হত্যা মামলার আলামত গায়েব, এসআইয়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
কুষ্টিয়ার মিরপুরে আলোচিত একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত গুরুত্বপূর্ণ আলামত গায়েবের ঘটনায় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রবিউল আওয়ালের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। রবিউল আওয়াল বর্তমানে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানায় কর্মরত রয়েছেন।
২ আগস্ট কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট লাবনী সুলতানা পলি প্রতিবেদন গ্রহণ করে তার বিরুদ্ধে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। তবে আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও কৌশলে পরোয়ানার বিষয়টি গোপন রাখা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রোববার (১৩ আগস্ট) আলোচিত এই গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়।
আদালতের আইনজীবী আব্দুল্লাহিল মারুফ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে সংশ্লিষ্ট আদালতের জিআরও মো. জসিম উদ্দিন দাবি করেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির কয়েক দিন পর উক্ত এসআই সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। তবে কবে তিনি জামিন প্রাপ্ত হয়েছেন এ ব্যাপারে তিনি সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৯ জুলাই রাতে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা সদরপুর ইউনিয়নের চক গ্রামে সামাজিক আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ব্যবসায়ী শওকত আলীকে (৫০) নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে মামলার ২ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি ওয়াকিবুল ইসলাম লিপসনের মোবাইল ফোন পড়ে যায়। বাদীপক্ষ আসামির ফেলে রেখে যাওয়া সেই মোবাইল ফোনটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রবিউল আওয়ালকে (বিপি নং-৯৩২০২২৬৬৯৬) প্রদান করেন। কিন্তু এসআই রবিউল আউয়াল মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত মোবাইল ফোন নিজ হেফাজতে নিয়ে জব্দ তালিকায় অন্তর্ভূক্ত না করেই উক্ত মোবাইল ফোন মিরপুর থানার ডেস্ক থেকে চুরি হয়েছে মর্মে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
তিনি অসৎ উদ্দেশ্যে মামলার অন্যতম আলামত ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোনটি সুকৌশলে জব্দতালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করে লোপাট করেন।
পরবর্তীতে মামলার ভিকটিম অ্যাডভোকেট মারুক বিষয়টি কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারকে অবগত করলে আইও রবিউল আওয়ালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। একইসঙ্গে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হলে আদালত কুষ্টিয়ার সিআইডি পুলিশকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলাটি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত মোবাইল ফোনটি ইচ্ছাকৃতভাবে লোপাট করা হয়েছে এই মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করলে বিচারক তার বিরুদ্ধে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। আদালত গত ২ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে এসআই রবিউল আওয়ালের বিরুদ্ধে দণ্ড বিধি ২০১ ধারায় আপরাধ আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
এ বিষয়ে নিহত ওই ব্যবসায়ীর আপন ভাতিজা এবং উক্ত মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহিল মারুফ বলেন, এসআই রবিউল আওয়াল শুধুমাত্র দায়িত্বে অবহেলা করলে তার বিরুদ্ধে কেবলমাত্র বিভাগীয় মামলায় সীমাবদ্ধ থাকতো। কিন্তু তিনি হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামিকে এই মামলার দায় থেকে রক্ষা করার হীন কৌশল হিসেবে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া আলামত মোবাইল ফোন গায়ের করে সরাসরি ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। যা দণ্ডবিধির ২০১ ধারার সরাসরি লংঘন। বিভাগীয় ও নিয়মিত মামলা চলাকালীন সময়ে তিনি চাকরিতে বহাল রয়েছেন। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম বলেন, আদালতের দেওয়া আদেশের কপি আমি এখনও হাতে পাইনি। আদেশ হাতে পাওয়া মাত্রই এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
আল-মামুন সাগর/এফএ/জিকেএস