ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বাগেরহাটে শুকিয়ে গেছে খাল-বিল, বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার

জেলা প্রতিনিধি | বাগেরহাট | প্রকাশিত: ০৮:৫৪ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলা মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল ও শরণখোলায় বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার চলছে। খাল-বিল, পুকুর-নালা প্রায় শুকিয়ে গেছে। গৃহস্থালির কাজ, অজু-গোসল করতে এখন কাদা ও লবণ পানি ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ।

শরণখোলার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন লিটন জানান, উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারে অবস্থিত জেলা পরিষদের একমাত্র পুকুরের পানি শত শত মানুষ ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু এক মাস ধরে পানি শুকিয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এখন পানি তুললে কাদা উঠে আসে। অজু-গোসলসহ ঘর-গৃহস্থালির কাজ প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর রাজাপুর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি মেম্বার জাকির হোসেন খান জানান, তাদের এলাকার চিনির খালপাড়, মাছের খালপাড়, সাবারপাড়, বটতলার সব পুকুর-খাল ও জলাশয় শুকিয়ে গেছে। কোথাও পানি নেই। এলাকাবাসী এখন চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে পার্শ্ববর্তী ধানসাগর ইউনিয়নের আমড়াগাছিয়া থেকে পানি এনে কোনো রকমে চলছেন। এলাকায় শিশুদের বেশিরভাগই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।

বাগেরহাটে শুকিয়ে গেছে খাল-বিল, বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার

উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের খুড়িয়াখালী গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক রাসেল বয়াতি। তিনি জাগো নিউজকে জানান, তাদের পার্শ্ববর্তী গ্রাম চালিতাবুনিয়ায় এখন একটিমাত্র পুকুরে পানি আছে। ৭-৮ কিলোমিটার দূর থেকে মানুষ এসে ওই পুকুর থেকে পানি নিচ্ছে। তাফালবাড়ি, সোনাতলা, বকুলতলা, খুড়িয়াখালী ও শরণখোলা গ্রামের মানুষের এখন ওই একটি পুকুরই ভরসা।

আরও পড়ুন:

তিনি বলেন, ‘ভ্যান-রিকশা করে একবার পানি নিতে ৫০০ টাকা খরচ পড়ছে। সবার পক্ষে ওই টাকা খরচ করে পানি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে বকুলতলা গ্রামে পুলিশের দেওয়া একটি পানির প্ল্যান্ট দিয়ে কিছু মানুষ খাবার পানি নিতে পারছেন।’

বাগেরহাটে শুকিয়ে গেছে খাল-বিল, বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার

ধানসাগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম টিপু জানান, তার ইউনিয়নের বেশিরভাগ খাল, বিল ও জলাশয় শুকিয়ে গেছে। আমড়াছিয়া এলাকায় দুটি পানির প্ল্যান্ট বসানোর কারণে ওই এলাকায় খাবার পানির কিছুটা লাঘব হচ্ছে। তবে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করার মতো কোনো পানি নেই। পাশাপাশি গবাদিপশুর খাওয়ার পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে।

রায়েন্দা ইউপি চেয়ারম্যান আজমল হোসেন মুক্তা জানান, তার ইউনিয়নে তীব্র পানি সংকট চলছে। কোথাও কোনো পানি নেই। পানির জন্য মানুষ হাহাকার করছে।

পানি সংকট ও অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে ১৫ দিন ধরে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে বলে জানান শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. প্রিয় গোপাল বিশ্বাস।

বাগেরহাটে শুকিয়ে গেছে খাল-বিল, বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার

তিনি জানান, প্রতিদিন গড়ে অর্ধশত মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ফিরোজা আক্তার নামের এক স্কুলশিক্ষিকার মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে তাদের খাবার স্যালাইনের কোনো সংকট না থাকলেও আইভি স্যালাইনের সংকট রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী মেহেদি হাসান বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশনায় জরুরি ভিত্তিতে ২৭ এপ্রিল থেকে একটি ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট দিয়ে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে। এছাড়া যেসব ন্যানো ফিল্টার ও সোলার ফিল্টারে ত্রুটি রয়েছে, তা দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বাগেরহাটে শুকিয়ে গেছে খাল-বিল, বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার

এ বিষয়ে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ভ্রাম্যমাণ প্ল্যান্ট থেকে উত্তর রাজাপুরসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের শত শত মানুষ পানি সংগ্রহ করছেন। এ প্ল্যান্ট থেকে ঘণ্টায় ৬০০ লিটার করে প্রতিদিন পাঁচ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি দেওয়া যাবে। এ প্ল্যান্ট থেকে দূষিত পানিও বিশুদ্ধ করা সম্ভব। এতে প্রতিদিন খরচ হবে চার হাজার টাকা।

এসআর/এএসএম