ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

শেয়ারবাজারে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করলো রেকিট বেনকিজার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১১:১৬ এএম, ০৮ এপ্রিল ২০২৫

দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে রেকর্ড লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি রেকিট বেনকিজার। কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের ৩ হাজার ৩৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ কোম্পানিরটির শেয়ারহোল্ডাররা প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ হিসেবে নগদ ৩৩৩ টাকা পাবেন।

২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের ব্যবসার ওপর এই লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এর আগে কখনো এতো বেশি লভ্যাংশ দেয়নি কোনো কোম্পানি।

ইতিহাস সৃষ্টি করা এই লভ্যাংশের অর্থ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণের জন্য কোম্পানিটিকে রিজার্ভে হাত দিতে হবে। কারণে সমাপ্ত হিসাব বছরটি যে মুনাফা হয়েছে, ঘোষিত লভ্যাংশ তার দ্বিগুণের বেশি।

কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে এই লভ্যাংশের তথ্য জানানো হয়েছে। ডিএসই জানিয়েছে, লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে আজ কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে কোনো সার্কিট ব্রেকার থাকবে না। অর্থাৎ শেয়ারের দাম যত খুশি বাড়তে বা কমতে পারবে।

পরিচালনা পর্ষদের ঘোষণা করা এই লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেওয়ার জন্য বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ২৮ মে অনুষ্ঠিত হবে। আর লভ্যাংশ পাওয়া যোগ্য বিনিয়োগকারী নির্ধারণে রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ এপ্রিল।

সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি শেয়ার প্রতি মুনাফা করেছে ১৫৯ টাকা ১৭ পয়সা। এই মুনাফার ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠানটি শেয়ার প্রতি ৩৩৩ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের অর্থ বুঝিয়ে দিতে প্রতিটি শেয়ারের জন্য রিজার্ভ থেকে ১৭৩ টাকা ৮৩ পয়সা নিতে হবে।

এর আগে করোনা মহামারির মধ্যে ২০১৯, ২০২০ এবং ২০২১ সালের একের পর এক রেকর্ড পরিমাণ লভ্যাংশ ঘোষণা করে এই বহুজাতিক কোম্পানিটি। তবে ২০২২ ও ২০২৩ সালে কোম্পানিটির লভ্যাংশের পরিমাণ কমে যায়।

১৯৮৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া পর ২০১৯ সালের জন্য কোম্পানিটি প্রথমবার এক হাজার শতাংশের বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করে। কোম্পানিটির বড় ধরনের ওই লভ্যাংশের ঘোষণা এমন সময় আসল যখন মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে সারাবিশ্ব অনেকটাই স্থবির ছিল।

বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এরপর সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলে ২৬ মার্চ থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রয়েছে। এই বন্ধের মধ্যেই বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় ধরনের সুখবর দেয় রেকিট বেনকিজার। ২০১৯ সালের সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি ১ হাজার ২৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়।

ডেটল, মরটিন, হারপিক, ভ্যানিশ, লাইজল ও ভিটসহ কয়েকটি প্রসাধন পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা করা কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর থেকেই শেয়ারহোল্ডারদের মোট অঙ্কের লভ্যাংশ দিয়ে আসছে।

ফলে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার বরবরই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। যে কারণে শেয়ারবাজারের সব থেকে দামি শেয়ারের প্রতিষ্ঠান এটি। ২০১৯ সালে লভ্যাংশ চমক দেখানোর পর ২০২০ সালেও চমক দেখায় কোম্পানিটি। ওই বছর ১ হাজার ৪০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে।

কোম্পানিটির লভ্যাংশে এর থেকে বড় চমক অপেক্ষা করছিলো ২০২১ সালের জন্য। অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে ২০২১ সালের সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১ হাজার ৬৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়।

লভ্যাংশের ক্ষেত্রে পরপর তিন বছর একের পর এক রেকর্ড সৃষ্টির পর ২০২২ সালে কোম্পানিটির লভ্যাংশে কিছুটা ভাটা পড়ে। ২০২২ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৯৮০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। এরপর ২০২৩ সালে তা আরও কমে ৫৫০ শতাংশে নেমে আসে।

পরপর দুই বছর লভ্যাংশ কমার পর এবার ইতিহাস সৃষ্টি করা লভ্যাংশ ঘোষণা করলো এই বহুজাতিক কোম্পানি। রেকর্ড ৩ হাজার ৩৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে আর কোনো কোম্পানি এতো বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, ওষুধ ও রসায়ন খাতের প্রতিষ্ঠান রেকিট বেনকিজার ২০১৮ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ৭০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তার আগের বছর ২০১৭ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ৭৯০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ২০১৬ সালে ৭৭৫ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ৬৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় এই কোম্পানিটি।

নিয়মিত এমন বড় লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ মাত্র ৪ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর শেয়ার সংখ্যা ৪৭ লাখ ২৫ হাজার। এর মধ্যে ৮২ দশমিক ৯৬ শতাংশ শেয়ারই রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। সে হিসাবে শেয়ারহোল্ডারদের বড় লভ্যাংশ দিলেও তার সিংহভাগই নিয়ে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা।

অপরদিকে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৫ দশমিক ১২ শতাংশ শেয়ার। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ ও বিদেশিদের কাছে ২ দশমিক ৪২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বাকি ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সরকারের কাছে।

এমএএস/এসএনআর/জিকেএস