ছুটছে ব্র্যাক ব্যাংক, শেয়ারের রেকর্ড দাম
দেশের শেয়ারবাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার দাম। দেড় মাসের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এর মধ্যে শেষ তিন কার্যদিবসেই দাম বেড়েছে ১১ শতাংশ। এতে ৫২ সপ্তাহের মধ্যে এখন কোম্পানিটির শেয়ার দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
সাধারণত তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার দাম বড় অঙ্কে বাড়লে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে দাম বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে চিঠি দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে কোম্পানির দেওয়া উত্তর ডিএসইর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। দেড় মাস ধরে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও ডিএসইতে থেকে এখনো এ ধরনের কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
তথ্য পর্যালোচনা দেখা গেছে, রোববার (২০ জুলাই) ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের লেনদেন শুরুর দাম ছিল ৬২ টাকা ৭০ পয়সা। সেখান থেকে বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে ৬৪ টাকা ৬০ পয়সায় উঠে। তবে দিনের লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দাম দাঁড়ায় ৬৩ টাকা ৮০ পয়সা।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়, ৫২ সপ্তাহের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার ৩৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬৪ টাকা ৬০ পয়সার মধ্যে লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ ৫২ সপ্তাহের মধ্যে আজ কোম্পানিটির শেয়ার সর্বোচ্চ দামে উঠে।
শুধু আজ রোববার নয়, ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার গত ২৮ মে’র পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২৮ মে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৪৫ টাকা ৯০ পয়সা। এ হিসাবে ২৮ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ১৭ টাকা ৮০ পয়সা বা ৩৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার সম্মিলিতভাবে বেড়েছে ৩ হাজার ৫৪৩ কোটি ৮৪ লাখ ৮৫ হাজার ৭৭২ টাকা।
শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ ও সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালে ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার, ২০২২ ও ২০২১ সালে সাড়ে ৭ শতাংশ নগদ ও সাড়ে ৭ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।
সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটি চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত) শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ২ টাকা ২৭ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৫৪ পয়সা। এ হিসাবে আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা বেড়েছে ৭৩ পয়সা।
২০০৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৯৯ কোটি ৯ লাখ ২৬ হাজার ১৬৭টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে আছে ৪৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে ৩৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ শেয়ার আছে।
এদিকে ধারাবাহিকভাবে শেয়ার দাম বাড়ার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত কোম্পানিটির শেয়ার বড় অঙ্কে লেনদেন হচ্ছে। রোববার ব্র্যাক ব্যাংকের ৩২ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৩টি শেয়ার হাত বদল হয়। যার বাজার মূল্য ২০ কোটি ৪৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
মূল বাজারের পাশাপাশি ব্লাক মার্কেটেও কোম্পানিটির শেয়ার বড় অঙ্কে লেনদেন হতে দেখা গেছে। রোববার ডিএসইর ব্লাক মার্কেটে এই ব্যাংকটির ৩ লাখ ২ হাজার শেয়ার ১ কোটি ৮৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকায় লেনদেন হয়েছে। ৬১ টাকা ৫০ পয়সা দরে একবারে এসব শেয়ার হত বদল হয়।
শেয়ারের এমন দাম বাড়ার মধ্যেই ব্যাংকটির ১৪ হাজার ২৯৯টি শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন ন্যাশনাল ক্রেডিট রেটিংস লিমিটেডের চেয়ারম্যান একে আব্দুল মুবিন। ৩০ দিনের মধ্যে বাজার দরে এসব শেয়ার তিনি বিক্রি করবেন। রোববার ডিএসই’র মাধ্যমে তিনি শেয়ার বিক্রির এই ঘোষণা দেন।
সাধারণত কোনো কোম্পানির শেয়ার দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকলে ডিএসই থেকে কারণ জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কর্তৃপক্ষ-কে চিঠি দেওয়া হয়। কীসের ভিত্তিতে এই দাম বাড়ার কারণ জানতে চাওয়া হয় এবং ব্র্যাক ব্যাংকের বিষয়ে এ ধরনের কোনো চিঠি দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আসাদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি আরএডি (রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন) দেখে। আরএডি নিজস্ব কিছু ক্রাইটেরিয়া (মাপকাঠি) আছে, তার ভিত্তিতে দাম বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে নোটিশ করা হয়।
ব্র্যাক ব্যাংকের ক্ষেত্রে কি দাম বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে নোটিশ করা হয়েছে? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি কালকে অফিসে গিয়ে দেখবো।
এমএএস/এমআইএইচএস/জিকেএস