অধিক মুনাফায় সর্বোচ্চ নিরাপদ যে বিনিয়োগ

সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে বের হতে পারছে না দেশ। এক বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি অব্যাহত থাকায় বেশ চাপে রয়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষগুলো। প্রতিদিনের খরচ মেটাতেই এখন তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতেও যারা অল্পকিছু সঞ্চয় করতে পারছেন, তারা হয়তো তা যথাযথভাবে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন।
সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্তভাবে যদি আপনি আপনার কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে আপনার জন্য সরকারি ট্রেজারি বন্ড হতে পারে একটি অন্যতম মাধ্যম। সর্বোচ্চ নিরাপদ এই বিনিয়োগ এবং বর্তমান মুনাফার হারও বেশ আকর্ষিণীয়। সঞ্চয়পত্রের থেকেও এখন ট্রেজারি বন্ড থেকে বেশি মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
ট্রেজারি বন্ড সরকার কর্তৃক গ্যারান্টিযুক্ত। ফলে ডিফল্টের ঝুঁকি নেই। নির্দিষ্ট সময় অন্তর সুদ বা মুনাফা পাওয়া যায়। কিছু ট্রেজারি বন্ডে কর রেয়াত বা ট্যাক্স বেনিফিট পাওয়া যেতে পারে। তাই ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ একটি নিরাপদ ও লাভজনক বিকল্প হতে পারে। তবে বিনিয়োগের আগে সুদের হার, মেয়াদ এবং বাজারের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ট্রেজারি বন্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি সরকারের ঋণ সংগ্রহের একটি মাধ্যম এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ বিনিয়োগের সুযোগ।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
ট্রেজারি বন্ড কী
ট্রেজারি বন্ড হলো সরকারি ঋণপত্র, যা সরকার নির্দিষ্ট মেয়াদে নির্ধারিত সুদসহ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করার জন্য ইস্যু করে। এগুলো সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি ৫-২০ বছর বা তার বেশি মেয়াদের হয় থাকে। সুদের হার নির্দিষ্ট থাকে এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর সুদ পরিশোধ করা হয়, সাধারণত ছয় মাস অন্তর। এটি সরকার কর্তৃক গ্যারান্টিযুক্ত হওয়ায় নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়।
সুদের হার
সরকারের ঋণ গ্রহণের ছয় ধরনের বন্ড রয়েছে। এর মধ্যে দুই বছর মেয়াদি বন্ডের বর্তমান সুদের হার ১১ দশমিক ৭২ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার ১২ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ১৫ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর ২০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার ১২ দশমিক ৪৪ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
কিভাবে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা যায়
বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে এবং স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা যায়। অনেক তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ট্রেজারি বন্ড কেনাবেচার সুযোগ দেয়। আপনাকে সেই ব্যাংকে একটি বিনিয়োগ হিসাব খুলতে হতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত নিলামের (আধা-সরকারি নিলাম) মাধ্যমে এই বন্ড ইস্যু করে। আপনি চাইলে প্রাইমারি ডিলার (পিডি) ব্যাংকের মাধ্যমে এতে অংশ নিতে পারেন।
বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) কিছু ট্রেজারি বন্ড তালিকাভুক্ত আছে। আপনি চাইলে ব্রোকারেজ হাউসের মাধ্যমে বিও হিসাব খুলে ট্রেজারি বন্ড কিনতে পারেন।
বিজ্ঞাপন
কারা বিনিয়োগ করতে পারে
বাংলাদেশের যেকোনো সাধারণ নাগরিক ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। প্রবাসী বাংলাদেশি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা কোম্পানি, পেনশন ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ফান্ড, করপোরেট হাউস, বহুজাতিক কোম্পানি, এনজিও বা ট্রাস্ট সবার জন্য ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
বিনিয়োগের আগে সুদের হার ও মেয়াদ বিবেচনা করুন
ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার ও মেয়াদ বিভিন্ন হতে পারে। আপনার বিনিয়োগের লক্ষ্য ও সময়সীমা অনুযায়ী উপযুক্ত বন্ড নির্বাচন করুন। বাজারের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করুন, সুদের হারের পরিবর্তন ও বাজারের চাহিদা সম্পর্কে অবগত থাকুন, যা আপনার বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে সহায়তা করবে। প্রয়োজেন বিনিয়োগের আগে অর্থনৈতিক পরামর্শদাতার সঙ্গে পরামর্শ করুন, যেন আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
এমএএস/এমকেআর/এমএস
বিজ্ঞাপন