ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আওয়ামী লীগ নেতা খুন

পুলিশের সংবাদ সম্মেলনকে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ বলছে পরিবার

জেলা প্রতিনিধি | কক্সবাজার | প্রকাশিত: ০৮:৫৯ এএম, ২৪ আগস্ট ২০২৩

কক্সবাজারে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফ উদ্দিন খুনের ঘটনায় অবশেষে মামলা হয়েছে। নিহতের বাবা অবসরপ্রাপ্ত আনসার কমান্ডার আবুল বশর বাদী হয়ে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রাতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।

এ ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার আশরাফুল ইসলামকে বুধবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় দিকে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আসাদ উদ্দিন মো. আসিফের আদালতে তোলা হয়। সেখানেই আশরাফ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: বলাৎকারের ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করায় খুন হন আ’লীগ নেতা

গ্রেফতার আশরাফুল ইসলাম কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী ইসলামপুর এলাকার মো. হাশেম প্রকাশ কাশেম মাঝির ছেলে ও স্থানীয় একটি মাদরাসার শিক্ষার্থী।

এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতার আশরাফুলের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, মোবাইলে ধারণ করা একটি ‘অনৈতিক কর্মের ভিডিও’ দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করায় হোটেল কক্ষে সাইফ উদ্দিনকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে পালিয়ে যায় আশরাফুল।

পুলিশের সংবাদ সম্মেলনের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তাতে দ্বিমত পোষণ করেছেন নিহত সাইফ উদ্দিনের পরিবার। তারা পুলিশ সুপারের বক্তব্যকে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও প্রশ্নবোধক’ বলে মন্তব্য করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

সাইফ উদ্দিনের ছোট ভাই মহিউদ্দিন মহিম বলেন, গ্রেফতার আশরাফুল ইসলামের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সঙ্গে আমি এবং আমার পরিবার একমত নই। আমরা এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। একইসঙ্গে খুনের যথাযথ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত করে প্রকৃত কারণ উদঘাটনে পুলিশ প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।

মাহিম বলেন, একজন খুনির বক্তব্য কোনো ক্রস চেক না করে উপস্থাপন করা কতটা আইনসম্মত বা যৌক্তিক সেটিও প্রশ্ন। এটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও প্রশ্নবোধক। আশরাফুলের একার পক্ষে আমার ভাইকে খুন করার যে দাবি সেটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। কোনো ব্যক্তি কিংবা বিশেষ মহল আশরাফুলকে দিয়ে পরিকল্পনা মাফিক খুনের ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চেষ্টা করছে। এটি আমার নিষ্পাপ ভাইয়ের চরিত্র হননের অপচেষ্টা বলে মনে করি। ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা বিশ্লেষণ করে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং গ্রেফতার হওয়া আসামি নিঃসন্দেহে একজন পেশাদার খুনি।

আরও পড়ুন: হোটেলে আওয়ামী লীগ নেতা খুন, আত্মগোপনে থাকা তরুণ আটক

নিহতের ভাই আরও বলেন, সাইফ উদ্দিনকে চেতনানাশক কিছু দ্রব্য খাওয়ানোর পর অবচেতন করে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। আশরাফুল মাদরাসার ছাত্র এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি সদস্য বলে আমরা মনে করছি। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে, পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলনের পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কক্সবাজার সদর-রামু-ঈদগাঁও আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপারের বক্তব্য আমাকে মর্মাহত করেছে। উপস্থাপিত বক্তব্যটি বস্তুনিষ্ঠ নয়, এখানে খুনির সাজানো কথা উপস্থাপন হয়েছে মাত্র।

তিনি বলেন, পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে নিহত সাইফ উদ্দিনের রাজনৈতিক পরিচয় ও ব্যক্তিগত চরিত্র স্খলনের কথা বলেছেন। প্রতিহিংসাবশত তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন। আবার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত কথাগুলো চূড়ান্ত কথা নয় বলেও দাবি করেছেন। তদন্ত রিপোর্ট বের না হওয়া পর্যন্ত কোনোকিছু স্পষ্ট করে বলা যাবে না বলেও দাবি করেন। এটা যদি হয়ে থাকে তবে কেন সংবাদ সম্মেলনের নামে মৃত মানুষের চরিত্র হনন করা হলো? এ প্রশ্ন আমি এবং কক্সবাজারের মানুষের সবার।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা খুনের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে এমন সব বিষয় নিয়ে কাজ করছি। এরইমধ্যে আটক আশরাফুলের জবানবন্দি ও মেডিকেল চেকআপ শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: আবাসিক হোটেলে মিললো আওয়ামী লীগ নেতার মরদেহ

গত ২০ আগস্ট দুপুরে কক্সবাজার শহরের হোটেল হলিডে মোড়ের আবাসিক হোটেল সানমুনের ২০৮ নম্বর কক্ষ থেকে হাত বাঁধা অবস্থায় সাইফ উদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের প্রায় ১৬টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় সোমবার মধ্যরাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা যাত্রীবাহী বাস থেকে সন্দেহভাজন আশরাফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে।

সায়ীদ আলমগীর/এমআরআর/এএসএম