ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

প্রাণ ফিরে পেতে তিন ঘণ্টা ছাই দিয়ে ঢেকে রাখা হলো মরদেহ

উপজেলা প্রতিনিধি | মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) | প্রকাশিত: ০৮:৩২ পিএম, ২৮ জুলাই ২০২৩

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে টুটুল চৌধুরীর বাড়িতে নেই বিয়ের আনন্দ। আছে শুধু কান্না আর আহাজারি। আশপাশের কয়েক বাড়িতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এরইমধ্যে নিহত দু’জনের প্রাণ ফিরে পেতে তিন ঘণ্টা মরদেহ ছাই দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। পরে শুক্রবার (২৮ জুলাই) তাদের মরদেহ দাফন হয়।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে উপজেলার তরফপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে জনবুইড়া বিল পার হওয়ার সময় বরযাত্রীবাহী নৌকাটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় বর টুটুলের বড় ভাই সিঙ্গাপুর প্রবাসী রিপন চৌধুরী (৪০) ও তার চাচাতো ভাই ইতালি প্রবাসী কহিনুর মিয়ার ৮ বছরের মেয়ে স্নেহা আক্তার এবং আত্মীয় ভাওড়া ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে আসিফ মিয়া (২০) ডুবে মারা যান।

মুন্দিরাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের সমবয়সী নূর এ জান্নাতকে বার বার বুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছেন ইতালি প্রবাসী কহিনুর মিয়া। মেয়েকে হারিয়ে বিলাপ করছেন তিনি।

কহিনুর মিয়া বলেন, ১৪ বছর ধরে তিনি ইতালি থাকেন। আড়াই বছর আগে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে ইতালিতে নিয়ে যান। সেখানেই সন্তানেরা লেখাপড়া করছে। চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে দুই মাস আগে তিনি সপরিবার দেশে আসেন। রোববার সকাল সাড়ে ৬টায় তাদের ইতালিতে ফিরে যাওয়ার ফ্লাইট। এরই মধ্যে মেয়েটি চলে গেলো।

কহিনুর মিয়ার বড় ছেলে রাফি বলেন, ইতালিতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন তিনি। ছোট ভাই অভি নবম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোট বোন স্নেহা আক্তার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

মির্জাপুর উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের মুন্দিরাপাড়া গ্রামের টুটুল চৌধুরীর সঙ্গে উপজেলার তরফপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়া এলাকার মজনু মিয়ার মেয়ে লিপা আক্তারের বিয়ের দিন ধার্য ছিল বৃহস্পতিবার। দুপুরের খাবার শেষে বাড়ি ফেরার পথে নৌকাডুবিতে তাদের তিনজনের মৃত্যু হয়।

নিহত রিপন চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় লোকশূন্য। মাঝে মধ্যে দলে দলে আশপাশের বাড়ির মানুষ আসছেন। অনেকেই আফসোস করছেন। শুক্রবার নির্ধারিত বউভাতের অনুষ্ঠানে অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য সাজানো প্যান্ডেলটি ঠিকই আছে, কিন্তু সেখানকার সব চেয়ার-টেবিল এলোমেলো। বর-কনের জন্য তৈরি করা মঞ্চটির দিকে কারো নজর নেই। শুক্রবার বিকেলে ডেকোরেশনের লোকজন বিয়ের গেট ও প্যান্ডেল খোলার কাজ করছিলেন।

রিপনের ছোট ভাই বর টুটুল চৌধুরী বলেন, রিপন দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরে থাকেন। বিয়ে উপলক্ষে গত ১৭ জুলাই দেশে আসেন। রিপনের সংসারে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।

এদিকে নিহতদের প্রাণ ফিরে পাওয়ার আশায় বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শিশু স্নেহা ও রিপন চৌধুরীর মরদেহ ছাই দিয়ে ঢেকে রাখা হয় বলে বর টুটুল চৌধুরী ও গ্রামের বাসিন্দা উজ্জল মিয়া জানিয়েছেন।

তবে আসিফকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় মির্জাপুর সদর কবরস্থান মসজিদে জানাজা শেষে সদর কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরে আজ শুক্রবার (২৮ জুলাই) বেলা ১১টায় উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের মুন্দিরাপাড়া গ্রামে পরপর রিপন চৌধুরী ও স্নেহার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

উপজেলা সদরের ইউনিয়নপাড়া এলাকায় সেলিম মিয়ার বাসায় গিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতেই তার ছেলে আসিফ মিয়ার মরদেহ দাফন করা হয়েছে। আসিফের এ বছর মির্জাপুরের ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

এসএম এরশাদ/এফএ/এমএস