এসএমই পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে নতুন বাজার খুঁজতে হবে: শিল্প উপদেষ্টা
এসএমই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান/ছবি: জাগো নিউজ
এসএমই পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে নতুন বাজার অনুসন্ধানের আহ্বান জানিয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব একটি শক্তিশালী বাজার যেমন তৈরি হবে, তেমনি নতুন নতুন বাজারও খুঁজে বের করতে হবে। কোন দেশে কোন ধরনের পণ্যের বেশি চাহিদা আছে, কোথায় আমাদের পণ্য দিয়ে নতুন সুযোগ তৈরি করা সম্ভব-এসব বিষয়ে নিয়মিত অনুসন্ধান করা জরুরি।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ৮ দিনব্যাপী এসএমই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘এসএমই শক্তি, দেশের অগ্রগতি’ স্লোগানে শুরু হওয়া শতভাগ দেশীয় পণ্যের এই মেলা চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এসএমই ফাউন্ডেশন এই মেলার আয়োজন করেছে।
শিল্প উপদেষ্টা বলেন, নতুন বাজার খুঁজে সেই তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজন অনুযায়ী উপযোগী পণ্য উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে পণ্যে বৈচিত্র আনা প্রয়োজন, যেন ভিন্ন ভিন্ন বাজারে প্রতিযোগিতা করে আমরা আরও শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারি।’
আদিলুর রহমান বলেন, অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প তথা এসএমই’র গুরুত্ব অপরিসীম। এসএমই খাতের বিকাশের মাধ্যমে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য বিমোচন ও সুষম উন্নয়ন সম্ভব। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদে শহরের সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দিতে জাতীয় এবং স্থানীয়ভাবে টেকসই শিল্পখাতের বিকাশ জরুরি। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় ৯৯ শতাংশ শিল্পই কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারিখাতের অন্তর্ভুক্ত। একই সঙ্গে বৃহৎ ও ভারী শিল্পের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। এসএমই হলো সবচেয়ে শ্রমঘন ও স্বল্পপুঁজি নির্ভর খাত। এই খাতের মাধ্যমে স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব।
আরও পড়ুন
তরুণরা এখন চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে চায়: শিল্প উপদেষ্টা
তিনি বলেন, যত্রতত্র শিল্প-কারখানা স্থাপন না করে নির্ধারিত জায়গায় শিল্প স্থাপন করতে হবে। এতে উদ্যোক্তারা আরও বেশি সুবিধা পাবেন ও ব্যবসা পরিচালনাও শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় আমাদের সবার সচেতন থাকতে হবে। শিল্পনগরীগুলোতে থাকা জলাধারগুলোকে দৃষ্টিনন্দনভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করতে হবে। শিল্পবর্জ্য যেন জলাধারে প্রবেশ না করে, সে বিষয়ে শিল্প মালিকদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
শিল্প উপদেষ্টা আরও বলেন, এসএমই উদ্যোক্তা গ্রুপ, ক্লাস্টার ও বিভিন্ন সাব-সেক্টরের উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে স্বল্প সুদে জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এর ফলে উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতা করতে পারছে ও নতুন বাজার সৃষ্টি করতে সমর্থ হচ্ছে। ফাউন্ডেশনের এ কার্যক্রম আরও জোরদার করে অধিক সংখ্যক উদ্যোক্তাকে এ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের এসএমই খাতকে আরও গতিশীল ও এর উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে এসএমই ফাউন্ডেশনকে কাঠামোগতভাবে সুদৃঢ় ও আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা সময়ের দাবি। এ লক্ষ্যে বাজেট, মানবসম্পদ, গবেষণা সক্ষমতা এবং প্রযুক্তিগত অবকাঠামো বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অপরিসীম। আমরা তরুণ একটি দেশ। ২০৩০ সালে বাংলাদেশ পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে। সেই সময়ে বাংলাদেশের লোকাল মার্কেট যুক্তরাজ্যের বাজারকেও ছাড়িয়ে যাবে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, আমরা ডিজিটালি সেবা দিতে মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চাই। এসএমইদের নিয়ে নির্দিষ্ট ডাটাবেজ নেই। খাতওয়ারী সবাইকে সঠিক সেবা দিতে ডাটাবেইজ করতে সরকারের সহায়তা দরকার। এসএমই পণ্যের জন্য নির্দিষ্ট সেলস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউট সেন্টার নেই। যদি ভালো একটা জায়গা দেওয়া যায় সব এসএমই উপকৃত হবে।
মেলার উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। মো. মুসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নুরুজ্জামান ও এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালক পর্ষদ সদস্য ও উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি নাসরীন ফাতেমা আউয়াল। সম্মানিত অতিথি ছিলেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর আরেফিন। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পরিচালক পর্ষদ সদস্য ও ১২তম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক সামিম আহমেদ।
এসময় জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার ২০২৫ বিজয়ী ৬ জন মাইক্রো, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তার হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন অতিথিরা।
এবারের মেলায় প্রায় সাড়ে ৩০০ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তা। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বেশি ৭৪টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া হস্ত ও কারু শিল্পের ৫৪টি, পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য খাতের ৪০টি, পাটজাত পণ্যের ৩৫টি, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের ২৮টি, শতরঞ্জি, বাঁশ, বেত, হোগলা, সুপারিখোল, কাঠের ১৫টি, খাদপণ্যের ১৪টি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের ১৩টি, জুয়েলারি শিল্পের ৯টি, প্রসাধন খাতের ৭টি, তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা খাতের ৫টি, হারবাল বা ভেষজ শিল্পের ৫টি, প্লাস্টিক পণ্যের ৫টি, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স খাতের ৩টি, ফার্নিচার খাতের ৩টি এবং অন্যান্য খাতের ১১টি স্টল রয়েছে।
মেলায় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের সেবা প্রদানকারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৮টি দপ্তর সংস্থাসহ সরকারের প্রায় ১৫টি সংস্থা, প্রায় ৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
ইএইচটি/ইএ/এমএস