০০-৯০০ মানুষ এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতাল ভবনের নিচতলার করিডোর, বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে যাওয়ার করিডোর, এক্স-রে কক্ষ ও অফিস কক্ষে বিমের সঙ্গে বসানো হয়েছে লোহার খুঁটি। হাসপাতালের ১০-১৫টি স্থানে পলেস্তারা খসে পড়েছে। ফলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা।
ডামুড্যা উপজেলা থেকে সেবা নিতে আসা মাহাবুব রহমান বলেন, পেট ব্যথায় ভুগছি। তাই চিকিৎসা নিতে সদর হাসপাতালে ভর্তি হলাম। তবে এসে দেখি এখানে হাসপাতাল নিজেই অসুস্থ। ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে যেকোনো সময়। সুস্থ হতে উল্টো জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ভর্তি হলাম।

নড়িয়া ভোজেস্বর এলাকা থেকে বহির্বিভাগে এসেছেন ইব্রাহীম। তিনি বলেন, জেলার হাসপাতালে সেবা নিতে এসে দেখি বহির্বিভাগে ছাদের পলেস্তারা অনেক যায়গায় ভাঙা। কোনো কোনো জায়গায় লোহার খুঁটি দিয়ে ছাদকে ঠেলে ধরে রেখেছে। তাই হাসপাতালটি ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে যেকোনো সময় বড় ধরেন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) সুমন কুমার পোদ্দার জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতাল ভবনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণেই এরকম ছাদ খসে পড়ার ঘটনা ঘটছে। তবে নতুন ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ভবনের কাজ চলমান। তবে কাজে ধীরগতি হচ্ছে।
আরএমও আরও বলেন, হাসপাতালটি দ্বিতল ভবনের হলেও এটাকে তিন তলায় রূপান্তর করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১০-১২ বার ভবনের দেয়ালসহ ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। এর আগে বহির্বিভাগের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে প্রত্যেক মানুষ ঝুঁকিতে থাকেন। বড় কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে আমরা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুস সোবহান জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতালটি অনেক রোগীর সেবা দিচ্ছে দৈনিক। ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতাল ভবনটি এখন আমাদের কাছে বড় চাপ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে বহুবার এ সমস্যার কথা জানিয়েছি। নতুন ২৫০ শয্যা ভবনটিও নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ভবনেই রোগীদের সেবা দিচ্ছি।
শরীয়তপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মহিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, জেলা সদরের পুরাতন হাসপাতালটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণের বিষয়ে চিঠি দিয়েছি। পশ্চিম পাশেই নতুন ২৫০ শয্যা হাসপাতালের নির্মাণ কাজ চলমান। দ্রুত নতুন ভবনের কাজ হয়ে যাবে। তাহলে সমস্যা থাকবে না।
এসজে/এএসএম