ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

ইসলামী ব্যাংক

অবৈধ নিয়োগ বাতিল ও পাচার অর্থ না ফেরালে কঠোর হবে ব্যবসায়ী ফোরাম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০১:০৪ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিতে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ বাতিল এবং ব্যাংকটি থেকে শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের পাচার করা অর্থ ফেরত আনার দাবি জানিয়েছে সচেতন ব্যবসায়ী ফোরাম। এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ফোরামের নেতারা।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছে সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সচেতন ব্যবসায়ী ফোরামের সদস্যসচিব মুস্তাফিজুর রহমান। এতে উপস্থিত ছিলেন হকস বে-এর চেয়ারম্যান ও বারভিডা সভাপতি আব্দুল হক, বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম ও শিল্পোদ্যোক্তা আল মামুন প্রমুখ।

মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইসলামী ব্যাংক ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দক্ষ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়ে দেশের অন্যতম সেরা ব্যাংকে পরিণত হয়। গার্মেন্টস, বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পসহ প্রায় ছয় হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং ৮৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে এ ব্যাংকের ভূমিকা ছিল অনন্য।

‘কিন্তু ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রভাবে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও এমডিকে পদত্যাগে বাধ্য করে এবং বোর্ড দখল করে নেয়। পরবর্তীসময়ে তারা নিজেদের অনুগত ব্যক্তিদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকের প্রশাসনকে দুর্বল করে ফেলে। এস আলম গ্রুপ ব্যাংকের তহবিল থেকে নামে-বেনামে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এতে ব্যাংকটি মারাত্মক তারল্য সংকটে পড়ে এবং দেশের বড় শিল্পগ্রুপ ও ভালো গ্রাহকরা ব্যাংক ছাড়তে বাধ্য হন।’

তিনি আরও বলেন, এস আলম গ্রুপ ব্যাংকের মানবসম্পদ খাতেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। কোনো বিজ্ঞাপন বা পরীক্ষার মাধ্যমে নয়, বরং মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ৮ হাজার ৩৪০ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রার্থী চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকা থেকে এবং সবমিলিয়ে সাড়ে সাত হাজারের বেশি প্রার্থী চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে নিয়োগ পান। তাদের অনেককেই ভুয়া সনদপত্র ব্যবহার করে ব্যাংকে যোগ দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা জানান, অবৈধ নিয়োগের ফলে ব্যাংকটি প্রতিবছর প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়ছে, যা সাত বছরে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। অন্যদিকে, ব্যাংকের এক লাখ কোটি টাকারও বেশি লোপাট হয়েছে। এ দুই সংকট মিলে ইসলামী ব্যাংক এখন টিকে থাকার সংগ্রামে রয়েছে।

বারভিডা সভাপতি ব্যবসায়ী আব্দুল হক বলেন, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ওরফে এস আলম পালিয়ে যাওয়ার এক বছরেরও বেশি সময় পার হলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মানবিক কারণে এখনো অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের বরখাস্ত করেনি। সম্প্রতি দক্ষতা যাচাই পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে এসব কর্মকর্তা ব্যাংকের প্রতি অবাধ্যতা প্রকাশ করেছেন এবং অপপ্রচার চালাচ্ছেন—যা ব্যাংকের স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি।

বক্তারা দাবি করেন, ইসলামী ব্যাংকের ৮২ শতাংশ শেয়ার এখনো এস আলমের মালিকানায় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তা জব্দ করলেও এখনো লিকুইডেশন প্রক্রিয়া শুরু করেনি—যা রহস্যজনক।

সংবাদ সম্মেলনে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরা হয়। ব্যবসায়ী ফোরামের পক্ষ থেকে ইসলামী ব্যাংকের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার ও ব্যাংক খাতের সুশাসন ফেরাতে উত্থাপিত দাবিগুলো হলো—

১) অবিলম্বে ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলমের অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বহিষ্কার করতে হবে।

২) নতুন নিয়োগ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সারাদেশের মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে হবে।

৩) এস আলম গ্রুপের লুট ও পাচারকৃত অর্থ দ্রুত দেশে ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪) বাংলাদেশ ব্যাংকের জব্দকৃত এস আলমের শেয়ার লিকুইডেশন করে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করতে হবে।

৫) এস আলমের ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা সম্পদ দ্রুত বিক্রি করে ব্যাংকের ক্ষতিপূরণে পদক্ষেপ নিতে হবে।

ব্যবসায়ীরা সংবাদ সম্মেলন থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যদি আজকের মধ্যেই অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের বহিষ্কার না করে, তবে ব্যবসায়ী সমাজ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচি দেবে।

ইএআর/এমকেআর/এমএস