ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঈদ সামনে দেড়শ কোটি টাকার জামদানি বিক্রির আশা

জেলা প্রতিনিধি | নারায়ণগঞ্জ | প্রকাশিত: ০৫:৫৯ পিএম, ১৫ মার্চ ২০২৪

হাত দিয়ে সুতা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে চলছে বুনন কাজ। দম ফেলার যেন ফুসরত পাচ্ছেন না কারিগররা। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে এ ব্যস্ততা চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। কোনো কোনো সময় ঘড়ির কাঁটা ১০ পেরিয়ে ১১ কিংবা ১২টা পর্যন্তও চলে যায়। পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিদিনই এমন ব্যস্ততা চলছে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকার জামদানি পল্লিতে এমনই দৃশ্য দেখা গেছে। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ১৫০-১৬০ কোটি টাকার বেচাকেনা হতে পারে বলে ধারণা করছেন জামদানি সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিসিক জামদানি শিল্প নগরীর আওতায় যে শিল্পনগরী আছে সেখানে সবমিলিয়ে প্লট হচ্ছে ৪০৭টি। উদ্যোক্তা রয়েছেন ৪০৭ জন। সবমিলিয়ে তাদের এক হাজার ৬৬৫টি তাঁত রয়েছে। এসব তাঁতকে ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের। নিজ হাতেই তাদের সব কাজ করতে হয়। এখানে মেশিনের কোনো কাজ নেই।

ঈদ সামনে দেড়শ কোটি টাকার জামদানি বিক্রির আশা

২০-২২ বছর ধরে জামদানি পল্লিতে শাড়ি বুনন করে আসছেন মাইদুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সামনে ঈদ। এজন্য আগের তুলনায় কাজের চাপ অনেক বেড়েছে। সবসময় কাজের ওপর থাকতে হচ্ছে। বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ নেই।’

কারিগর নাদিম বলেন, ‘আমি প্রায় ১৭ বছর ধরে জামদানি শাড়ি বুনে আসছি। প্রতিবছর ঈদ সামনে কাজের চাপ বেড়ে যায়। এবারও কাজ বেড়েছে। আমরা চাই কাজ বাড়ুক। কাজ বাড়লে মালিক, মহাজন, শ্রমিক আমরা সবাই ভালো থাকি।’

জামদানি পল্লিতে কাজ করেন শামীম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে সকাল ৯টা বাজে আসতাম। এখন প্রতিদিন ভোর ৫টায় আসতে হয়। আগে সন্ধ্যার পরেই বাসায় চলে যেতাম। এখন বাসায় ফিরতে হয় কখনো ১০টা কখনো ১১টায়। এখন কাজের চাপ বেড়েছে।’

ঈদ সামনে দেড়শ কোটি টাকার জামদানি বিক্রির আশা

বাজার নষ্ট করছে ইন্ডিয়ান শাড়ি

জুনায়েদ জামদানি তাঁতঘরের মালিক রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইন্ডিয়ান জামদানির কারণে আমাদের বাজার নষ্ট হচ্ছে। তারা মেশিনের মাধ্যমে জামদানি বোনেন। যে কারণে তাদের খরচ কম হয়। তারা কম দামে বিক্রি করতে পারেন। যেটা আমরা পারি না। তারা একটি শাড়ি দুই হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারে। কিন্তু আমাদের একটি জামদানি শাড়ি বুনতেই দুই হাজার টাকার সুতা লাগে। আমরা সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকার নিচে একটি শাড়ি বিক্রি করতে পারি না। সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় লাখ টাকা।’

ঈদ সামনে দেড়শ কোটি টাকার জামদানি বিক্রির আশা

তিনি বলেন, ‘আগে প্রতিমাসে ১০০ শাড়ি বিক্রি হলেও এখন ইন্ডিয়ান শাড়ির কারণে আমাদের বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে গেছে। আগে ঈদ সামনে আমাদের বেচাকেনা অনেক ভালো ছিলো। এখন তুলনামূলক অনেক কম।’

আসল জামদানি মিলবে বিসিকে

কথা হয় শাহ আলম নামের একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি জামদানি পরিবারের সন্তান। এখন অনলাইনেও দেখি জামদানি বিক্রি হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অনেকেই জামদানি শাড়ি চেনেন না। ইন্ডিয়ার মেশিনের তৈরি শাড়ি জামদানি বলে চালিয়ে দিচ্ছে। আসলে এটা জামদানি শাড়ি না। আসল জামদানি শাড়ি কিনতে হলে বিসিকে আসতে হবে।’

ঈদ সামনে দেড়শ কোটি টাকার জামদানি বিক্রির আশা

তিনি বলেন, ‘আমাদের জামদানি শাড়ি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। ঈদকে কেন্দ্র করে আমাদের এখন নতুন নতুন কালেকশন তৈরি হচ্ছে। নতুন নতুন শাড়িও হচ্ছে। এখন পল্লিতে এলে ভালো শাড়ি পাওয়া যাবে।’

ঈদ সামনে দেড়শ কোটি টাকার জামদানি বিক্রির আশা

রূপগঞ্জ জামদানি শিল্পনগরী কার্যালয়ের কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এখানে সব রকমের উদ্যোক্তা আছে। কারও বেচাকেনা বেশি হয়, কারও কম। সবমিলিয়ে কত বেচাকেনা হয় তার নির্দিষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে ধারণা করা যায়, যাদের ১৫-২০টির মতো তাঁত আছে তাদের রমজান ও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে এক থেকে দেড় কোটি টাকার শাড়ি বিক্রি হবে। আর যাদের তাঁত সংখ্যা কম তাদের একটু কম হবে। সবমিলিয়ে আমাদের জামদানি শিল্পনগরীতে এবার ১৫০-১৬০ কোটি টাকার বেচাকেনা হবে হবে বলে আশা করছি।

মোবাশ্বির শ্রাবণ/এসআর/এএসএম