বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী ইন্দ্রজিত সাহার এইচএসসি জয়
যুগে যুগে অদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে পরাজয় বরণ করেছে সব প্রতিবন্ধতা। আবারো সেটিই প্রমাণ করলেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ইন্দ্রজিত সাহা। রোববার (২৬ নভেম্বর) প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড থেকে জিপিএ-৩.২৫ পেয়ে পাস করেছে ইন্দ্রজিত সাহা।
বীরগঞ্জ উপজেলার ৩নং শতগ্রাম ইউনিয়নের প্রসাদপাড়া গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী সুদর্শন সাহার ছেলে ইন্দ্রজিত সাহা। তার এই ফলাফলে পরিবারের লোকজন যেমন খুশি তেমনই খুশি তার প্রতিবেশী এবং শিক্ষকরাও। ইন্দ্রজিত সাহার সাফল্যের পেছনে থাকা শিক্ষক এবং সহযোগী বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে পরিবারের লোকজন।
মা পপি রানী সাহা বলেন, আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই। প্রতিবন্ধী হিসেবে সামাজিক অবহেলা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতায় ভাবিনি ছেলে ইন্দ্রজিত সাহা এতোদূর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবে। তবে শিক্ষকদের পাশাপাশি বন্ধু সুমন দেবনাথ ছায়ার মতো ইন্দ্রজিতের পাশে থেকে অকৃত্রিম বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বলে তার এই সাফল্য এসেছে। কারণ বাবা মায়ের পর একমাত্র সুমন দেবনাথই ইন্দ্রজিতের ভাষা বুঝতে পারে।
ইন্দ্রজিত ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত সমাপনী পরীক্ষায় ঝাড়বাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে বৃত্তি পায়। পরে সে ঝাড়বাড়ী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৯২ পায়। এরপর একই বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.১১ নিয়ে পাস করে। সর্বশেষ ঝাড়বাড়ী মহাবিদ্যালয় থেকে ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.২৫ পেয়ে পাস করে।

আগামী দিনে ইন্দ্রজিত সাহা সমাজে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সেবা করবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তার বাবা সুদর্শন সাহা বলেন, আমরা তার ফলাফলে গর্বিত। প্রতিবন্ধী বলে তার জন্য এখন আর কষ্ট পাই না। সমাজের সকলের সহযোগিতা নিয়ে আমরা তাকে উচ্চশিক্ষিত করতে চাই। আগামী দিনেও সকলে তার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন বলে আশা করেন তিনি।
ইন্দ্রজিত সাহার সাফল্যে বন্ধু সুমন দেবনাথ বলেন, প্রতিবন্ধীরা সমাজে একটু অবহেলিত। কিন্তু আমরা বন্ধুরা ইন্দ্রজিতকে বুঝতে দেইনি সে প্রতিবন্ধী। আমি তার ভাষা বুঝতে পারতাম। তাই তার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে পেরেছি। তার সাফল্যে আজ নিজেকে সার্থক মনে হচ্ছে।
ইন্দ্রজিত সাহার সাফল্যে প্রতিবেশী সংকার কুমার সাহা জানান, একজন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী হিসেবে ইন্দ্রজিত বাবা-মায়েরসহ এলাকার মুখ উজ্জ্বল করেছে। তার এই সাফল্যে আমরা গর্বিত এবং এটি সমাজে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
ইন্দ্রজিত সাহার সাফল্য কামনা করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মতিউল ইসলাম বলেন, সমাজের অবহেলা আর অজ্ঞতাকে পিছনে ফেলে প্রতিবন্ধীরা এগিয়ে যাচ্ছে তার উদাহরণ আমাদের ইন্দ্রজিত সাহা। আমরা যদি অবহেলা না করে তাদের পাশে দাঁড়াই তাহলে তারা মাথা উঁচু করে সমাজে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। শিক্ষক হিসেবে আমি আনন্দিত ও গর্বিত।
এফএ/জেআইএম
সর্বশেষ - দেশজুড়ে
- ১ স্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে অব্যাহতি ও শোকজ
- ২ মৃতের বাড়ি থেকে ফেরার পথে সড়কে লাশ হলেন শাশুড়ি-পুত্রবধূ
- ৩ গাজীপুরে ভাড়া ফ্ল্যাটের দরোজা ভেঙে প্রধান শিক্ষিকার মরদেহ উদ্ধার
- ৪ নির্বাচন কমিশন মেরুদণ্ডহীন, ইউনূসের হাত রক্তে রঞ্জিত
- ৫ ঠাকুরগাঁওয়ে সারের ডিলারশিপ বাঁচাতে পদ ছাড়লেন ইউপি চেয়ারম্যান