দেদারসে বালু উত্তোলন, ফেনী নদীতে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি
ফেনী নদীর চট্টগ্রামের মিরসরাই অংশে দেদারসে চলছে বালু উত্তোলন। ইজারাবিহীন জায়গা থেকে বালু উত্তোলনের কারণে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এ এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন একাধিক সিন্ডিকেট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলায় ফসলি জমি ও চর কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে কয়েকটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এতে নদী গর্ভে চলে গেছে চর তুলাতুলি নামের একটি মৌজা। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে বাড়িঘরও নদীতে বিলীন হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা।

মিরসরাই উপজেলার ফেনী নদীর মুহুরী প্রজেক্ট, শুক্কুর বারইয়ারহাট এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে তিন ফসলি জমি। হুমকির মুখে নদী পাড়ের বসতি ও মৎস্য প্রকল্প। বালু উত্তোলনের আদলে রাতের আঁধারে ফসলি জমি কাটা এবং জমি রক্ষার্থে বাঁধা দিতে আসা লোকজনকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা করার অভিযোগও রয়েছে।
এছাড়া উপজেলার ৫ নম্বর ওচমানপুর ইউনিয়নের পশ্চিম তাজপুর, পশ্চিম গোবিন্দপুর মৌজার ফতেহপুর, আজমপুর এলাকায় ফেনী নদীতে পূর্বাংশে ৩-৪টি বড় কার্টার, ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এসময় নদীর পশ্চিম পাশে আরও কয়েকটি মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করতে দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের পর বালুগুলো ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে শুভপুর, মুহুরী ব্রিজ, লেমুয়া, ধুমঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে সেখান থেকে বিক্রয় কেন্দ্রে রেখে তা বিক্রি করা হয়ে থাকে। সোনাগাজী উপজেলার চর সোনাপুর থাককোয়াছি লামছি মৌজায় একটি মহাল ইজারা নেওয়া হলেও সেখানে বালু উত্তোলন না করে মিরসরাই অংশের মোবারকঘোনা থেকে মুহুরী প্রজেক্ট পর্যন্ত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। প্রতিদিন ওইসব এলাকার সাতটি স্থান থেকে সুবিধামতো লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করছে কয়েকটি প্রভাবশালী একটি মহল। অথচ ওইসব স্পট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে ইজারা দেওয়া হয়নি।
ওচমানপুর ইউনিয়নের আজমপুর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষি নুরুল আমিন বলেন, কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে গত কয়েক বছর ধরে ফেনী নদীর আমাদের অংশে দেদারসে বালু উত্তোলন করছে একটি সিন্ডিকেট। প্রশাসনও তাদের ধরতে পারে না। কিভাবে প্রশাসনের লোকজন আসার খবর পেয়ে পালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে গত কয়েক বছরে এ এলাকার প্রায় ১০০ একর মৎস্যপ্রকল্প নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমারও ২০ একর মৎস্য প্রকল্প নদীতে চলে গেছে। আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ভোলা মিয়া, জাহাঙ্গীর আলম, মো. সেলিম, রেজাউল করিম, ফরিদুল আলম, ফারুক মিয়া, শাহ আলম, ফারুক বাবুল, মফিজুল হক, ফিরোজ কবিরসহ অনেক মৎস্য চাষি।
মিরসরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান বলেন, ফেনী নদীর ইজারাবিহীন জায়গা থেকে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে কয়েকবার অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য ব্যস্ত ছিলাম। আবার নদী এলাকায় গিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখব। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এম মাঈন উদ্দিন/আরএইচ/এমএস