ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

নোটিশ ছাড়াই উচ্ছেদ

ঘর হারিয়ে কাঁদছেন ৫ সহোদর, জনরোষে পালালেন ম্যাজিস্ট্রেট

জেলা প্রতিনিধি | কুষ্টিয়া | প্রকাশিত: ০৮:৪২ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫

পূর্ব নোটিশ ছাড়াই আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযানে পাঁচ সহোদরের ঘরবাড়ি ভেঙে দেয় প্রশাসনের একটি দল। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কয়েকশ বিক্ষুদ্ধ জনতা অভিযানস্থলে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ম্যাজিস্ট্রেটসহ আভিযানিক দলটি। পরে উত্তেজিত জনতা বাদীপক্ষের আধাপাকা টিনশেড ঘরে ভাঙচুর চালায়।

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নের বাটিকামারা এলাকায় এমনই ঘটনা ঘটে। বিকেল ৫টার বিক্ষুদ্ধ জনতা ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ সহোদরকে নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।

ঘর হারিয়ে কাঁদছেন ৫ সহোদর, জনরোষে পালালেন ম্যাজিস্ট্রেট

স্থানীয়রা জানান, কুমারখালীর তরুণ মোড়-তারাপুর সড়কের বাটিকামারা এলাকায় ১০ শতাংশ সরকারের এক নম্বর খতিয়ানের খাসজমি রয়েছে। তারমধ্যে ৫ শতাংশ জমিতে প্রায় ৩০ বছর আগে ওই গ্রামের দিনমজুর ইসমাইল শেখ বসবাস শুরু করেন। তার বসবাসের প্রায় পাঁচ বছর পরে অবশিষ্ট পাঁচ শতাংশে বাস শুরু করেন মৃত আছাম উদ্দিনের স্ত্রী বুলু খাতুন। বুলু আওয়ামী লীগের সাবেক এক এমপির বাড়িতে কাজ করতেন। ১৯৯৫-১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ১০ শতাংশ জমি নিজের নামে স্থায়ী বন্দোবস্ত করে নেন ওই নারী।

২০০২ সালে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে বুলুর কাছ থেকে পাঁচ শতাংশ জমি কেনেন ইসমাইল শেখ। সেখানে ইসমাইলের স্ত্রী আমিরন নেছা ও তাদের পাঁচ সন্তান সাজু, রাজু, সাঈদ, লালন শেখ ও কুতুব উদ্দিন বসবাস করছিলেন। ২০১৭ সালে কুষ্টিয়া আদালতে বুলু খাতুনকে দিয়ে উচ্ছেদের মামলা করেন তার নাতি ছেলে রাজিব হোসেন। আদালত ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর পাঁচ সহোদরের জমি থেকে উচ্ছেদের আদেশ দেন। তবে তাদের উচ্ছেদের কোনো নোটিশ না দিয়েই সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদিত্য পাল অভিযান পরিচালনা করেন।

ঘর হারিয়ে কাঁদছেন ৫ সহোদর, জনরোষে পালালেন ম্যাজিস্ট্রেট

অভিযানে তিনটি ঘর উচ্ছেদের পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কয়েকশ বিক্ষুদ্ধ জনতা ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজনা সৃষ্টি করেন। তখন দ্রুত আভিযানিক দল নিয়ে পালিয়ে যান ম্যাজিস্ট্রেট। পরে বিক্ষুদ্ধ জনতা বুলুর নাতি রাজিবের ঘরবাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালান।

সরেজমিন দেখা যায়, ইসমাইল শেখের ছেলেদের তিনটি ঘর ভেঙে মাটিতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট দুটি ঘরের চাল থাকলেও বেড়া ও ভেতরের মালামাল নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশ।

এসময় ইসমাইলের স্ত্রী আমিরন নেছা কান্না করতে করতে বলেন, ‘ব্যাটা আমার সব শ্যাষ। আর কিছুই নাই। কোনে যাবো? থাকার জাগাও নাই। ছোয়ালরাও সবাই দিনমজুর। কিডা আমারে দেখবিনি।’

ঘর হারিয়ে কাঁদছেন ৫ সহোদর, জনরোষে পালালেন ম্যাজিস্ট্রেট

তার ছেলে সাজু শেখ বলেন, ‘৩০ বছর আগে এখানে সরকারি পুকুর ছিল। আমরায় প্রথমে বাস শুরু করি। কিন্তু রাজিব আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনকে টাকা দিয়ে জমি বন্দোবস্ত নিয়েছে। পরে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনিছি। তবুও কোর্টে মামলা করে মিথ্যা রায় নিয়ে সব ভাঙে দিছে। আমি এর বিচার চাই।’

আরেক ছেলে সাঈদ শেখ বলেন, ‘আদালত আগে থেকে কোনো নোটিশ করিনি। আজ হঠাৎ করে ভাঙচুর চালিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’

জানতে চাইলে অভিযুক্ত রাজিব হোসেন বলেন, ‘সরকার আমার নানি ও নানার নামে ১০ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত দিছে। তারমধ্যে পাঁচ শতক ওরা জোর করে দখল করেছিল। মামলার পর আজ আদালত উচ্ছেদ চালিয়েছেন।’

ঘর হারিয়ে কাঁদছেন ৫ সহোদর, জনরোষে পালালেন ম্যাজিস্ট্রেট

তবে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি অভিযান পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেট আদিত্য পাল।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলায়মান শেখ বলেন, আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান চলছিল। সেখানে পূর্ব কোনো নোটিশ না থাকায় জনরোষ তৈরি হয় এবং অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম। আর এসব ঘটনার কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান।

আল-মামুন সাগর/এসআর/এমএস