ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

তাপপ্রবাহে মরে যাচ্ছে ঘেরের চিংড়ি, দিশেহারা চাষিরা

জেলা প্রতিনিধি | সাতক্ষীরা | প্রকাশিত: ০৯:৪৮ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

সাতক্ষীরায় প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে চিংড়ি ঘেরে মড়ক দেখা দিয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, পর্যাপ্ত পানির অভাব, অতিরিক্ত লবণাক্ততা ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে ঘেরে বাগদা চিংড়ি মরে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য বিভাগ।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর পরিমাণ জমির ৫৪ হাজার ৯৬০টি লবণ পানির ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বাগদা চাষ হয়েছে শ্যামনগর, আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলায়।

শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া এলাকার ঘের ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ঘের শুকিয়ে পোনা মাছ ছাড়া হয়। কিছুদিন আগেও ঘেরে ২০ হাজার পোনা ছেড়েছিলাম। তবে কয়েকদিনে তাপপ্রবাহে ঘেরের মাছ মরে ভেসে উঠছে। জীবিত যেসব মাছ পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর শরীরও দুর্বল। মাছ লালচে হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ঘেরে সাধারণত ২-৩ ফুট পানি রাখতে হয়। এখন ঘেরের পানি কমে গেছে। নতুন করে পানি দিতে পারছি না।

বুড়িগোয়ালিনী এলাকার চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ী সন্তোষ মণ্ডল জাগো নিউজকে জানান, ৫০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকা ঋণ করেছেন। চলতি মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার আশা ছিল, তাতে ঋণ পরিশোধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ মাছ মরার কারণে এখন পর্যন্ত লাখ টাকারও মাছ বিক্রি হয়নি।

আরও পড়ুন:

ঈশ্বরীপুর গ্রামের এলাকার চিংড়ি চাষি ইব্রাহিম খলিল জাগো নিউজকে জানান, ২০১২ সাল থেকে তিনি ঘের করছেন। এবারও ১০ বিঘা জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন। ঘেরে ৪৫ হাজার বাগদার পোনা ছেড়েছিলেন। এখন প্রতিটি ৪০ গ্রাম করে ওজন হয়েছে। কিন্তু তীব্র এ গরমে পানি বিষিয়ে ওঠায় মাছ মারা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ঘেরে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে। নিয়মিত পরিচর্যাও করা হয়। তবে রোদের কারণে কোনো হিসাব-নিকাশ মিলছে না।

একই এলাকার চিংড়ি চাষি রেজাউল ইসলাম বলেন, তিনি এবার নিজের এবং অন্যের জমি ইজারা মিলিয়ে ২০০ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করেছেন। প্রথম কোটায় অবমুক্ত করা বাগদা মাছ মরে গেছে। এতে তার তিন লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। তার এলাকার ঘেরগুলোতে পর্যাপ্ত পানি নেই বলে জানান তিনি। তার ওপর প্রচণ্ড রৌদ্রের জন্য পানি লালচে হয়ে উঠছে।

চিংড়ি চাষিরা বলছেন, এ পর্যন্ত কোনো ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি ঘেরে গিয়ে কী কারণে মাছ মারা যাচ্ছে বা তাদের কী করা উচিত সে বিষয়ে মৎস্য বিভাগ থেকে কেউ পরামর্শ দেননি। তাই একমাত্র জীবিকা চিংড়ি চাষ নিয়ে সমস্যায় রয়েছেন তারা।

চিংড়ির আড়তদাররা জানান, এবার মাছ মরে যাওয়ার কারণে উৎপাদন কম। এজন্য বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গত মৌসুমে জেলায় ২৪ হাজার ৫৪৭ টন বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। তবে, চলতি মৌসুমে চিংড়ি উৎপাদন গতবারের তুলনায় অনেক কম হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সারাদেশে মোট যে পরিমাণ রপ্তানিজাত চিংড়ি উৎপাদন হয় তার ৬৫-৭০ শতাংশ জোগান দেয় সাতক্ষীরা জেলা। তবে অতিরিক্ত তাপপ্রবাহে ঘেরে পানি কমে গেলে বাগদা চিংড়ি মারা যেতে পারে। এবার প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, পর্যাপ্ত পানি না থাকা ও অতিরিক্ত লবণের কারণে বেশি মাছ মারা যাচ্ছে। মৎস্য বিভাগ থেকে এ বিষয়ে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

আহসানুর রহমান রাজীব/এসআর/এএসএম