ফ্রুট ব্যাগিংয়ে নাবি জাতের আমে মৃদুলের ডাবল বাজিমাত
গৌড়মতি, বারি-৪ প্রভৃতি নাবি জাতের আম চাষ করে সাফল্য পাচ্ছেন পাবনার ফলচাষিরা। এমনই একজন আমচাষি মৃদুল বিশ্বাস। তিনি ফ্রুটব্যাগ ব্যবহার করে নাবি জাতের আম চাষে এখন রীতিমতো লাখপতি। তার দেখাদেখি বহু তরুণ আগ্রহী হচ্ছেন নাবি জাতের আম চাষে।
কৃষি বিভাগ বলছে, চাষিরা নাবি জাতের আম চাষ করে অন্যান্য আমের চেয়ে একদিকে দ্বিগুণ বা তিনগুণ পর্যন্ত বেশি লাভ পাচ্ছেন। অন্যদিকে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করায় ভোক্তারাও পাচ্ছেন বিষমুক্ত আম। তাই নাবি জাত সম্প্রসারণে আগামী বছর থেকে আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।
পাবনা সদর উপজেলার দুবলিয়া মহল্লার বাসিন্দা মৃদুল বিশ্বাস। তিনি শখের বসে আমচাষ শুরু করেন ৩-৪ বছর আগে। নাবি জাতের আম চাষ বেশ লাভজনক হলেও পোকা মাকড়ের আক্রমণে সমস্যায় পড়েন তিনি। তবে মাত্রাতিরিক্ত বিষ প্রয়োগ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় তিনি ফ্রুট ব্যাগিংয়ের দিকে ঝোঁকেন। গত বছর একশো গাছে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করে নাবি জাতের আম চাষে বেশ লাভবান হন তিনি। তাই এ বছর তিনি ৫ বিঘা আয়তনের আম বাগানে ৪ হাজার ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করেছেন। এতে তিনি অন্তত ৫ লাখ টাকার আম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

মৃদুল বিশ্বাস জানান, আমে বিষ দিলে তা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি কখনো চাননি গ্রাহক তার কাছ থেকে বিষাক্ত আাম কিনুক। এজন্য তিনি ফ্রুট ব্যাগিংয়ের দিকে ঝোঁকেন।
কৃষি বিভাগ বলছে, এই ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে বালাইনাশক ব্যবহার ছাড়াই শতভাগ রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণমুক্ত আম পাওয়া সম্ভব। ফ্রুট ব্যাগিং করলে বালাইনাশকের ব্যবহার কমবে ৭০-৮০ ভাগ।
সরেজমিনে মৃদুল বিশ্বাসের বাগান ঘুরে দেখা যায়, ফ্রুট ব্যাগিংয়ের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ সেখানে। এখন ব্যাগ ভর্তি রঙিন আম।
মদুল বিশ্বাস বলেন, ফ্রুট ব্যাগিংয়ের আম মিষ্টি কম, এমনটা কিন্তু না। বরং অন্য আমের তুলনায় বেশি মিষ্টি ফ্রুট ব্যাগিংয়ের আম।
নাবি জাতের সুবিধা সম্পর্কে মৃদুল বিশ্বাস জানান, মৌসুমে যে আম ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হয় সেই আম শেষের দিকে অন্তত ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করতে পারবেন। ভোক্তারাও পাবেন বিষমুক্ত আম।

এই তরুণ চাষির সাফল্য দেখে এলাকার অন্য তরুণরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। তারাও বাণিজ্যিকভাবে নাবি জাতের আম বাগান করতে চান। তার বাগানে কাজ করে কর্মসংস্থান হচ্ছে অনেকের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন জানান, সুমিষ্ট আমকে বিষমুক্ত ও রপ্তানিযোগ্য করে গড়ে তুলতে চাষিরা ব্যবহার করছেন ফ্রুটব্যাগ। এতে বালাইনাশকের ব্যবহার কম করতে হয়। আর শতভাগ রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণমুক্ত আম পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে ব্যাগের জন্য খরচ হলেও তা লাভজনক। আর নাবি জাতের আম হলে তার দাম বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
তিনি বলেন, চাষি মৃদুল বিশ্বাস এলাকায় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আশা করি তিনি লাভবান হবেন।
এফএ/এএসএম