ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা

দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করতেই নাশকতার পরিকল্পনা

জেলা প্রতিনিধি | গাজীপুর | প্রকাশিত: ০৬:৪৪ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বনখড়িয়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল লাইনে ট্রেনে নাশকতার ঘটনায় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গেফতার করা হয়।

হরতাল-অবরোধ সফল করার জন্য ব্যাপক প্রাণহানির ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য রেললাইনকে বেছে নেওয়া হয় যা দেশ ও বিদেশে আলোড়ন তৈরি করতে পারে। রোববার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মাহবুব আলম।

গ্রেফতাররা হলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা হাসান আজমল ভূঁইয়া (৫০), সদর থানা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সোহেল রানা (৩৮), জান্নাতুল ইসলাম (২৩), মেহেদী হাসান (২৫), জুলকার নাইন আশরাফি ওরফে হৃদয় (৩৫), শাহানুর আলম (৫৩) ও সাইদুল ইসলাম (৩২)।

পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে শনিবার দুঃষ্কৃতিকারী দলের সদস্য জান্নাতুল ইসলাম ও মেহেদী হাসানকে আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থান থেকে বাকি আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।এসময় নাশকতার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার ও অন্যান্য জিনিসপত্র জব্দ করা হয়।

আরও পড়ুন: মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের পাঁচ বগি লাইনচ্যুত, নিহত ১

আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সেমাবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে আজমল ভূঁইয়ার বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে মিটিং করা হয়। ওই মিটিংসমূহে রেল লাইন কেটে নাশকতা ঘটানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনা করা হয়। পরে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল লাইনে নাশকতা ঘটানো হয়। এ ঘটনার কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন:গাজীপুর/রেললাইনে নাশকতার ঘটনায় কমলাপুর রেলওয়ে থানায় মামলা

সংবাদ সম্মেলনে মাহবুব আলম জানান, ট্রেনে নাশকতা ঘটানোর উদ্দেশ্যে আাসমিরা কোনাবাড়ী থেকে ঢাকা যাওয়ার কথা বলে মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করেন। ঢাকা যাওয়ার কথা থাকলেও তারা গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করতে থাকেন। এ সময় মাইক্রোবাসে থাকা আরোহীরা মুখোশ পরা ছিলেন।

পথে তারা শহরের শিববাড়ীর জোড় পুকুরপাড় এলাকারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজনকে গাড়িতে ওঠায়। পরে তারা শহরের জোড় পুকুরপাড়ের ইবনে সিনহা তোহার বাড়ি থেকে রেল লাইন কাটার যন্ত্রপাতি, দক্ষিণ সালনাতে উসমান গণির ভাড়া দেওয়া “বাঁশ বাগান” রেস্টুরেন্ট থেকে দুটি গ্যাস সিলিন্ডার গাড়িতে ওঠান। এরপর গাজীপুর শহরের ভেতরে বিভিন্ন অলিগলিতে ঘোরাঘুরি করে রাত ১০টায় শিমুলতলী এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খান।

আরও পড়ুন:ট্রেনে নাশকতা নির্বাচনবিরোধী ষড়যন্ত্র: ওবায়দুল কাদের

রাত দেড়টার দিকে ঘটনাস্থল শ্রীপুরের বনখড়িয়া এলাকা থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার তারা দূরে বনের পাশে গাড়ি নেমে যান। পরে পায়ে হেঁটে তারা গ্যাস সিলিন্ডারসহ সরঞ্জাম নিয়ে চিনাই রেল ব্রীজের পাশে যান। সেখানে গিয়ে তারা একসঙ্গে রাত ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল সড়কের ২০ ফুট রেল লাইন গ্যাস কাটারের সাহায্যে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এর কিছু সময় পর ওই রেল সড়কে নেত্রকোনা থেকে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভোর ৪টা ১৫মিনিটের দিকে দুর্ঘটনার শিকার হয়।

এরপর তারা গাড়ি নিয়ে ঢাকায় চলে যান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে পৌঁছালে চারজন গাড়ি থেকে নেমে যায় এবং অন্য সদস্যরা মিরপুরে গিয়ে নামেন। সেখানে তারা নিজেদের কাছে টাকা না থাকায় ফোনে অন্য একজনকে টাকা পাঠাতে বলেন। সে মোতাবেক জনৈক ব্যক্তি ড্রাইভার সাইফুলের বিকাশে আটহাজার ১০০ টাকা পাঠিয়ে দেয়।

আরও পড়ুন:গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা তদন্তে পৃথক কমিটি

পুলিশ কমিশনার বলেন, রেল লাইন কেটে নাশকতার সৃষ্টি করতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে বলে গ্রেফতাররা জানিয়েছে। মাইক্রোবাসের চালক প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। পরে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ট্রেনে নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে। নাশকতার পরিকল্পনাকারী, বাস্তবায়নকারী সদস্যরা সকলেই বিএনপি এবং এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মী।

আরও পড়ুন:গাজীপুরে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৫ বগি লাইনচ্যুত

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু দল হরতাল অবরোধ দিয়ে নাশকতা সৃষ্টি করছে। গাজীপুরের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা নাশকতা সৃষ্টিকারী দুর্বৃত্তদের কাজ। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। এ ধরনের এমন পরিস্থিতি যেন আর না ঘটে সেজন্য আমরা সতর্ক থাকবো।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আহমুরুজ্জামান, গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম, গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান, রেলওয়ে কর্মকর্তা, জেলা ও মহানগর পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আমিনুল ইসলাম/এনআইবি/এএসএম