ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

ট্যানারি মালিকদের আপত্তি

৩৫ বছর পর কাঁচা-ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সুযোগ

নাজমুল হুসাইন | প্রকাশিত: ০৩:৩৩ পিএম, ২৬ মে ২০২৫

বিগত প্রায় এক দশকের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে এবার কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চায় সরকার। প্রায় ৩৫ বছর পর যে কারণে কাঁচা ও ওয়েট ব্লু চামড়া (পশম ছাড়িয়ে প্রক্রিয়াজাত করা) রপ্তানির শর্ত তিন মাসের জন্য শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, এ সিদ্ধান্তে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী-আড়তদাররা খুশি হলেও আপত্তি ট্যানারি মালিকদের।

সার্বিকভাবে সরকারের এ সিদ্ধান্তে আসন্ন কোরবানির ঈদের চামড়ার দাম কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, কাঁচা-ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানি করা গেলে দেশে চামড়ার চাহিদা বাড়বে, ভালো দাম পাবেন বিক্রেতারা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩৫ বছর পর কাঁচা-ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সুযোগ

৩৫ বছরের বন্ধ দুয়ার খুলবে

দেশ থেকে কাঁচা চামড়া ও ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানি বন্ধ বহু বছর ধরে। এর মধ্যে শেষ কবে কাঁচা চামড়া রপ্তানি হয়েছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি। তবে ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত ওয়েট ব্লু চামড়া বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হতো। এরপর শুধু ২০২১ সালে কেস টু কেস ভিত্তিতে (বিশেষ বিবেচনায় অল্প কয়েকজনকে সুযোগ) এক কোটি বর্গফুট ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেয় সরকার। অর্থাৎ, এবছর কাঁচা-ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানি সবার জন্য উন্মুক্ত হলে সেটা কমপক্ষে ৩৫ বছরের বন্ধ দুয়ার খুলবে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ওয়েট ব্লু করা চামড়া দেশে দুই-আড়াই বছর রাখা যায়, ফলে গত বছরের চামড়াও রপ্তানি করা যাবে। যে কেউ চাইলে এ সুযোগ নিতে পারবে। দেশে জমে থাকা চামড়া এ সময়ের মধ্যে রপ্তানি হবে।- বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনজুর হাসান

 

যে সব দেশে ওয়েট ব্লু চামড়ার চাহিদা

পশুর শরীর থেকে প্রথমে চামড়া ও পরে পশম ছাড়িয়ে প্রক্রিয়াজাত করার পর যে চামড়া পাওয়া যায় তাকেই ওয়েট ব্লু চামড়া বলা হয়। দেশ থেকে ‘ক্রাস্ট’ ও ‘ফিনিশড লেদার’ রপ্তানি হয়ে আসছে, অর্থাৎ সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াজাত চামড়া। সেখানেও অবশ্য বেশ কয়েক বছর ধরে ধস নেমেছে। বাংলাদেশ থেকে সব সময় চীন, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, জাপান ও স্পেনের মতো দেশে ফিনিশড চামড়া যায়। ব্যবসায়ীরা জানান, ওইসব দেশেই কাঁচা-ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

৩৫ বছর পর কাঁচা-ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সুযোগ

আরও পড়ুন

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনজুর হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে কাঁচা ও ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সুযোগ নিঃসন্দেহে সরকারের ভালো উদ্যোগ। এবার এ কারণে চাহিদা বাড়বে, দামও ভালো হবে।’

বিজ্ঞাপন

মনজুর হাসান বলেন, ‘ওয়েট ব্লু করা চামড়া দেশে দুই-আড়াই বছর রাখা যায়, ফলে গত বছরের চামড়াও রপ্তানি করা যাবে। যে কেউ চাইলে এ সুযোগ নিতে পারবে। দেশে জমে থাকা চামড়া এ সময়ের মধ্যে রপ্তানি হবে।’

৩৫ বছর পর কাঁচা-ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সুযোগ

এদিকে এ বিষয়ে ওই সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও মাহবুব অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আফতাব খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘রপ্তানির সুফল সবাই পাবে। অনেক সময় ট্যানারি চামড়া নিতো না, সে জিম্মিদশা কাটবে। তবে কিছুটা সমস্যাও রয়েছে। কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীরা কখনো চামড়া রপ্তানি করেনি। কোরবানির অল্প সময় বাকি, এর মধ্যে নতুন বাজার ধরা ও রপ্তানিকারক খুঁজে পাওয়া কঠিন।’

