ব্যাংক ঋণ পেতে নারী উদ্যোক্তারা এখনো অবহেলিত
সেমিনারে বক্তারা নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ সহজীকরণ নিয়ে কথা বলেন/ছবি: জাগো নিউজ
দেশের এসএসমই খাতে পুরোনো সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। নারী উদ্যোক্তারা এখনো ঋণ পাচ্ছেন না। বড় প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হলেও নারী উদ্যোক্তারা অবহেলিত। এসএমই খাত নিয়ে বিভিন্ন নীতিমালা হলেও তার বাস্তবায়ন নেই।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া ৮ দিনের এসএমই মেলার দ্বিতীয় দিনে ‘রপ্তানি বহুমুখীকরণ: নারী উদ্যোক্তাদের ভূমিকা ও প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
‘এসএমই শক্তি, দেশের অগ্রগতি’ স্লোগানে শুরু হওয়া শতভাগ দেশীয় পণ্যের এ মেলা চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এসএমই ফাউন্ডেশন এ মেলার আয়োজন করেছে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মুসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অধ্যাপক ড. মেলিতা মেহজাবীন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আইয়ূব মিয়া। আরও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজর সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) ও ব্যাংক এশিয়া পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হোসেন প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে ২.৮ মিলিয়ন এসএমই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা নারী, যা এসএমই খাতের ২৪.৬ শতাংশ। ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এ খাতে পিছিয়ে রয়েছে দেশ। মাত্র ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা রপ্তানিমুখী খাতে যুক্ত। নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে নীতি ও প্রণোদনা ব্যবস্থায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, নারী উদ্যোক্তাদের রপ্তানি সক্ষমতা বাড়াতে অর্থায়ন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কঠোর তদারকি ও নতুন সুবিধা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত এসএমই খাতে ১৫ শতাংশ ঋণ ও রিফাইন্যান্স স্কিমের ১০ শতাংশ কোটা বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাংকের নিয়মিতভাবে প্রতিবেদনে প্রকাশের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আইয়ূব মিয়া বলেন, ১৭ বছর পরেও এসএমই খাত নিয়ে একই সমস্যা রয়ে গেছে। নীতি আছে, বাস্তবায়ন নেই। দেশের অর্থনীতিকে এসএমই-বান্ধব করতে আপনাদের (নারী উদ্যোক্তা) আওয়াজ তুলতে হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের ঋণ প্রদানের নীতি সহজ করা হবে।
তিনি বলেন, ১৭ বছর পরও নারী উদ্যোক্তাদের একই ধরনের সংকট শুনে অবাক লাগে। তবে স্বীকৃতি বেড়েছে। সরকার, সমাজ ও ব্যাংকগুলো এখন নারী উদ্যোক্তাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আগে নীতি ছিল না; এখন নীতি আছে। কিন্তু সেই নীতি বাস্তবায়নে সমস্যা রয়ে গেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজর সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, এখনো ব্যাংকে গেলে নারী উদ্যোক্তাদের অন্য চোখে দেখা হয়। লাইসেন্স বা টিন নিতে গেলেও হেলাফেলা করা হয়। এ ধরনের আচরণ বদলাতে হবে। জাতীয় পর্যায় থেকে জেলা পর্যায়ে সব জায়গায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য হেল্পডেস্ক থাকা উচিত।
তিনি বলেন, অনেক নারী এখনো প্রকাশ্যে কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন। পরিবার ও সমাজের মানসিকতা পরিবর্তনও জরুরি।
তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের (মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প) শুল্কের প্রভাবে পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে গেছে। গার্মেন্টস ইন্ড্রাস্ট্রিতে নতুন করে খুব বেশি কর্মসংস্থান হবে না। এসএমইএ এবং কৃষি খাতে কর্মসংস্থান হবে। এ খাতগুলোকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।
আনোয়ার-উল আলম বলেন, দিন দিন বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমছে। বেকারত্ব বাড়ছে। চাকরি নেই। যাদের সক্ষমতা আছে (এসএমই) তাদের যদি সুযোগ না দিলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে না।
সভাপতির বক্তব্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ালে শুধু ব্যবসাই বড় হবে না, সামগ্রিক অর্থনীতিও দ্বিগুণ গতিতে এগিয়ে যাবে। নারী উদ্যোক্তারা শক্তিশালী হলে দেশের জন্যও লাভ হবে। এসএমই ফাউন্ডেশন সবসময় নারী উদ্যোক্তাদের পাশে ছিল ও থাকবে। প্রয়োজন হলে যেকোনো সহায়তায় আমরা এগিয়ে আসবো।
উন্মুক্ত আলোচনায় একজন নারী উদ্যোক্তা বলেন, ব্যাংক ঋণ আমার অধিকার। সুদের হার অন্যদের ক্ষেত্রে যা আমাদের ক্ষেত্রে তা-ই হতে পারে। পেপার সহজীকরণ করতে হবে।
অন্য একজন নারী উদ্যোক্তা বলেন, যারা কোটিপতি তারাই ব্যাংক ঋণ পান। যারা ছোট তারা ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ঋণ পান না। ৫ লাখ টাকায় যারা ব্যবসা করছেন মেলায় স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রে তাদের ভাড়া আর ১৫ কোটি টাকার উদ্যোক্তার ক্ষেত্রেও ভাড়া একই। এ বৈষম্য নিরসন জরুরি।
ইএইচটি/এমকেআর/এমএস