ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সালথা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ছোটখাটো সমস্যা হলেও পাঠানো হয় সদর হাসপাতালে

জেলা প্রতিনিধি | ফরিদপুর | প্রকাশিত: ০১:৩৩ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ফরিদপুরের সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। জনবল সংকট ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি উপজেলার তিন লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল হলেও বর্তমানে রোগীদের ছোটখাটো সমস্যার জন্যও পাঠানো হয় জেলা সদরে। ফলে রোগীদের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।

জানা যায়, সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মকর্তা-কর্মচারীর ৮৬টি পদের মধ্যে শূন্য আছে ৩৪টি। প্রথম শ্রেণির মোট ৯টি পদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বাদে সবগুলোই শূন্য। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্টের চারটি পদ, আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তার একটি, সহকারী সার্জনের দুটি ও ডেন্টাল সার্জনের একটি পদ শুরু থেকেই শূন্য পড়ে আছে। ফলে চিকিৎসা সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

গুরুত্বপূর্ণ শূন্য পদগুলোর মধ্যে- উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা দুজন, মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ল্যাব) একজন, মেডিকেল টেকনিশিয়ান (রেডিও) একজন, ক্যাশিয়ার একজন, অফিস সহকারী কাম ডাটাএন্ট্রি অপারেটর দুজন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক দুজন, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক পাঁচজন, স্বাস্থ্য সহকারী ছয়জন, টিকিট ক্লার্ক একজন, কার্ডিওগ্রাফার একজন, ড্রাইভার একজন, জুনিয়র মেকানিক একজন, অফিস সহায়ক দুজন।

এ ছাড়া ২৫জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের মধ্যে আটজন প্রেষণে ফরিদপুর সদর হাসপাতালে ও এক জন টিবি ক্লিনিকে কর্মরত আছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদের সমন্বয়ে গঠিত হয় সালথা উপজেলা। ২০০৮ সালের ১৯ নভেম্বর থেকে সালথা উপজেলার পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৫ সালে সালথার বালিয়া গট্টি এলাকায় এক একর জায়গার ওপর তিনটি প্যাকেজে মোট ১৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাঁচটি ভবনের কাজ শুরু হয়। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির মোট ৭৭টি পদের জনবল থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ পদ এখনো সৃজন হয়নি। ফলে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের শরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যায় না। জনবল ও চিকিৎসক সংকট আছে। ছোটখাটো কোন সমস্যা নিয়ে এলে সামান্য প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় জেলা সদর হাসপাতালে। রোগীরা প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল হক জাগো নিউজকে বলেন, শারীরিক নানা সমস্যা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলে ঠিকমতো চিকিৎসা পাওয়া যায় না। এখানে জনবল সংকট ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকট দেখিয়ে ফরিদপুর শহরের হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের বাসিন্দা আকবর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, যেকোনো রোগে চিকিৎসা নিতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে কাউকে পাওয়া যায় না। আবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলেও মেলেনা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা। বাধ্য হয়ে ছুটতে হয় জেলা শহরে।

সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা এক রোগীর স্বজন বিধান চন্দ্র জাগো নিউজকে বলেন, করোনার সময় চিকিৎসাসেবা পেতে উপজেলাবাসী চরম বিপাকে পড়েন। বর্তমানে ডেঙ্গুর পরিস্থিতিও খুব খারাপ। এখানে লোকবল ও নানা সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা মিলছে না। আবার জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতেও শয্যা সংকট থেকে শুরু করে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের।

এ বিষয়ে সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কাজী আব্দুল মমিন জাগো নিউজকে বলেন, জনবলের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকট আছে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। তবে হাসপাতালের জরুরী বিভাগ ও অন্ত: বিভাগের জনবলের পদ সৃজনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৩০০-৩৫০ জন রোগীকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। জরুরি বিভাগেও গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০-৪০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়েছে।

আন্তঃবিভাগ চালু না থাকলেও এ সময় গড়ে ৪০-৫০ জন রোগীকে ডে-কেয়ার বেসিসে স্যালাইনসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তবে অন্তঃবিভাগ চালু করা গেলে অধিকাংশ রোগীকেই এখান থেকেই পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দীকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট আছে এটা ঠিক। তবে জনবল নিয়োগের বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিকবার পাঠানো হয়েছে। এটা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়। জনবল পরিপূর্ণ হলে হাসপাতালটির পরিপূর্ণ কার্যক্রম চালু করা এবং রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

এন কে বি নয়ন/এসজে/এমএস