দেশে প্রথম তৈরি হলো রেলের ইঞ্জিন ও কোচ ঘোরানোর ‘টার্ন টেবিল’
লালমনিরহাট রেলওয়েতে ব্রিটিশ আমলের অকেজো যন্ত্রাংশ সরিয়ে নতুন করে স্থাপন করা হয়েছে দেশের প্রথম রেলের ইঞ্জিন ও কোচ ঘোরানোর ‘টার্ন টেবিল’। লালমনিরহাট রেলওয়ে যন্ত্র প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে নতুন করে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে লালমনিরহাট রেল বিভাগে। এরআগে প্রায় তিন দশক ধরে বিকল ছিল এটি।
গত ১৩ মে টার্ন টেবিলটি সফলভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা আছে এটি। এর আগে দীর্ঘ তিন দশক ধরে ঝুঁকি নিয়ে উল্টো দিকেই ট্রেন চালাতে হয়েছে চালকদের।
সরেজমিন দেখা গেছে, লালমনিরহাট রেলস্টেশনের উত্তর-পূর্ব দিকে সিক লাইন এলাকায় প্রায় ১০ শতক জমির ওপর টার্ন টেবিলটি নির্মাণ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ব্যতিক্রমী এ টার্ন টেবিলটি দেখতে শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসছেন। ঘুরতে আসা অনেকেই বলছেন, ট্রেনে ইঞ্জিন ও বগি এভাবে ঘুরানো হয় এর আগে কোথাও দেখিনি। আর বিষয়টি জানাও ছিল না।

লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে দপ্তর সূত্রে জানা যায়, রেলের কোচ বা ইঞ্জিনকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর টার্ন টেবিলের ওপর রেখে ঘোরানো হয়। এতে বাম দিকের চাকা ডান দিকে, ডান দিকের চাকা বাম দিকে চলে যায়। ফলে দুই পাশের চাকা সমানভাবে ক্ষয় হয়। এতে চাকার স্থায়িত্ব বাড়ে ও দুর্ঘটনা ঝুঁকি কমে।
ব্রিটিশ আমলে তখনকার কর্মকর্তারা যন্ত্রপাতি নিয়ে এসে লালমনিরহাটে টার্ন টেবিল প্রস্তুত করেন। যা ১৯৯৩ সালে বিকল হয়ে পড়লে ব্যবহার বন্ধ করে রেলওয়ে দপ্তর। এরপর থেকে লালমনিরহাট বিভাগের কোচ ও ইঞ্জিন ঘোরানোর জন্য কোচ ও ইঞ্জিনগুলো কয়েক মাস পর পর ঢাকায় নেওয়া হতো। এতে সময় ও অর্থ অপচয় হতো। তাই দেশেই টার্ন টেবিল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে লালমনিরহাটের টার্ন টেবিলটি পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর নতুন করে টার্ন টেবিল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপকের (পশ্চিম) কার্যালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদনের চিঠি দেওয়া হয়। অবশেষে বিভাগীয় রেলওয়ে দপ্তরের প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) মো. তাসরুজ্জামানের (বাবু) নকশা ও প্রযুক্তিতে এটি তৈরি হয়েছে। নির্মাণকাজ শুরু হয় চলতি বছরের জানুয়ারিতে। শেষ হয় মার্চ মাসে। এতে ব্যয় হয়েছে ২৫ লাখ টাকা।
টার্ন টেবিল দেখতে আসা কলেজছাত্র সজিব বলেন, ট্রেনের ইঞ্জিন ও বগি ঘোরানো যন্ত্রটি দেখতে এসেছি। দেখে অনেক ভালো লাগলো। উদ্বোধনের দিনও উপস্থিত থাকার চেষ্টা করবো।

বিভাগীয় রেলওয়ে দপ্তরের প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামান বলেন, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এ টার্ন টেবিলের কার্যকারিতা সফলভাবে যাচাই করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম টার্ন টেবিল। ৩৫০ টন ওজনের ভার বহনে সক্ষম এ টার্ন টেবিলে ১৪ টন ওজনের একটি ব্রিজ রয়েছে। এটি এই যন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর ওপরে ইঞ্জিন ও কোচ তুলে ঘোরানো হয়।
স্থাপনাটির তিন ধাপে পাকা দেওয়াল রয়েছে; যা সীমানাপ্রাচীর, সুরক্ষাপ্রাচীর ও লাইন দেয়াল নামে পরিচিত। এরমধ্যে দেওয়া আরসিসি ঢালাই। এতে পানি জমলে পানির পাম্প দিয়ে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবদুস সালাম বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে কম টাকা ব্যয়ে টার্ন টেবিলটি নির্মিত হয়েছে। রেলওয়ে কর্মকর্তারা নিজেদের মেধা দিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন। এটি অব্যাহত থাকবে।
রবিউল হাসান/এসআর/জিকেএস