ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

‘তুই যদি ছাত্রদলের প্রোগ্রামে যাস, তোরে গুলি করে মারবো’

জেলা প্রতিনিধি | যশোর | প্রকাশিত: ০৭:১০ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ছাত্রদলের কোনো কার্যক্রমে অংশ নিলে এক শিক্ষার্থীর প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন ছাত্রলীগ যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় (এম এম কলেজ) শাখা নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এসময় ওই শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল কর্মীকে বেধড়ক মারধরও করা হয় বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার ছাত্রদল কর্মীর নাম কানোয়ার হোসেন (২৪)। তিনি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অর্নাস চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আহত ছাত্রদল কর্মী কানোয়ার জানান, বৃহস্পতিবার রাতে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষা সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেই শিক্ষা সফরের টিশার্ট আনতে কলেজের ডিপার্টমেন্টে যান তারা। ক্যাম্পাসে পৌঁছালে ছাত্রলীগের কর্মী রবিউল ইসলাম ও এনামুল ইসলাম তাদেরকে ডেকে নেয়। এরপর কলেজ ছাত্রদলের সভাপতির সঙ্গে থাকা একটি ছবি দেখিয়ে ওরা বলে, ‘তুই ছাত্রদল করিস’। এই বলে কলেজের ছাত্র কমন রুমে নিয়ে যায়। এরপর কমন রুমের ভিতরে দরজা বন্ধ করে ৮-১০ জন বেধড়ক মারধর করা শুরু করে।

এক পর্যায়ে কমনরুমের বাথরুমে নিয়ে সাত আটজন মিলে স্ট্যাম্প দিয়ে সারা শরীরে মারধর শুরু করেন। এরপর কলেজের শিক্ষকরা সেখানে আসলে দক্ষিণগেটে নিয়ে সেখানেও দ্বিতীয় দফায় মারধর করে করা হয়। মারপিটের মধ্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলে ‘তুই যদি ছাত্রদলের প্রোগ্রামে যাস, তোরে মেরে ফেলবো। গুলি করে মারবো।’

প্রত্যাক্ষদর্শী ও আহত ওই শিক্ষার্থীর বন্ধুরা জানান, ‘কানোয়ারকে বেধড়ক মারধর করতে দেখে আমরা কয়েকজন বন্ধু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাত পা জড়িয়ে ধরলাম। তাদের বললাম ওরে মাফ করে দেন। তারপরেও তারা মার থামাননি। কয়েকটা স্ট্যাম্প ভেঙ্গে ফেলেছেন মারতে মারতে। এরপর আবার এক গলিতে নিয়ে আবার দ্বিতীয় দফায় কাঠ দিয়ে মারধর করেছেন।’

আহত ছাত্রদল কর্মীর খালা সালমা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘গ্রাম থেকে শহরে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছি ছেলের ভবিষ্যত গড়ার জন্য। কানোয়ার সক্রিয় রাজনীতি করে না। ক্যাম্পাসে যদি ছাত্রদের নিরাপত্তা না থাকে তাহলে কিভাবে হবে? এভাবে মানুষ মানুষকে পিটাতে পারে? এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’

এদিকে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্রদল কর্মীর খোঁজ খবর নিতে যান কলেজ ও জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

এসময় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ রাজনীতি করে না। সারাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগের নেতারা অছাত্র দিয়ে সংগঠন চালাচ্ছে। ক্যাম্পাসে ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে। গণতান্ত্রিক দেশে সবাই ছাত্ররাজনীতি করতে পারে। এর আগেও এম এম কলেজের কর্মসূচিতে হামলা করেছে ছাত্রলীগ। এই দায় কলেজ প্রশাসনকে নিতে হবে। এ ঘটনার তিব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াস বলেন, ‘এম এম কলেজে বর্তমানে ছাত্রলীগের কমিটি নাই। ছাত্রদলের কর্মীকে মারপিটে ছাত্রলীগ জড়িত নয়। তাদের অভিযোগ মিথ্যা।’

যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বিচিত্র মল্লিক জানান, ‘আহত কানোয়ার হোসেনের শরীরে এলোপাতাড়ি মারপিটের চিহ্ন রয়েছে। মাথায় কাটা দাগ রয়েছে। সারা শরীরে কালো দাগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে ওই শিক্ষার্থী এখন শঙ্কামুক্ত।

এ বিষয়ে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ প্রফেসর মর্জিনা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, ‘মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি। কমনরুমে শিক্ষার্থীদের জটলার খবর শুনে কয়েকজন স্যারকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু স্যারেরা তেমন কোনো ঘটনা দেখতে পাননি। তারপরও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মিলন রহমান/এনআইবি/জিকেএস