এক বছরেই পত্নীতলার চিত্র পাল্টে দিয়েছেন ইউএনও রোমানা
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে গত ৭ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে দ্বিতীয় ধাপে সারাদেশের ১১০ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বদলি করা হয়। ওই তালিকায় রয়েছে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমানা আফরোজের নাম। বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলায় ইউএনও হিসেবে বদলি করা হয়েছে তাকে।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) পত্নীতলা উপজেলায় শেষ কর্মদিবস ছিল ইউএনও রোমানা আফরোজের। এ উপজেলায় এক বছর দেড় মাস দায়িত্ব পালনের সময় নানা উদ্যোগের কারণে স্থানীয়দের প্রশংসায় ভেসেছেন তিনি।
২০২২ সালের ২৫ আগস্ট পত্নীতলায় ইউএনও হিসেবে যোগদান করেছিলেন রোমানা আফরোজ। তার যোগদানের আগে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের নতুন ভবনে সেবাগ্রহীতাদের জন্য বসার কোনো জায়গা ছিল না। সেটি নজরে এলে প্রথমেই সেবাগ্রহীতাদের বসার স্থান নির্মাণ করে দেন তিনি।

ইউএনও হিসেবে এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন রোমানা আফরোজ। চকনিরখিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে নেন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে বিদ্যালয়টিতে নির্মাণ করা হয় দুধ-ডিমের ক্যান্টিন, যা বর্তমানে সেখানকার শিশু শিক্ষার্থীদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছে। এতে বিদ্যালয়টিতে বেড়েছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও।
শুধু তাই নয়, আমবাটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বিদ্যালয়টিতে ফিজিওথেরাপি মেশিন সরবরাহ করেছেন ইউএনও রোমানা আফরোজ। এক বছর আগেও বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামের অভাবে নজিপুর মহিলা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাস হতো না। সেই কলেজে বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছেন এই ইউএনও।
বছরজুড়ে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। মান্দাইন আবেদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে বিদ্যালয়টির সৌন্দর্যবর্ধন করেছেন তিনি। সেখানকার শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সাইকেল গ্যারেজ।

ক্রীড়াঙ্গনেও ইউএনও হিসেবে রেখেছেন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। তরুণ প্রজন্মের শারীরিক-মানসিক বিকাশ এবং মাদক থেকে দূরে রাখতে উপজেলায় প্রথমবারের মতো সুলতানা কামাল ইনডোর ব্যাডমিন্টন ক্লাব, নজিপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কংক্রিটের ক্রিকেট পিচ নির্মাণ, মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে (ম্যাটস) ব্যাডমিন্টন গ্রাউন্ড নির্মাণ হয়েছে রোমানা আফরোজের হাত ধরেই।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সুন্দরপুরে প্রথম শিশুপার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। ঐতিহাসিক দিবরদিঘি কেন্দ্রিক পর্যটন বিকাশে সেখানে দর্শনার্থীদের জন্য বসার বেঞ্চ ও ওয়াশরুম নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের সামনের পতিত জমিতে মডেল সবজি বাগানও করা হয়েছে ইউএনওর উদ্যোগে।

রবিউল, সোহেল, মোকসেদুল, রবীন্দ্রনাথসহ পত্নীতলা উপজেলার একাধিক বাসিন্দা বলেন, ইউএনও রোমানা আফরোজ খুবই সৃজনশীল ছিলেন। তার সময়ে সরকারি অফিসগুলোতে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি হওয়ার চিত্র প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছিল। স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক কাজ করে গেছেন তিনি। মাদকমুক্ত উপজেলা বিনির্মাণেও তিনি ভূমিকা রেখেছেন। রোমানা আফরোজ আর কিছুটা সময় থাকলে পুরো উপজেলার চিত্রই পাল্টে যেতো।
এ বিষয়ে পত্নীতলার সদ্যবিদায়ী ইউএনও রোমানা আফরোজ বলেন, পত্নীতলাকে মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে সবসময় চেষ্টা চালিয়ে গেছি। তবে এজন্য এক বছর দেড় মাস খুবই কম সময় ছিল। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। তাদের আন্তরিকতায় প্রতিনিয়ত মুগ্ধ হয়েছি।
মশিউর রহমান/এসআর/এমএস