আবহাওয়া দেখে ঠিক করেন রেসিপি, বানাতে পারেন ২১০ রকমের চা
পুদিনাপাতার চা, হরীতকীর চা, তেঁতুলের চা, বহেরার চা, থানকুনিপাতার চা, বাসকপাতার চা, চিরতার চাসহ ২১০ রকমের চা বানান মুখলেস উদ্দিন কবির। বাসা নেত্রকোনা শহরের মুক্তারপাড়ায়। ডাক নাম কবির। এজন্য দোকানের নামও দিয়েছেন ‘কবি মামার চা’য়ের দোকান। জেলা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকার লয়ারস প্লাজার ভেতরে কবি মামার চায়ের দোকান।
প্রথমে তিনি শহরের ফুটপাতে বসতেন। তখন তিনি বানাতেন ৫৯ পদের চা। ফুটপাত ছেড়ে কাস্টামারদের চাপে দোকানে উঠেছেন তিনি। এক সময় লেখালেখিও করতেন কবির। সেখান থেকেই কাস্টমাররা ভালোবেসে তার দোকানের এই নাম দিয়েছেন। দিনে প্রায় ৫-৭শো মানুষ চা পান করেন তার দোকানে। ২-৩শো নিয়মিত ক্রেতা রয়েছেন তার।
কবির বলেন, ‘তারারে (কাস্টমার) অহন দেইখ্যাই চিনি। কে কোন চা খায়, দেখলেই কইতামও পারি। বইয়া (বসে) ইশারা দিলেই অয়। তবে কুনু কুনু দিন মিটিং-টিটিং থাকলে ৮শো থেকে এক হাজার কাপ চাও বেচা অয়।’
কবি মামার দোকানে সবই ‘সেলফ সার্ভিস’। কারণ তিনি একাই সবকিছু সামলান। কোনো কর্মচারী নেই। আগেও ছিল না। কর্মচারী না রাখার কারণ জানতে চাইলে তার যুক্তি, ‘শত শত মসলা ও ওষুধিগাছের মিশ্রণে চা বানাতে হয়। প্রতিটারই আলাদা আলাদা পরিমাণ আছে। একটু হেরফের হলেই সুস্বাদু পানীয়টি এক ধরনের বিষে পরিণত হতে পারে। এই ভয়ে লোক নেওয়া হয় না। নিজেকেই দ্রুত হাত চালাতে হয়।’

বেশ চটপটে ৬৪ বছর বয়সী এই চা দোকানির সাত বছরের চায়ের দোকান থেকে অনেক কিছু পাল্টে গেছে। ফুটপাত ছেড়ে শুধু দোকানেই ওঠেননি, বাড়িতেও টিনের ঘরটির স্থানে এখন দোতলা ভবন। বড় ছেলে এইচএসসিতে পড়ছে। ছোট মেয়ে পড়ছে মাদরাসায়।
দুইশোর বেশি চায়ের পাশাপাশি নানা রকমের কফি, লাচ্ছি, শরবতও বানাতে পারেন মুখলেস উদ্দিন। কথা বলার সময় এক কাপ ‘মামা স্পেশাল টি’ বানিয়ে দিলেন। এক টুকরো মাল্টাও দিলেন তাতে। এটা তার দোকানের বিশেষ রেসিপি, যা রোজ বদলায়। মামা স্পেশাল টি একেক দিনেরটা একেক রকম। এক দিনের সঙ্গে আরেক দিনের চায়ের ফ্লেভার মিলবে না বলে জানালেন তিনি। কারণ এই চায়ে একেক দিন একেক মসলা দেন।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আবহাওয়া দেখে, চায়ের রেসিপি ঠিক করেন। সারাদিন সেই চা-ই হয় স্পেশাল মামা চা। বিশেষ এই চায়ের দাম রাখেন মাত্র ১০ টাকা। বাজারে চিনির দাম বাড়লেও বাড়েনি চায়ের দাম।
এত রকমের চা বানানোর কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ঔষধিগাছ নিয়ে অনেক পড়াশোনা করেছি। নিজে খুব বেশি পড়াশোনা না করলেও দেশ-বিদেশের নানা গাছগাছড়া নিয়ে পড়ার আগ্রহ আছে আমার। সেখান থেকে পাওয়া জ্ঞানই চা বানানোর কাজে লাগাই। একেকটা ফ্লেভার বানিয়ে, নিজেই সেটা পরখ করি, তারপর কাস্টমারকে দিই।

এই পরীক্ষা-নীরিক্ষা ও লব্ধ জ্ঞান লিখে রাখছেন বলে জানালেন তিনি। ছেলের হাতে দিয়ে যাবেন, যেন তার মৃত্যুর পর মানুষ জানতে পারে। ২১০ রকমের চায়েই থাকতে চান না মুখলেস। সামনে আরও নতুন নতুন ধরনের চা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে চান।
কবি মামার চায়ের দোকানে চা পান করতে করতে কথা বলছিলেন বারহাট্টা উপজেলার দেওপুর গ্রামের সালাহ উদ্দিন খান, মদন উপজেলার জামিল হোসেন ও কলমাকান্দা উপজেলার শুনই গ্রামের আসাদুজ্জামান আসাদ। তারা বলেন, মুখলেস ভাইয়ের দোকানে তেঁতুলের চা আর মরিচের চা বেশি পছন্দ। এই দুই রকমের চা মাত্র ১০ টাকায় পাওয়া যায়। তবে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা দামের চাও বিক্রি করেন তিনি। তার চা পানে তৃপ্তি মেটে আমাদের। জেলার বাইরে থেকে লোকজন বেড়াতে এলে এই চা পান না করলে অসম্পূর্ণই থেকে যাবে নেত্রকোনা ভ্রমণ।
এইচ এম কামাল/এফএ/এএসএম
সর্বশেষ - দেশজুড়ে
- ১ হাদিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক বরখাস্ত
- ২ সাত ঘণ্টা অবরোধের পর বরিশাল-খুলনা মহাসড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক
- ৩ বাসায় পুলিশের অভিযান, ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু
- ৪ ওসমান হাদির মৃত্যুতে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ লিখে পোস্ট, যুবক গ্রেফতার
- ৫ হাদি হত্যা: রংপুরে প্রতিবাদী সমাবেশে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি