বিসিআই সভাপতি
এসএমই খাতে ফাইন্যান্সিং শুধু অর্থায়ন নয়, ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ
চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেছেন, এসএমই খাত দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চালিকাশক্তি। দেশের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮০ শতাংশ এসএমই থেকে আসে এবং জিডিপিতে এই খাতের অবদান ২৫ শতাংশের বেশি। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, আঞ্চলিক ভারসাম্যহীনতা দূর করা ও নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে এসএমই খাতের ভূমিকা অগ্রগণ্য। কিন্তু এখানেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ফাইন্যান্সিং। তবে এর মধ্যেও বিশাল সুযোগ রয়েছে।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বিসিআই-এর আয়োজনে বিসিআই বোর্ডরুমে ‘এসএমই ফাইন্যান্সিং: অপরচুনিটি অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এসব কথা বলেন আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)।
অনুষ্ঠানে আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী আরও বলেন, এসএমই খাতে ফাইন্যান্সিং শুধু অর্থায়ন নয়, এটি আমাদের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ। যদি আমরা এই খাতে সহজ অর্থায়ন নিশ্চিত করতে পারি তবে বাংলাদেশ আগামী দশকে আঞ্চলিকভাবে একটি শক্তিশালী উদ্যোক্তা নির্ভর অর্থনীতি হিসেবে দাঁড়াবে। এই কর্মশালার মাধ্যমে এসএমই ফাইন্যান্সিংয়ের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা উঠে আসবে এবং বিসিআই ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাবে যার মাধ্যমে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মুসফিকুর রহমান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী আজকের বিষয়ে বিসিআই’র এই উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানাই। এসএমই ফাউন্ডেশন এসএমই সেক্টর নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে। এসএমই ফাউন্ডেশন নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ট্রেনিং, কর্মশালা, অর্থায়নে জটিলতা নিরসন, এসএমই উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য দেশ ও বিদেশে বিভিন্ন মেলা আয়োজন করছে। এসএমই ফাইন্যান্সিংয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি আমাদের এ বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আগামী ৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএমই মেলায় সবাইকে আমন্ত্রণ জানান।
তিনি বিসিআই সভাপতিকে তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বিসিআই ও এসএমই ফাউন্ডেশন ভবিষ্যতে কমন ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আলোচক ছিলেন শাহানাজ পারভীন, যুগ্ম পরিচালক (এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট), বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সঞ্জয় পাল, সিনিয়র ম্যানেজার, এসএমই ব্যাংকিং অ্যান্ড হেড অব ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি উইং, সীমান্ত ব্যাংক পিএলসি।
কর্মশালায় বিসিআই’র সদস্য, ব্যাংক, উইমেন চেম্বার, বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন, প্রতিষ্ঠানের মালিক ও বিটাকের প্রশিক্ষণার্থীসহ মোট ৩০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।
বিসিআইয়ের সেক্রেটারি জেনারেল মো. হেলাল উদ্দিনের পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, বিসিআই নিয়মিতভাবে দেশের শিল্পায়ন এবং অন্যান্য শিল্প ও ব্যবসা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন/প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করে আসছে আর তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এই কর্মশালা।
কর্মশালার দ্বিতীয় ভাগে শাহানাজ পারভীন ‘এসএমই ফাইন্যান্সিং: অপরচুনিটি অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ এর ওপর আলোচনা করেন। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গত ১৭ মার্চে জারি করা সিএমএসএমই মাস্টার সার্কুলারে সিএমএসএমই ফাইন্যান্সিংয়ের উল্লেখযোগ্য সুযোগ সমূহ যেমন- নতুন উদ্যোক্তা, স্টার্ট-আপ, নারী উদ্যোক্তা, পুণঃঅর্থায়ন স্কিম ইত্যাদি বিশদভাবে তুলে ধরেন এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সিএমএসএমই ঋণ সুবিধা সমূহ পাওয়ার উপায় সমূহ তুলে ধরেন এবং অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সুন্দরভাবে বিষয় সমূহ বুঝিয়ে দেন।
দ্বিতীয় অধিবেশনে সঞ্জয় পাল ‘এক্সেস টু এমএসএমই ফাইন্যান্স অ্যান্ড প্রোগ্রেস অব ডিজিটাল এমএসএমই ফাইন্যান্স ইন বাংলাদেশর ওপর আলোচনা করেন। তিনি এমএসএমই ফাইন্যান্সিংয়ের সুযোগ সমূহ এবং কীভাবে ব্যাংক থেকে সুযোগ সমূহ নেওয়া যায় এ বিষয়ের ওপর এবং ডিজিটাল এমএসএমই ফাইন্যান্সের অগ্রগতি এবং ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি নিয়ে আলোকপাত করেন।
তিনি এমএসএমই ঋণ বিতরণে তার অভিজ্ঞতার আলোকে অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
কর্মশালা শেষ অংশে অংশগ্রহণকারীদের মতামত নেওয়া হয় এবং বিসিআই’র পরিচালক দেলোয়ার হোসেন রাজা এবং বিসিআই এর সিএমএসই ডেভেলপমেন্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ইসমাত জেরিন খান সবার কাছে সার্টিফিকেট বিতরণ করেন। বিসিআই সেক্রেটারি জেনারেল আলোচক ও সব অংশগ্রহণকারীকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানান এবং পরবর্তীতে সবাইকে বিসিআই’র বিভিন্ন কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত থাকার অনুরোধ জানান।
এমআইএইচএস/জেআইএম