বিজ্ঞাপন

রপ্তানির সুফল সবাই পাবে। অনেক সময় ট্যানারি চামড়া নিতো না, সে জিম্মিদশা কাটবে। তবে কিছুটা সমস্যাও রয়েছে। কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীরা কখনো চামড়া রপ্তানি করেনি। কোরবানির অল্প সময় বাকি, এর মধ্যে নতুন বাজার ধরা ও রপ্তানিকারক খুঁজে পাওয়া কঠিন।- মাহবুব অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আফতাব খান

আরও কয়েকজন রপ্তানিকারক বলেন, দেশে প্রতি বছর কোরবানির সময় ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে কম দামে চামড়া কিনতো। যে কারণে বিগত কয়েক বছর ধরে চামড়ার চাহিদা ও রপ্তানিতে ধস নেমেছে। প্রতি বছর সরকার লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও সেটা কেউ মানেনি। রপ্তানি বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে পানির দামে কাঁচা চামড়া বিক্রি করেন আড়তদাররা। যে কারণে দাম পায়নি সাধারণ মানুষও। কিন্তু এবার রপ্তানির সুযোগ থাকলে ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে সরকারের কাছে রপ্তানির জন্য বাজার তৈরিতে সহায়তা চেয়েছেন তারা।

তবে কাঁচা-ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেওয়ায় আপত্তি জানিয়েছেন দেশের ট্যানারি মালিকরা। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সালমা ট্যানারির মালিক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক সেটা ভেবে দেখা দরকার। এদেশে আমরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কাঁচা চামড়া ক্রাস্ট ও ফিনিশড করছি। তাতে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখন সেই চামড়া রপ্তানি হলে এ শিল্প হুমকির মুখে পড়বে।’

৩৫ বছর পর কাঁচা-ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সুযোগ

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘ট্যানারি শিল্পের কথা বিষয় বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্তের আগে আরও বিচার-বিশ্লেষণ করা দরকার।’

ট্যানারি মালিকরাও ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানি করতে পারবেন। তাহলে এ সিদ্ধান্ত খুব বেশি নেতিবাচক কেন ভাবছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘ভ্যালু অ্যাডিশন ছাড়া ওয়েট ব্লু চামড়ার ভালো দাম পাবেন না ট্যানারি মালিকরা। সেটা করলে এত টাকা খরচ করে কেন ইন্ডাস্ট্রি করা হয়েছে। ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানি এ শিল্পের জন্য ধ্বংসাত্মক বলেই ১৯৯০ সাল থেকে নিষিদ্ধ করা আছে।’

ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সুযোগ দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক সেটা ভেবে দেখা দরকার। এদেশে আমরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কাঁচা চামড়া ক্রাস্ট ও ফিনিশড করছি। তাতে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখন সেই চামড়া রপ্তানি হলে এ শিল্প হুমকির মুখে পড়বে।- বিটিএর সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সালমা ট্যানারির মালিক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবছর মোট এক কোটি চার লাখ পশু কোরবানি হতে পারে। তথ্য বলছে, সবশেষ ২০১৩ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বেশি ছিল। সেবার গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ছিল ৮৫-৯০ টাকা। এরপর থেকে বিভিন্ন কারণে চামড়ার দাম ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। এবছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা।

বিজ্ঞাপন

তবে বিগত কয়েক বছর সরকার নির্ধারিত দামের অর্ধেকেও চামড়া বিক্রি হয়নি। রাজধানীসহ সারাদেশেই কাঁচা চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েন কোরবানিদাতারা। অনেক ক্ষেত্রে রাস্তায় ও মাটিতে চামড়া পুঁতে ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

এদিকে এবছর কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে ৩০ হাজার টন লবণ দিচ্ছে সরকার। রপ্তানি উন্মুক্তের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি এ সিদ্ধান্তেরও প্রশংসা করছেন ব্যবসায়ীরা।

এনএইচ/এএসএ/এমএস

বিজ্ঞাপন